তাঁর সমকালীন কবিদের মতো তিনি হাজারখানেক গান লেখেননি। অথচ কথা ও সুরের সারল্যের জন্য তাঁর সঙ্গীত রসিক শ্রোতার মন ছুঁয়ে যায়। তাঁর সমকালীন কবিদের জন্মের সার্ধশতবর্ষ যখন সাড়ম্বরে পালিত হয়েছে তখনই কান্তকবির জন্মের সার্ধশতবর্ষটা যেন নীরবেই কাটাচ্ছে সংস্কৃতিবান, রুচিশীল বাঙালি।
মাত্র ৪৫ বছরের জীবনে রজনীকান্ত দেখেছিলেন মৃত্যুর মিছিল। সেই শোক আর স্বজন বিয়োগের যন্ত্রণাকে সঙ্গী করেই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সঙ্গীত সৃষ্টিতে মগ্ন ছিলেন তিনি।
১৮৬৫-এর ২৬ জুলাই রজনীকান্তের জন্ম পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহকুমার ভাঙাবাড়ি গ্রামে। বাবা গুরুপ্রসাদ সেন মা মনমোহিনী দেবী। রজনীকান্তের বাবা গুরুপ্রসাদ সেন পেশায় ছিলেন ঢাকার মুন্সেফ পরে বরিশালের সাব-জজ হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর অন্য পরিচয় হল তিনিও কবি ছিলেন। ব্রজবুলি ভাষায় বৈষ্ণব পদাবলী ও শিবদুর্গার পদাবলী রচনা করেছিলেন।
ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি রজনীকান্তের বিশেষ আকর্ষণ ছিল। ছোটবেলায় একটি বাঁশিতেই চলত তাঁর সঙ্গীতের অনুশীলন।
এফএ পাশ করে তিনি কলকাতায় সিটি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। ১৮৯১তে বিএ পাশ করেছিলেন। এর পরে বিএল পাশ করে রাজশাহিতে ওকালতি শুরু করেছিলেন। এক সময় প্রাচুর্যের মধ্যে থাকলেও হঠাৎ নিঃস্ব হয়ে যাওয়ায় জীবনটা ছিল তাঁর কাছে একটা বড় পরীক্ষা। আর সব বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে তিনি এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।
চোদ্দ বছর বয়সে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল তাঁর বন্ধু তারকেশ্বর চক্রবর্তীর। তারকেশ্বর ভাল গান গাইতে পারতেন আর সেই কারণেই যেন গানের প্রতি রজনীকান্তের অনুরাগ বেড়ে গিয়েছিল। রজনীকান্তের কন্যা শান্তিলতা দেবীর একটি লেখা থেকে জানা যায়, ‘এক অর্থে এই তারকেশ্বর চক্রবর্তীই হলেন রজনীকান্তের সঙ্গীতগুরু— যদিও ঠিক নিয়ম মেনে প্রথাগত সঙ্গীতাভ্যাস রজনীকান্ত করেননি।’ তবু জানা যায় তিনি নিজেও সুগায়ক ছিলেন। রাজশাহিতে তিনি বিভিন্ন সাহিত্যসভা, মজলিশ এবং অনুষ্ঠানে তিনি স্বরচিত গান গেয়ে আসর মাত করে দিতেন।
হিন্দু হস্টেল থেকে পড়াশুনা করার সময় তিনি স্বরচিত গান খঞ্জনী বাজিয়ে গেয়ে পথ পরিক্রমা করতেন। পড়াশুনার শেষে রজনীকান্ত রাজশাহি শহরে ওকালতি ব্যবসা শুরু করেছিলেন। তবে তাতে তিনি মনোনিবেশ করতে পারেননি। এক দিকে চলতে থাকে ওকালতি অন্য দিকে গান ও কবিতা রচনা। তাঁর নিজের লেখাতেই পাওয়া যায়, ‘আমি আইন ব্যবসায়ী কিন্তু ব্যবসা করিতে পারি নাই।’