সিসিটিভি-তে ওঠা মারের সেই দৃশ্য।
প্ল্যাটফর্মে পড়ে থাকা এক ব্যক্তিকে চুলের মুঠি ধরে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসছেন রেলরক্ষী বাহিনীর এক জওয়ান। চেষ্টা করেও কোনও মতে উঠতে পারছেন না ওই ব্যক্তি। ডান পা না থাকায় ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ানোও সম্ভব নয় তাঁর পক্ষে। দূরে পড়ে তাঁর দু’টি ক্রাচ! সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পাওয়া হাওড়া স্টেশনের এক নম্বর প্লাটফর্মের এই ছবি দেখে ফের প্রশ্ন উঠেছে রেলরক্ষীদের ভূমিকা নিয়ে।
ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার রাত ১১টা নাগাদ। ওই ঘটনার পরে মহম্মদ আসলাম নামে প্রতিবন্ধী সেই ব্যক্তিকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে সেখান থেকে ছেড়ে দেওয়ার পরে তাঁর আর খোঁজ মিলছে না। এই ঘটনার জেরে আরপিএফের ওই জওয়ান, অভিযুক্ত প্রেমানন্দকুমার সিংহকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে।
রেল পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার রাতে হাওড়ার এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে মত্ত অবস্থায় বছর ছত্রিশের আসলাম কয়েক জন যাত্রীকে বিরক্ত করছিলেন। যাত্রীরা এ নিয়ে রেলরক্ষী বাহিনীর জওয়ানদের কাছে অভিযোগ করলে প্রেমানন্দ আসলামকে স্টেশনের বাইরে যেতে বলেন। আসলাম না যেতে চাওয়ায় প্রথমে বচসা এবং তার পরে মারধর শুরু হয় বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, এর পরেই আসলামের চুলের মুঠি ধরে ওই জওয়ান তাঁকে কিল, চড়, ঘুষি মারতে শুরু করেন। ডান পা না থাকায় দু’দিকেই ক্রাচ থাকত আসলামের। মারের চোটে তা-ও পড়ে যায় মাটিতে। তাঁকে টেনে নিয়ে স্টেশন থেকে বার করে দেওয়ার চেষ্টা করেন প্রেমানন্দ। এর পরে ঘটনাস্থলে চলে আসেন রেলের কয়েক জন কর্মী। ডেপুটি স্টেশন সুপারের নির্দেশে আহত আসলামকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে রাতেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে খবর। ফের তাঁকে স্টেশনে নিয়ে আসেন রেলের কর্মীরাই। কিন্তু এর পর থেকেই বেপাত্তা আসলাম। যা নিয়েই সন্দেহ দানা বেঁধেছে।
রেল পুলিশ জানিয়েছে, আসলাম আদতে দিল্লির বাসিন্দা। একটি দলের সঙ্গে গঙ্গাসাগরে আসেন তিনি। কিন্তু দলছুট হয়ে যাওয়ায় ফিরতে পারেননি। তার পর থেকেই তিনি হাওড়া স্টেশনে থাকতেন। কিন্তু ঘটনার পরে তিনি গেলেন কোথায়, তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি আরপিএফের সিনিয়র কমান্ড্যান্ট অজয় সাদানে।
তবে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রায় ২০ জন প্রতিবন্ধীকে সঙ্গে নিয়ে অজয়বাবুর সঙ্গে দেখা করেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর সম্পাদক কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি জানান, এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে চিঠি লিখে জানানো হবে। হাইকোর্টেও যাওয়া হবে। এ দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, “কেন ওই ব্যক্তির ঠিকানা জেনে রাখল না পুলিশ? কেন নিজে থেকেই তারা মামলা দায়ের করল না?” তাঁর দাবি, এই ঘটনার কথা অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছে আরপিএফ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy