Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

তারাও আছে, সবে ভাবছে শহর

শিশুর ‘অন্য রকম’ আচরণ দেখলে কোথায় যেতে হবে, এখনও দিশাহারা এ শহরের অধিকাংশ বাবা-মা। তবে বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধকতা ধরা পড়লে হাতে গোনা হলেও, ভরসা জোগানোর কিছু জায়গা আছে এ শহরে। 

এ ভাবেই চলছে বিশেষ শিশুর থেরাপি। এসএসকেএমের ডিইআইসি-তে।—নিজস্ব চিত্র।

এ ভাবেই চলছে বিশেষ শিশুর থেরাপি। এসএসকেএমের ডিইআইসি-তে।—নিজস্ব চিত্র।

দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৮ ০৩:৩৬
Share: Save:

শিশুর ‘অন্য রকম’ আচরণ দেখলে কোথায় যেতে হবে, এখনও দিশাহারা এ শহরের অধিকাংশ বাবা-মা। তবে বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধকতা ধরা পড়লে হাতে গোনা হলেও, ভরসা জোগানোর কিছু জায়গা আছে এ শহরে।

আড়াই বছরের ছেলে শব্দ করে না। চোখের দিকে তাকায় না। একা থাকে। ডাকলে সাড়া দেয় না। সমস্যা যে আছে, তা মা বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু ছেলের হয়েছেটা কী? সেটা কে বলে দেবে?

শহরের বিভিন্ন শিশু চিকিৎসকের কাছে ঘুরে মিলছিল না এর উত্তর। শেষে এক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে মা দ্বারস্থ হন দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থার। নানা শারীরিক পরীক্ষার পরে তারাই জানায় শিশুটির ‘ইন্টেলেকচুয়াল ডিসএবিলিটি’ বা বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এর অর্থ কী? মায়ের এ বার কী করণীয়?

ওই সংস্থার কর্মীদের সাহায্যেই মা জানতে শুরু করেন, ইন্টেলেকচুয়াল ডিসএবিলিটি হয় নানা রকম। মেন্টাল রিটার্ডেশন, অটিজ্ম স্পেক্ট্রাম ডিসঅর্ডার, মাল্টিপল ডিসএবিলিটি, সেরিব্রাল পলসি, ডাউন সিনড্রোম— সবই পড়ে তার আওতায়। এক এক ধরনের শিশুর জন্য রয়েছে এক এক প্রকারের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। কারণ, এই ধরনের প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্রে সমাজের মূলস্রোতে মিলেমিশে বড় হওয়া বেশ কঠিন যে কোনও শিশুর। কারণ, এদের অনেকেই আর পাঁচ জনের মতো সহজে নিজেদের প্রকাশ করতে পারে না। কারও চোখের দিকে তাকাতে অসুবিধা হয়, কারও বা নিজের পছন্দ-অপছন্দ বুঝিয়ে বলা বা স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হয়। কোনও কিছু শিখতেও অন্য শিশুদের তুলনায় বেশি সময় লাগে এদের। নিজের নিত্যদিনের কাজ করতেও অসুবিধায় পড়তে হয়। গোলমাল বাধে সামাজিকতায়। নতুন জায়গায় মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়। অনেক সময়ে কথা বলতেও সমস্যা হয় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এই শিশুদের। ফলে বড় হয়ে ওঠার পথে অভিভাবকদের তরফে বিশেষ সহযোগিতা প্রয়োজন তাদের।

এ ক্ষেত্রে পরিজনেদের মতামত মেনে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নিয়ে কাজ করা এক থেরাপিস্টের কাছে মা নিলেন প্রশিক্ষণ। জানলেন নিজের ছেলের সম্পর্কে। কারণ এমন ক্ষেত্রে নিজের সন্তানকে বুঝতে হলেও প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির কিছুটা পরিবর্তন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের ক্ষেত্রে প্রথম বছরগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সমস্যা বুঝতে পারলে অভিভাবকদের তখনই সতর্ক হওয়া উচিত। তাতে অনেক সময়েই প্রতিবন্ধকতা সংক্রান্ত বড় কোনও সমস্যা এড়ানো যায়।

এ রাজ্যে ইন্টেলেকচুয়ালি ডিসএবেলড শিশুদের বাবা-মায়েদের একটা বড় অংশ এখনও প্রাথমিক ধাপের চিকিৎসা নিয়েই অন্ধকারে। যাঁরা এ সব ক্ষেত্রে ঠিক দিশা দেখাতে পারেন, তেমন চিকিৎসক, থেরাপিস্ট বা কেন্দ্রের সংখ্যা কলকাতায় হাতে গোনা। পরিচিতদের থেকে কেউ হয়তো উপযুক্ত জায়গার খোঁজ পাচ্ছেন। কেউ আবার ভুল জায়গায় ছুটে টাকা এবং সময় নষ্ট করছেন। তাতেই পেরিয়ে যাচ্ছে শিশুর বিকাশের মূল্যবান বছরগুলো।

তবে যেটুকু ব্যবস্থা আছে, তার খোঁজও নেই অনেকের কাছে। যেমন স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, রাজ্যের ৬৮টি সরকারি হাসপাতালের শিশু বিভাগ থেকে রেফার করা হয় এসএসকেএমে। সেখানেই আছে রাজ্যের একমাত্র ‘ডিস্ট্রিক্ট আর্লি ইন্টারভেনশন সেন্টার’ (ডিইআইসি), যা দেশের মধ্যেও প্রথম। সদ্যোজাত থেকে ছ’বছর পর্যন্ত ছেলে-মেয়েদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হলে বা অন্য কোনও অসঙ্গতি দেখা দিলে, সেখানে এক ছাদের তলায় নানা পরীক্ষা করা হয়। আছে বিভিন্ন থেরাপির ব্যবস্থাও। চোখ-কান-দাঁতের পরীক্ষা, স্পিচ-অকুপেশনাল-ফিজিওথেরাপি, স্পেশ্যাল এডুকেশনের পাশাপাশি বাচ্চার মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ হয়। সেই সঙ্গে চলে বাবা-মায়ের কাউন্সেলিং। দেওয়া হয় প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও।

এসএসকেএম সূত্রের খবর, প্রতি মাসেই গোটা রাজ্য থেকে অন্তত ৬০০ শিশু আসে এখানে। ফলো-আপ করতে আসা পুরনো শিশু মিলিয়ে সংখ্যাটা পৌঁছয় হাজারে। সেই সঙ্গে পাশের রাজ্যগুলি থেকেও আসছে অনেকে। এ দিকে, বছর খানেক ধরে সেখানে অকুপেশনাল থেরাপিস্ট নেই। ওই হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক সুচন্দ্রা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দিনে অন্তত ১৩০ জনকে দেখতে হয়। সেই সঙ্গে অভিভাবকের কাউন্সেলিং। এক জায়গার উপরে যথেষ্টই চাপ পড়ে।’’

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Differently Abled Autism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE