Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

তার ছুঁতেই ছিটকে পড়ে মৃত ৩ যুবক

রবিবার রাতে সেখানে যথেষ্ট পুলিশ ছিল। আচমকাই ঘটনাটি ঘটে। আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক জনের আঘাত কম থাকায় তাঁদের ছেড়েও দেওয়া হয়।

বিমল সাহনির স্ত্রী রেখা ও মেয়ে। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ

বিমল সাহনির স্ত্রী রেখা ও মেয়ে। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৭ ০১:৫৯
Share: Save:

গণেশ পুজোর শেষে বিসর্জনের জন্য জানবাজার থেকে সকলে বেরিয়েছিলেন বাজে কদমতলা ঘাটের উদ্দেশে। তিন ফুট ট্রলি ও বাইশ ফুট উচ্চতার গণেশের মূর্তি নিয়ে সবে মাত্র গঙ্গার ঘাটের দিকে এগিয়েছিলেন কয়েক জন যুবক। কিন্তু রেললাইন পেরোনোর সময়ে মূর্তির পিছনে থাকা চালা আটকে যায় ওভারহেড তারে। সঙ্গে সঙ্গে আগুন জ্বলে ওঠে ওই অংশে। বহু চেষ্টা করেও তার থেকে ছা়ড়ানো যাচ্ছিল না ঠাকুরের চালা। সেই চালা সরাতে গিয়েই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল তিন জনের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আরও কয়েক জন। পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার রাতের এই ঘটনায় মৃতদের নাম জিতেন্দ্র সাহনি (২৮), বিমল সাহনি (৩৭) এবং বাপি মণ্ডল (৩০)। প্রথম দু’জনের বাড়ি নিউ মার্কেট থানা এলাকার জানবাজারে। বাপির বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলার কলাগাছিয়াতে।

কী করে ঘটল ওই দুর্ঘটনা? ওই দলে থাকা ঋত্বিক সিংহ নামে এক যুবক সোমবার জানান, হঠাৎ ট্রেনের তারে চালা আটকে গেলে তা সরাতে কাঠামো বেয়ে উপরে ওঠেন এক মোটবাহক বিতাশ ওরফে বাপি মণ্ডল। ৪৪০ ভোল্ট বিদ্যুৎ থাকা ওই তারটি হাত দিয়ে সরাতে যান তিনি। তখনই ঘটে বিপত্তি। ট্রলিতে থাকা আট জন যুবক ছিটকে পড়েন এ দিক-ও দিক। তারের সঙ্গে ঝুলতে থাকেন বাপি। কিছু ক্ষণ পরে তার কেটে দূরে ছিটকে পড়েন তিনি। ওই দৃশ্য দেখে অন্য যে সব পুজো কমিটির সদস্যেরা ঠাকুর বিসর্জন দিতে এসেছিলেন, তাঁরা দৌড়তে শুরু করেন। আতঙ্কে কয়েক জন নদীতেও ঝাঁপ দেন।

সোমবার জানবাজারে গিয়ে জানা গেল, গত ছ’বছর ধরে পুজো করে আসছে ‘শ্রী শ্রী গণেশ উৎসব কমিটি’। বাসিন্দাদের দাবি, বিসর্জনের সময়ে ট্রামের ওভারহেড তার থেকে যেন কোনও বিপদ না হয়, তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বাজে কদমতলা ঘাটের আগেই রয়েছে চক্ররেলের ওভারহেড তার। অন্যান্য পুজোয় বিসর্জনের সময়ে সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। কিন্তু এ বার তা করা হয়নি। আর তাতেই প্রাণ গেল তিন জনের।

পুলিশ জানায়, রবিবার রাতে সেখানে যথেষ্ট পুলিশ ছিল। আচমকাই ঘটনাটি ঘটে। আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক জনের আঘাত কম থাকায় তাঁদের ছেড়েও দেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই তিন জন মারা যান। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও এসএসকেএমে পাঁচ জন ভর্তি রয়েছেন।

এই ঘটনার জেরে ওই লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। সকালে রেলকর্মীরা তা মেরামত করেন। রবিবার রাত তিনটে নাগাদ এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার।

এ দিন উমা দাস লেনে ঢোকার মুখে দেখা গেল, মণ্ডপের বাঁশ খোলা হচ্ছে। পাশে বাড়িতে কাঁদতে কাঁদতে ডুকরে উঠছেন বিমলবাবুর স্ত্রী রেখা সাহনি। কোলে তাঁর মেয়ে। এক আত্মীয়ের কোলে তাঁদের দু’বছরের ছেলে। তাঁর এক বন্ধু সত্যজিৎ সরকার বলেন, ‘‘বছর দুই আগে বিমলের এক দাদা মারা গিয়েছেন। এখন বিমল চলে গেল। পরিবারের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছে।’’ মাছ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ওই পরিবারকে সমবেদনা জানাতে এ দিন গিয়েছিলেন বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহা ও স্থানীয় ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সন্দীপন সাহা। তাঁরা এ দিন আর্থিক সাহায্যেরও প্রতিশ্রুতিও দেন। জিতেন্দ্রর বাড়ি বিহারে। এ দিন তাঁর পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ জানায়, গুরুতর আহত অবস্থায় মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি অর্জুন ছেত্রী, মহেশ সাউ ও আরও এক মোটবাহক। পিজিতে ভর্তি আছেন দীননাথ রাম ও মনোজ সাহানি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE