Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কে সিকন্দর, চিনতেই চাইছে না বিক্ষুব্ধ পাড়া

গলিতে ঢুকতেই নজরে এল দেওয়ালটা। কাঁচা হাতে লেখা ক্যাপ্টেনদের তালিকায় প্রথম নামটাই, সিকন্দর! সেই মহম্মদ সিকন্দর, যাকে রবিবার সকাল পর্যন্তও শান্ত, খেলাধুলো নিয়ে মেতে থাকা এক যুবক হিসেবেই চিনত একবালপুরের সুধীর বসু রোড। মা ও দুই মেয়েকে খুন এবং তার পরে লাশ পুঁতে দেওয়ার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সেই ছেলেকে গ্রেফতার করার পরেই গোটা এলাকা সিকন্দর-বিরোধী হয়ে উঠেছে।

একবালপুর থানার সামনে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।

একবালপুর থানার সামনে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৩৭
Share: Save:

গলিতে ঢুকতেই নজরে এল দেওয়ালটা। কাঁচা হাতে লেখা ক্যাপ্টেনদের তালিকায় প্রথম নামটাই, সিকন্দর!

সেই মহম্মদ সিকন্দর, যাকে রবিবার সকাল পর্যন্তও শান্ত, খেলাধুলো নিয়ে মেতে থাকা এক যুবক হিসেবেই চিনত একবালপুরের সুধীর বসু রোড। মা ও দুই মেয়েকে খুন এবং তার পরে লাশ পুঁতে দেওয়ার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সেই ছেলেকে গ্রেফতার করার পরেই গোটা এলাকা সিকন্দর-বিরোধী হয়ে উঠেছে। তাকে চিনতে চান না সিকন্দরের বহুতলের (ইয়াসিন মঞ্জিল) বাসিন্দারাও।

সোমবার বেলা সওয়া বারোটা। একবালপুর থানার সামনে কয়েকশো লোকের ভিড়। বেগতিক দেখে প্রিজন ভ্যানটাকে থানার ভিতরে নিয়ে গেল পুলিশ। মুখ ঢেকে সিকন্দর ও তার এক সঙ্গী মহম্মদ আমিন গাড়িতে উঠতেই জনতার চিৎকার, ‘ইসি ওয়ক্ত ফাঁসি মে চড়া দো উন লোগোকো! মহল্লা কো বদনামি হুই ইয়ে দোনো কে লিয়ে।’ পলকে শুরু হল গাড়ির সামনে বিক্ষোভ। কেউ কেউ গাড়িতে চড়চাপড়ও দিলেন।

এমন বিক্ষোভ যে হতে পারে, তা ভাবতে পারেনি একবালপুর থানার পুলিশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে তাই বারবার মেজাজ হারান ওসি সিদ্ধার্থ দত্ত। কখনও নিজের বাহিনীর উপরে চিৎকার করেছেন, কখনও গজরাতে গজরাতে বলেছেন, “টিভি চ্যানেলে মুখ দেখানোর জন্য লোকে ভিড় করছে।” তা শুনে বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়। উড়ে আসে পুলিশ সম্পর্কে নানা মন্তব্যও।

বস্তুত, বিক্ষোভ শুরু হয় রবিবার রাতেই। সিকন্দরকে গ্রেফতার করার পরে যাতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা না হয়, তার জন্য মিছিল ও থানা ঘেরাও হয়েছিল। এ দিন দুপুরে থানার সামনে বিক্ষোভের পরে সিকন্দরের বাড়ি ও দোকানের সামনেও ভিড় জমে। দুপুরে সিকন্দরের ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা গেল, ঘর তালাবন্ধ। আশপাশের বাসিন্দাদের সিকন্দর বা তার পরিবারের কথা জিজ্ঞাসা করতে কেউ বললেন, “আমি নতুন এসেছি। ওকে চিনতাম না।” কারও আবার দাবি, “আমি গত তিন দিন বাড়িই ছিলাম না।”

তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও ওই ফ্ল্যাটের একাংশ জানিয়েছেন, সিকন্দরের পরিবারে তার স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়ে রয়েছে। রবিবার রাত থেকেই স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ তাঁদের হুমকি দিচ্ছিলেন। এ দিন সকালে সন্তানদের নিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন সিকন্দরের স্ত্রী।

এ দিন বিকেলে ঘটনাস্থলে যায় কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ, গোয়েন্দা বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার বৈদ্যনাথ সাহা-সহ গোয়েন্দাদের একটি দল। তাঁরা পুষ্পাদেবীর ফ্ল্যাট এবং সিকন্দরের দোকান ঘুরে দেখেন। সে সময়েও এলাকাকাবাসীরা ভিড় জমিয়ে ছিলেন। এ দিন এসএসকেএম হাসপাতালের মর্গে পুষ্পাদেবী ও তাঁর দুই মেয়ের ময়না-তদন্ত হয়। পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ হাসপাতালে গিয়ে নিহতদের পরিজনদের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত নিয়ে আশ্বাস দেন।

বিক্ষোভ ছড়িয়েছে হাওড়ার সালকিয়ায় পুষ্পাদেবীর শ্বশুরবাড়ির পাড়াতেও। উঠেছে দেহ দখলের অভিযোগও। এ দিন এসএসকেএম হাসপাতালের মর্গে ময়না-তদন্তের পরে তিনটি দেহ প্রথমে একবালপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মোমবাতি মিছিল করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অবরোধ করা হয় ডায়মন্ড হারবার রোড। পরে দেহ নিয়ে সালকিয়া রওনা হন পরিজনেরা। গোলাবাড়ি থানার ডবসন লেনে আগে থেকেই স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জড়ো হয়েছিলেন। ছিল র্যাফ, পুলিশ। দেহ ডবসন লেনে পৌঁছতেই বিক্ষোভ শুরু হয়। পুলিশ জনতার দিকে লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যায়। সেই সুযোগে এক দল লোক পুষ্পাদেবীর ভাসুর ও পরিজনদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেহের দখল নেয়। তার পর মিছিল করে রওনা দেয় সালকিয়ার ক্ষেত্র মিত্র লেনে পুষ্পাদেবীর শ্বশুরবাড়ির দিকে। পরে পুষ্পাদেবীর ভাসুর প্রবীণ সিংহ বলেন, “আমাদের পরিবারের বৌ-মেয়ের দেহ সৎকার নিয়ে নোংরামো হল।”

সিকন্দরদের ঘিরে বিক্ষোভ ছড়ায় আদালতেও। এ দিন আলিপুর পুলিশ আদালতের কোনও আইনজীবী অভিযুক্তদের পক্ষে দাঁড়াতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ekbalpur murder sikander
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE