ফাটল কত গভীর? শ্যামবাজার মোড়ে রাস্তার ধস দেখতে সাবধানী উঁকি মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।
ঢাকুরিয়ার পরে শ্যামবাজার। ফের রাস্তায় ধস।
শুক্রবার সকালে সাড়ে ছ’টা নাগাদ শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে নেতাজি মূর্তির পিছনে রাস্তার উপরে একটা গর্ত নজরে পড়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের। ক্রমশ সেটিই ধসের আকার নেয় বলে স্থানীয় সূত্রের খবর।
কী ভাবে নামল ধস?
কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালার পাশে থাকা ইটের কাঠামো ভেঙে ওই ঘটনা ঘটে। নিকাশি দফতরের স্পেশাল অফিসার অমিত রায় জানান, বাগবাজার বাটার মোড় থেকে মাটির তলা দিয়ে ৪ ফুট বাই ২.৮ ফুটের ওই ইটের কাঠামো চলে গিয়েছে পামারবাজার পর্যন্ত। শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ের কাছে একটি ম্যানহোল রয়েছে। তার ঠিক ১০ ফুটের মধ্যে ওই পাঁচিলের কিছুটা অংশ ভেঙে গিয়েছে।
ভূগর্ভস্থ ওই পাঁচিলের কাঠামো ভেঙে যাওয়াই ধসের কারণ। অমিতবাবু বলেন, “কাঠামো পুরনো হয়ে যাওয়াতেই এই বিপত্তি।”
মেয়র পারিষদ (নিকাশি) দেবাশিস কুমার জানান, পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারেরা ঘটনাস্থলে সব কিছু দেখেছেন। রাত থেকেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।
পুলিশ জানায়, প্রথমে গর্তটি চওড়ায় বেশি ছিল না। তাই ধসের আকার বুঝতে সমস্যায় পড়েন পুলিশকর্মীরা। পরে একটি সরু লাঠি গর্তের ভিতর ঢোকাতেই হকচকিয়ে যান তাঁরা। লাঠির প্রায় পুরোটাই ঢুকে যায় গর্তের ভিতর। রাস্তার উপরিতল থেকে ১৫ ফুট নীচে তলিয়ে যায় পিচ, পাথর, বালি-সহ মাটি। এর জেরে কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় যান চলাচল। এমনিতেই শ্যামবাজার জনবহুল এলাকা। তার উপরে অফিসের ব্যস্ত সময়ে এই ঘটনায় আটকে পড়ে বাস, ট্যাক্সি,
অটো-সহ সমস্ত যানবাহন। যানজট নিয়ন্ত্রণে আনতে ভূপেন বসু অ্যাভিনিউ দিয়ে পূর্বমুখী গাড়িগুলোকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ১৫ ফুট গভীর ওই ধসের নীচে জলের স্রোতও রয়েছে। তাই মেরামতির কাজ শুরু না হওয়া পর্যন্ত বোঝা সম্ভব নয় যে রাস্তার নীচে কতখানি এলাকা জুড়ে মাটি বসে গিয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে এ দিন ধসের আশপাশের অনেকখানি এলাকা জুড়ে রাস্তা ঘিরে দেওয়া হয়।
এ দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং পুর-স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ। অতীনবাবু বলেন, “এমনিতেই শ্যামবাজার মোড় সব সময়ে ব্যস্ত থাকে। তার উপরে এখন পুজোর মরসুম। তাই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, মাটির নীচে অন্য কোথাও পাঁচিল ভেঙে পড়তে পারে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তেমন হলে সেই অংশও ভেঙে ফেলা হবে। তার পরে পুরো কাজ করা হবে। এর জন্য দিন তিনেক সময় লাগতে পারে বলে জানান তিনি।
কিছু দিন আগে আচমকা ঢাকুরিয়া ব্রিজের কাছেও ধস নেমে তিন ফুট গভীর হয়ে রাস্তা বসে গিয়েছিল। খোঁড়াখুড়ি শুরু হলে দেখা যায়, পাঁচ ফুট লম্বা এবং চার ফুট চওড়া অংশ জুড়ে রাস্তার নীচে কোনও মাটি নেই। আশপাশের গর্ত থেকে ইঁদুর ঢুকে রাস্তার নীচের মাটি কেটে ফেলেছে বলে অনেকে মনে করলেও পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ জানিয়েছিলেন, ওই এলাকায় বালিমাটির পরিমাণ বেশি। পাশেই পাম্পিং স্টেশন রয়েছে। তাই কম্পনের ফলেও ধস নামতে পারে। গত মাসে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসে রুবি মোড়ের কাছেও রাস্তায় ধস নেমেছিল। সে সময়ে রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছিলেন, মেট্রো রেলের কাজের জন্য বেশ কিছু জায়গায় অস্থায়ী বেড়া দেওয়া হয়েছে। ভারী বৃষ্টি হলে ওই এলাকায় জল জমে যায়। মন্ত্রীর অভিযোগ, মেট্রো প্রকল্পের ওই বেড়ার মধ্যে জমে থাকা জল রাস্তার নীচে চলে যাচ্ছে। আর তার জেরেই ফাটল ধরছে রাস্তায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy