Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দূষণের পর্দায় ঢাকা পড়ছে নজর-ক্যামেরার ছবিও

রাতের শহরে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে চম্পট দেওয়া একটি গাড়িকে ধরতে গিয়ে চলতি মাসের শুরুতেই মুশকিলে পড়তে হয়েছিল পুলিশকে। হাতে আসা সিসি ক্যামেরার আবছা ফুটেজ থেকে শুধু বোঝা গিয়েছিল, গাড়িটি কালো রঙের।

বাধা: রাতের শহরে কম আলো ও দূষণের জেরে অস্পষ্ট ছবি উঠছে সিসি ক্যামেরায়। নিজস্ব চিত্র

বাধা: রাতের শহরে কম আলো ও দূষণের জেরে অস্পষ্ট ছবি উঠছে সিসি ক্যামেরায়। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৯ ০২:৪১
Share: Save:

দূষণের জেরে অসুখ-বিসুখ হয়, এমনটাই এত দিন জানা ছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, দূষণ প্রভাব ফেলে পুলিশি তদন্তেও! অন্তত কলকাতা পুলিশ সূত্রে তেমনটাই খবর। পুলিশ বলছে, রাতের শহরে আলো কম থাকায় এমনিতেই স্পষ্ট ছবি পেতে সমস্যা হয়। তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে দূষণের জেরে তৈরি হওয়া ঘোলাটে পরিবেশ। দুইয়ে মিলে পরিষ্কার ছবি দিতে পারছে না রাস্তার মোড়ে মোড়ে লাগানো বিভিন্ন সিসি ক্যামেরা। ফলে অস্পষ্ট ফুটেজ হাতে নিয়ে অনেক সময়ে খড়ের গাদায় সূচ খুঁজতে নামতে হচ্ছে পুলিশকে!

রাতের শহরে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে চম্পট দেওয়া একটি গাড়িকে ধরতে গিয়ে চলতি মাসের শুরুতেই মুশকিলে পড়তে হয়েছিল পুলিশকে। হাতে আসা সিসি ক্যামেরার আবছা ফুটেজ থেকে শুধু বোঝা গিয়েছিল, গাড়িটি কালো রঙের। আর বহু কষ্টে অনুমান করা গিয়েছিল, গাড়ির নম্বর প্লেটের চারটি আলাদা আলাদা সংখ্যা— ৩, ৪, ৯, ১!

নম্বর প্লেটে ওই চারটি সংখ্যা আলাদা ভাবে রয়েছে, এমন ২২৭টি কালো গাড়িকে চিহ্নিত করে শুরু হয়েছিল পুলিশের তদন্ত। আলাদা আলাদা ভাবে প্রতিটি গাড়ির মালিককে জেরা করে সাফল্য এলেও তদন্তে যুক্তদের অনেকেরই আক্ষেপ, প্রথমেই ঠিকঠাক ফুটেজ পাওয়া গেলে কাজ অনেক সহজ হয়ে যেত। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছিল, সেখানে আলো বেশি ছিল না। আর দূষণের জেরে চারপাশ ঘোলাটে হয়ে ছিল। সব মিলিয়ে যে ফুটেজ হাতে এসেছিল, তা বিশেষ কাজে লাগানো যায়নি।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

থানার পাশাপাশি লালবাজার থেকেও শহরে লাগানো সিসি ক্যামেরায় কড়া নজরদারি চালানো হয়। সমস্যা কি তাঁদেরও হচ্ছে? লালবাজারের এক তদন্তকারী আধিকারিক বলছেন, ‘‘গত বছর থেকেই এই সমস্যা বেশি করে দেখা যাচ্ছে।’’ কারণ হিসেবে ওই আধিকারিক বলছেন, ‘‘এখনও বহু জায়গায় রাতের দিকে পর্যাপ্ত আলো থাকে না। তাই বেছে বেছে আলোর জায়গায় সিসি ক্যামেরাগুলি লাগানো হয়েছিল। তবে এখন সেই সুবিধাও আর মিলছে না।’’ দূষণের মাত্রা যে দিন বাড়ে, সে দিন সব চেয়ে বেশি সমস্যা হয় উত্তর এবং দক্ষিণ কলকাতার বড় রাস্তার আশপাশের রাস্তাগুলিতে। একই সমস্যা দেখা যাচ্ছে ভিক্টোরিয়া এবং রেড রোড সংলগ্ন এলাকাতেও।

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, কোনও নির্দিষ্ট এলাকায় বাতাসের গুণমানের সূচক (এয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স) নির্ভর করে ভাসমান ধূলিকণা (পিএম ১০) ও ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম ২.৫) উপরে। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, দূষণের সূচক ১০০-র উপরে থাকলেই তাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। আর সেই মাত্রা যদি ২০০ ছাড়ায়, তা হলে সেই অবস্থা ‘ভীষণ অস্বাস্থ্যকর’। পরিবেশকর্মীদের বড় অংশেরই দাবি, নির্ধারিত মাপকাঠিতে কলকাতায় বছরের প্রায় ছ’মাসই দূষণ-মাত্রা থাকে স্বাভাবিকের উপরে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র অবশ্য এর জন্য সরাসরি দূষণকে দায়ী করতে চান না। তাঁর কথায়, ‘‘ঘটনার দিন বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা ও অন্যান্য দূষণের পরিমাণ কী ছিল, তা দেখা দরকার। সঙ্গে সিসি ক্যামেরা এবং গাড়ির নম্বর

প্লেটের আপেক্ষিক অবস্থান কী ছিল, তা-ও দেখতে হবে। সবটাই কিন্তু দূষণ থেকে হয় না।’’

উত্তর কলকাতার একটি ট্র্যাফিক গার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক আবার জানাচ্ছেন, আলোর অভাব আর দূষণ তো রয়েছেই। তার পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা ফাঁকি দিতে গাড়ির চালকেরাও নানা ‘ব্যবস্থা’ করেন। তাঁর কথায়, ‘‘ধরা পড়ার পরে দেখেছি, কোনও কোনও গাড়ির চালক ইচ্ছে করে গোটা গাড়ি সাফ করেন, শুধু নম্বর প্লেটটা ছাড়া। কেউ কেউ আবার ক্যামেরা ফাঁকি দিতে ঝাপসা স্টিকারও নম্বর প্লেটের উপরে লাগিয়ে রাখেন।’’ বাইপাসের ধারের এক ট্র্যাফিক গার্ডের আধিকারিক অবশ্য বলছেন, ‘‘এ সব ঠিক ধরা পড়ে যায়। কিন্তু দূষণের সঙ্গে লড়া যাচ্ছে না।’’

গত ফেব্রুয়ারির শেষে একই রকম বিপদে পড়েছিল গিরিশ পার্ক থানার পুলিশও। ওই এলাকা থেকে এক ব্যবসায়ীকে গাড়িতে তুলে অপহরণের তদন্তে নেমে হাতে পাওয়া সিসি ক্যামেরার ফুটেজ কাজেই লাগাতে পারেনি পুলিশ। তা থেকে গাড়ির নম্বর বোঝা যায়নি। শুধু অনুমান করা গিয়েছিল, মানিকতলা এলাকায় গাড়ি বদলে কালো এসইউভি-তে তুলে ব্যবসায়ীকে নিয়ে চম্পট দিয়েছে অপহরণকারীরা। ওই থানার তদন্তকারীরাই বলছেন, রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকায় নাকা তল্লাশির সময়ে অপহরণকারীরা ধরা না পড়লে কী হত, বলা মুশকিল!

এ ক্ষেত্রেও সিসি ক্যামেরার সামনে খলনায়ক সেই অন্ধকার আর দূষণ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Traffic CCTV Footage Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE