দীর্ঘদিন ধরে কারখানায় টিন পেটানোর কাজ করেছেন ভদ্রলোক। রাতে ডিউটি থাকত। ৩০ বছর পরে কাজ যখন চলে গেল তখন দেখা গেল, তিনি ডান কানে শুনতে পান না। রাতে ঘুমের মধ্যে মাঝেমাঝেই কেঁপে ওঠেন তিনি।
চিকিৎসক জানান, কারখানায় টিন পেটানোর সময়ে তাঁর ডান কানটি থাকত শব্দের উৎসের দিকে। তাই ডান কানে তিনি আর শুনতে পান না। আর কাজ না থাকা অবস্থায় এখন রাতে মাঝেমাঝে কেঁপে ওঠার কারণও কাজের সময়ের ওই শব্দদূষণ। চিকিৎসকের নিদান, স্নায়ুতন্ত্রের উপরে শব্দদূষণের মারাত্মক প্রভাব।
ছেলে বাড়িতে পড়াশোনা করে। কিন্তু স্কুলে পড়ায় মন নেই। বাবা-মা ছেলের কাউন্সেলিং করালেন। ছেলের স্কুল পরিবর্তন করার পরামর্শ দিলেন কাউন্সেলর। ছেলে এখন হস্টেলে থেকে পড়ে। শহরের চিৎকার-চেঁচামেচি থেকে দূরে। ফলও মিলেছে তাতে। কাউন্সেলর বললেন, আগের স্কুল ভাল। কিন্তু যে ভাবে সারা দিন গাড়ির হর্ন বাজত, তাতে মনোসংযোগে সমস্যা হচ্ছিল ছেলেটির। টিফিন খেলেই বমি হয়ে যেত।
শারীরবিদেরা বলছেন, একটানা গাড়ির হর্নের আওয়াজ কিংবা বাজার এলাকার গোলমাল মানুষের মন ও শরীরের উপরে প্রভাব ফেলে। মানুষের বিরক্তি বাড়তে বাড়তে এক সময়ে তা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘদিন ধরে এটা ঘটতে থাকলে তা হৃদযন্ত্রেরও ক্ষতি করে। অনিদ্রা রোগের জন্ম দেয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গর্ভস্থ শিশুর নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ভারী শিল্প সংস্থার আওয়াজের সঙ্গে অনেক সময়ে শহর এলাকার দিনের শব্দমাত্রার কোনও পার্থক্য থাকে না।
শব্দ-দানব নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সময়ে সুপ্রিম কোর্ট, কলকাতা হাইকোর্ট এবং জাতীয় পরিবেশ আদালত বিভিন্ন রায় দিয়েছে। কিন্তু তা মানা হচ্ছে কই? সম্প্রতি শোভাযাত্রায় মাইক এবং ডিজে ব্যবহারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পরিবেশ আদালতের বিচারপতি এস পি ওয়াংদি।
শব্দের এই দাপটের কথা মেনে নিচ্ছেন রাজ্য পরিবেশ দফতর এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তারাও। তাঁরা বলছেন, শব্দ দূষণে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয় নাগরিকদের। কিন্তু তাঁদের মধ্যেই সব থেকে সচেতনতা কম। তাই পাড়ার উৎসব-অনুষ্ঠানে নির্বিচারে মাইক বাজানো হয়। গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নেমে অপ্রয়োজনে হর্ন বাজাতে থাকেন শিক্ষিত লোকজনও। নিয়ম ভেঙে এমন দূষণ করতে থাকলেও পুলিশ-প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয় না কেন? প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েই।
পুলিশের বক্তব্য, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। রাস্তাতেও অপ্রয়োজনে হর্ন বাজাতে নিষেধ করা হয়। কিন্তু পর্ষদের এক পদস্থ কর্তা মেনেই নিচ্ছেন, ‘‘শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন করা হলেও তার প্রয়োগ যথাযথ হয় না।’’
পরিবেশ দফতরের অনেকেই চান এমতাবস্থায় শব্দের তাণ্ডব রুখতে নাগরিকেরাই পথে নামুন। পরিবেশকর্মীদের সঙ্গে মিলে তাঁরাও আওয়াজ তুলুন, কোনও ভাবেই শব্দসীমা ৬৫ ডেসিবেল ছাড়াতে দেওয়া যাবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy