Advertisement
E-Paper

নানা বিষয়ের বুননে উৎসবে মুক্তির সন্ধান

আবহমান কাল ধরে নানা বাধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করে মানুষ মুক্তির পথ খুঁজতে চেয়েছে। তার মধ্যে যেমন রয়েছে পরাধীনতা থেকে মুক্তি, তেমনই রয়েছে প্রতিকূল পরিস্থিতি জয় করে নারীমুক্তির কাহিনিও। আসন্ন শারদোৎসবে এই মুক্তিই নানা মণ্ডপের থিম।

সায়নী ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:১৪

আবহমান কাল ধরে নানা বাধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করে মানুষ মুক্তির পথ খুঁজতে চেয়েছে। তার মধ্যে যেমন রয়েছে পরাধীনতা থেকে মুক্তি, তেমনই রয়েছে প্রতিকূল পরিস্থিতি জয় করে নারীমুক্তির কাহিনিও। আসন্ন শারদোৎসবে এই মুক্তিই নানা মণ্ডপের থিম।

যুগ যুগ ধরে নারীদের দমিয়ে রেখেছে এই সমাজ, মুখ বুজে অন্যায় সহ্য করতে বাধ্য করেছে। মায়ের বোধনের পাশাপাশি সমাজে নারীমুক্তির বার্তা পৌঁছে দেবে সন্তোষপুরের অ্যাভিনিউ সাউথ পল্লিমঙ্গল সমিতি। তাদের বিষয়-ভাবনা ‘এই বোধনে আমার মুক্তি’। মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে তিনটি ভাগে। যে প্রতিকূল পরিস্থিতিকে সঙ্গী করে মেয়েদের চলতে হয় সর্বক্ষণ, সেই কাহিনি তুলে ধরা হবে প্রথম ভাগে। তার থেকে মুক্তির উপায়ের খোঁজ দেবে মণ্ডপের দ্বিতীয় ভাগ। সেখানে মডেলের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হবে মুক্তির নানা মুহূর্ত। তৃতীয় ভাগে বিরাজ করবেন স্বয়ং দুর্গা। শ্বেত-অঙ্গ দেবীর দশ হাতে অস্ত্রের বদলে থাকবে দশটি চোখ। হাতগুলি আকাশের দিকে ওঠানো। দুর্গার পায়ের নীচে থাকবে অসুর। দেখে মনে হবে, মা যেন সমাজের সব বাধা থেকে মানবজাতিকে মুক্তি দিচ্ছেন।

রামগড় জয়শ্রীনগর অ্যাসোসিয়েশনের মণ্ডপে নারীশক্তিকে আহ্বান জানানো হবে মহাশক্তি রূপে। সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে এই পুজোয় সেরামিক্সের মডেলের মাধ্যমে দেখানো হবে সমাজের অগ্রগতিতে নারীশক্তির ভূমিকা। মানানসই সাবেক প্রতিমা।

মন্দিরে গিয়ে ধূপ-ধুনো দিয়ে আরাধনা করলেই মুক্তি পাওয়া যায় না। তা খুঁজে নিতে হয় কাজ ও পরিশ্রমের মাধ্যমে। রবীন্দ্রনাথ ‘ধূলামন্দির’ কবিতায় যে মুক্তির কথা বলেছিলেন, সেই পথেই শিল্পী বিশ্বজিৎ সাহা সাজিয়ে তুলেছেন নন্দীবাগান সর্বজনীন পূজা কমিটির মণ্ডপ। মৃন্ময়ী মায়ের সাবেক মূর্তিকে বরণ করা হবে মণ্ডপে। তা ছাড়া, শুধু কাজ করে গেলেই চলবে না, সৃষ্টির মাধ্যমে সেই কাজের ধারাবাহিকতাকেও বজায় রাখার বার্তা থাকছে মণ্ডপের প্রতিটি স্তম্ভে।

অশিক্ষা জীবনের চরমতম এক অভিশাপ। চাই তার থেকেও মুক্তি। একমাত্র শিক্ষার মাধ্যমেই অশিক্ষার অসুর নির্মূল করা সম্ভব। জনগণ-মনে শিক্ষার সেই দ্যুতি পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হয়েছে ৬৬ পল্লি। শিল্পী অমর সরকার তাই পেনসিল দিয়ে সাজাচ্ছেন গোটা মণ্ডপ। দেবীর হাতে থাকছে না ত্রিশূল বা অন্য অস্ত্র। নানা ছবি ও লেখায় থাকবে অশিক্ষা দূরীকরণের বার্তা।

অন্য দিকে, মাতৃভাষার ক্ষয়িষ্ণু অবস্থার প্রতিফলন তৈরি হচ্ছে বেহালা সংসদ পরিচালিত নস্করপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসবে। তাদের এ বারের থিম ‘ধ্যান জপ মন্ত্র, পুঁথি বই গ্রন্থ’। বাংলা ভাষার সংকীর্ণতা দূরীকরণে মণ্ডপ জুড়ে থাকবে প্রাচীন পুঁথি থেকে শুরু করে আধুনিক বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য প্রকাশনার অংশও। দর্শনার্থীরা মণ্ডপ ঘুরে সাহিত্যের সেই সব অংশ পড়ে দেখতে পারবেন।

অশিক্ষার পাশাপাশি আমাদের সমাজ সুন্দর হয়ে ওঠার পথে এক বিরাট অন্তরায় শিশুশ্রম। সমাজের এই ভাবীকালের নাগরিকদের আজ ঠেলে দেওয়া হচ্ছে অবহেলা, বঞ্চনা ও অশিক্ষার দিকে। শিশুশ্রমিক সমাজের চরম লজ্জা এ কথা মেনে নিয়েও আটকানো যাচ্ছে না শিশুশ্রমিক নিয়োগ। হরিদেবপুর নবীন সাথী ক্লাব তাই শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে সচেতনতা প্রসারে প্রয়াসী হয়েছে। দেবীর এখানে চিন্ময়ী রূপ। তিনি রক্ষা করবেন সেই সব সবুজ প্রাণকে, সমাজকে করবেন শিশুশ্রমের কলঙ্কমুক্ত।

বিশ্বে সকল প্রাণের উৎস ও আশ্রয়স্থল হচ্ছেন মা। এ বারের পুজোয় দৃষ্টিহীনরাও যাতে মায়ের স্নেহ ও আশ্রয় থেকে বঞ্চিত না হন, তাদের মাতৃ আরাধনায় সেই চেষ্টাই করেছে বালিগঞ্জ এলাকার স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন সর্বজনীন। মূল মণ্ডপের বাইরে রাখা থাকবে ছোট আকারের দুর্গামূর্তি। থাকবে অসুর ও সিংহও। দৃষ্টিহীনেরা ছুঁতে পারবেন মায়ের হাতের অস্ত্র ও চরণ। স্পর্শের মধ্যে দিয়ে অনুভব করতে পারবেন মায়ের তেজস্বী রূপ।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে পুজোর মান। পুজো মানে এখন শুধু ঠাকুর দেখা এবং এক মণ্ডপ থেকে অন্য মণ্ডপে ঘুরে বেড়ানো নয়। কয়েক বছর যাবৎ থিমের লড়াইয়ে সামিল হয়েছে শহরের ছোট-বড় সমস্ত ক্লাব এবং পুজোকমিটিগুলি। এ বছরও নানা থিমের লড়াইয়ে পুজো যেমন আনন্দের, তেমনই তার আবহে জীবনের গুরুত্বর্পূণ দিকগুলিও ঠাঁই করে নিয়েছে।

sayani bhattacharyay pujo avenue south pallimangal samity durga puja kolkata news online kolkata news festival
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy