Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আড়াই বছর পার, থমকেই বহুতল পার্কিংয়ের প্রকল্প

আড়াই বছর আগে ঘোষণা করা হয়েছিল নব মহাকরণের সামনে তৈরি হবে গাড়ি রাখার বহুতল (পার্কিং প্লাজা)। প্রকল্প রূপায়ণে সময় বরাদ্দ হয়েছিল বছর দেড়েক। কিন্তু কাজ শুরু তো দূরের কথা, এত দিনে পরিকল্পনাও চূড়ান্ত হয়নি।

অশোক সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৪৭
Share: Save:

আড়াই বছর আগে ঘোষণা করা হয়েছিল নব মহাকরণের সামনে তৈরি হবে গাড়ি রাখার বহুতল (পার্কিং প্লাজা)। প্রকল্প রূপায়ণে সময় বরাদ্দ হয়েছিল বছর দেড়েক। কিন্তু কাজ শুরু তো দূরের কথা, এত দিনে পরিকল্পনাও চূড়ান্ত হয়নি।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক বার ঘোষণা করেছেন, তাঁর আমলে ‘সব কাজ হয়ে গিয়েছে’। বাস্তব পরিস্থিতি যে তা নয়, প্রস্তাবিত পার্কিং প্লাজা তা স্পষ্ট ভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে। তৃণমূল এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসার কয়েক মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত হয়, কিরণশঙ্কর রায় রোডে পুরনো ‘পঞ্চায়েত ভবন’ ভেঙে যৌথ উদ্যোগে তৈরি হবে বহুতল পার্কিং প্লাজা। তিন তলা ভবনটি ভাঙার দায়িত্ব ছিল পূর্ত দফতরের। গোড়ায় ঠিক ছিল তারাই নয়া প্রকল্পের দায়িত্বে থাকবে। কিন্তু অচিরেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নবগঠিত পশ্চিমবঙ্গ সড়ক উন্নয়ন নিগমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

পরিকল্পনার গোড়াতেই হাইকোর্ট ও আশপাশের কিছু অফিস প্রস্তাবিত প্রকল্পে গাড়ি রাখার জায়গা পেতে আগ্রহ দেখিয়েছিল। এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (পূর্ত) অয়ন মিত্র এ কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘গোটা অঞ্চলে একগুচ্ছ বাণিজ্যিক সংস্থা, অথচ গাড়ি রাখার জায়গার প্রচণ্ড অভাব।’’ ঠিক হয়, প্রায় ২৩ হাজার বর্গফুট আয়তনের ওই জমিতে নির্মাতা সংস্থা গাড়ি রাখার অনুমতি বাবদ টাকা আদায় করবে। রক্ষণাবেক্ষণের কাজও তারা করবে। কী ভাবে প্রকল্প হতে পারে, ২০১৩-র অগস্ট-সেপ্টেম্বরে দিল্লির তিন সংস্থার কাছে রাজ্য থেকে এ নিয়ে খোঁজখবর করা হয়। প্রকল্পে ব্যয় ধার্য হয় ৫৬.৯ লক্ষ টাকা। ১২ জন অফিসারকে নিয়ে নিগমের অফিসে বৈঠক হয় ২০১৪-র ২২ এপ্রিল। কিন্তু তার পর এতটা সময় কাটলেও শুরু হয়নি কাজ।

কেন এই হাল? পশ্চিমবঙ্গ সড়ক উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল সাংসদ সুব্রত বক্সী বলেন, ‘‘প্রকল্পের জমিটা পূর্ত দফতরের হাত থেকে নিগমের হাতে পুরোপুরি নেওয়া হয়নি। ভূমি সংস্কারের নিয়ম মেনে এটা নিতে হচ্ছে বলে সময় লাগছে। আশা করছি শীঘ্রই তা হয়ে যাবে।’’ তার পর কত দিন লাগবে প্রকল্প রূপায়ণে? সুব্রতবাবুর জবাব, ‘‘দেড় বছরের প্রকল্প। আমরা ১৫ মাসেই শেষ করার চেষ্টা করব।’’

নিগম-চেয়ারম্যান যা-ই বলুন, কাজ কারা করবে, টাকার উৎস কী, নিগমের তত্ত্বাবধানে থাকা ইঞ্জিনিয়ারেরা এখনও বলতে পারছেন না। সংশ্লিষ্ট এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ারের বক্তব্য, ‘‘বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি, অগ্নি নির্বাপণ এবং পরিবেশ প্রভৃতি দফতর থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একটি বেসরকারি পরামর্শদান সংস্থাকে। সেগুলি পেলে পরবর্তী পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ পরামর্শদান সংস্থার অ্যাসোসিয়েট ভাইস প্রেসিডেন্ট জয়ন্ত বসু বলেন, ‘‘আমরা ক’দিন আগে ডিপিআর জমা দিয়েছি। এ নিয়ে আর মন্তব্য করতে চাইছি না।’’

কলকাতায় প্রথম বহুতল পার্কিং ব্যবস্থার পরিকল্পনা হয় ১৯৯৯-এ, রডন স্ট্রিটে। ২০০১-এ সেটি রূপায়িত হয় সাড়ে আট কোটি টাকা দিয়ে। এর পরে ২০০৭-এ ১৫ কোটি টাকা খরচ করে নিউ মার্কেটের সামনে তৈরি হয় ২৫০ গাড়ি রাখার উপযোগী ‘পার্কিং প্লাজা’। ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের পরিকাঠামো-পরামর্শদাতা তথা কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন ডিজি দীপঙ্কর সিংহর মতে, ‘‘জনবহুল এ শহরে গত এক দশকে যে ভাবে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে, তাতে গাড়ির বহুতল পার্কিং প্লাজাই সমাধানের পথ। কিন্তু তার জন্য যে সদিচ্ছা, সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা দরকার, তার চরম অভাব আছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Parking Plaza not started
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE