Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

স্কুলের পাশেই শৌচাগার, খুদেদের স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা

গড়িয়ার ঢালাই ব্রিজের কাছে বৃজি এফ পি স্কুলের পাশেই আশুতোষ নস্কর হাইস্কুল। তিনতলা প্রাথমিক স্কুলের নীচের তলার বারান্দাতেই বরাবর মিড-ডে মিল খেতে বসে খুদে পড়ুয়ারা। অভিযোগ, মিড-ডে মিলের খাবার যেখানে রাখা থাকে, তার ঠিক উল্টো দিকেই গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে হাইস্কুলের শৌচালয় তৈরির কাজ।

পাশাপাশি: চলছে হাইস্কুলের শৌচাগার ৈতরির কাজ। (বাঁ দিকে) উল্টো দিকেই প্রাথমিক স্কুলের বারান্দায় মিড ডে মিল খাচ্ছে পড়ুয়ারা। (ডান দিকে) গড়িয়ার ঢালাই ব্রিজের কাছে। নিজস্ব চিত্র

পাশাপাশি: চলছে হাইস্কুলের শৌচাগার ৈতরির কাজ। (বাঁ দিকে) উল্টো দিকেই প্রাথমিক স্কুলের বারান্দায় মিড ডে মিল খাচ্ছে পড়ুয়ারা। (ডান দিকে) গড়িয়ার ঢালাই ব্রিজের কাছে। নিজস্ব চিত্র

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:১৬
Share: Save:

পাশাপাশি দুই স্কুল। একটি প্রাথমিক। অন্যটি হাইস্কুল। মাঝের দূরত্ব মেরেকেটে ফুট পাঁচেক। গড়িয়ার ঢালাই ব্রিজের কাছে ওই প্রাথমিক স্কুলের একতলায় যে বারান্দা রয়েছে, তারই উল্টো দিকে চলছে হাইস্কুলের শৌচালয় তৈরির কাজ। প্রাথমিক স্কুলের ওই বারান্দায় রোজ প্রায় ১৫০ জন পড়ুয়া মিড-ডে মিল খায়। তাই হাইস্কুল যাতে সেখানে শৌচাগার তৈরি না করে, সেই আর্জি জানিয়ে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষিকা স্থানীয় কাউন্সিলরকে মাস চারেক আগে চিঠি দিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও শৌচাগারের নির্মাণকাজ বন্ধ তো হয়ইনি, উল্টে স্কুল উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান তথা কলকাতা পুরসভার ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তীর পরামর্শ, ‘‘প্রাথমিক স্কুলের হলঘরেই তো মিড-ডে মিল খাওয়ানো যেতে পারে। শৌচালয়ের জন্য পরিবেশ খারাপ হবে না।’’

গড়িয়ার ঢালাই ব্রিজের কাছে বৃজি এফ পি স্কুলের পাশেই আশুতোষ নস্কর হাইস্কুল। তিনতলা প্রাথমিক স্কুলের নীচের তলার বারান্দাতেই বরাবর মিড-ডে মিল খেতে বসে খুদে পড়ুয়ারা। অভিযোগ, মিড-ডে মিলের খাবার যেখানে রাখা থাকে, তার ঠিক উল্টো দিকেই গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে হাইস্কুলের শৌচালয় তৈরির কাজ। এমনকি, ওই শৌচালয়ের ‘সোক পিট’ তৈরির জন্য যে জায়গা বাছা হয়েছে, তার পাশেই রয়েছে প্রাথমিক স্কুলটির ভূগর্ভস্থ জলাধার। শৌচালয়ের বর্জ্য জলের ওই কুয়ো তৈরি হলে ভবিষ্যতে তা থেকে প্রাথমিক স্কুলের জলাধারের জল দূষিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিবেদিতা বিশ্বাসের অভিযোগ, তিনি প্রথমে হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষককে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। শেষমেশ গত অক্টোবরে স্থানীয় কাউন্সিলরকে চিঠি লিখে শৌচালয় ও সোক পিট সরানোর আর্জি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আর্জিতেও কাজ হয়নি। নিবেদিতা বলেন, ‘‘ওই শৌচালয় তৈরি হলে আমাদের স্কুলের পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যের পক্ষে তা খুব ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আর্জি জানিয়েও লাভ হয়নি।’’

স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী প্রাথমিক ও হাইস্কুল— দু’টিরই উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘‘প্রাথমিক স্কুলের হলঘরটা বাচ্চাদের মিড-ডে মিল খাওয়ানোর জন্যই করা হয়েছিল। সেখানে খাওয়ার ব্যবস্থা করলেই সমস্যা মিটে যায়। হাইস্কুলের পড়ুয়াদেরও তো শৌচালয় দরকার।’’ প্রধান শিক্ষিকার পাল্টা জবাব, ‘‘হলঘরটা স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কাজে ব্যবহার করা হয়। তা ছাড়া, তিনতলার হলঘরে ওঠানামা করার সময়ে নিচু ক্লাসের বাচ্চারা পড়ে গিয়ে আঘাত পেতে পারে। খাবারের হাঁড়ি, থালা নিয়ে উপরে ওঠাও সমস্যার ব্যাপার।’’

হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কালিদাস আচার্য বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের জায়গাটি খুব সঙ্কীর্ণ। সেই কারণে শৌচালয়টি ওখানেই তৈরি করতে হচ্ছে। পুরোটাই পুর ইঞ্জিনিয়ারদের পরামর্শ মেনে তৈরি করা হচ্ছে। শৌচালয় থেকে দুর্গন্ধ ঠেকাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ কলকাতা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান কার্তিক মান্না বলেন, ‘‘পরিবেশ-বিধিকে তোয়াক্কা না করেই ওই প্রাথমিক স্কুলের সামনে হাইস্কুলের শৌচালয় ও সোক পিট তৈরির কাজ চলছে বলে শুনেছি। এর জন্য ওই হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকই দায়ী। শিগগিরিই আমি ওই স্কুলে পরিদর্শনে যাব।’’ পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শিশুদের স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা থাকলে ওই জায়গায় শৌচাগার তৈরি করা উচিত নয়। পরিবেশ আইন ভাঙার দায়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Toilet Primary School High School Mid Day Meal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE