Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘প্রহৃত’ প্রতিবাদী, নাম জড়াল সিভিক পুলিশের

পুজোর চার দিন মদের দোকান খোলা রাখার সিদ্ধান্তে রাজ্য সরকারের কোষাগার ভরলেও তার হ্যাপা পোহাতে হল পুলিশকে। মদের দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভিড় আর মণ্ডপে দর্শনার্থীদের মধ্যে মাতালদের অভব্যতা সামাল দিতে গিয়ে রীতিমতো নাজেহাল হল তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নিউ ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

পুজোর চার দিন মদের দোকান খোলা রাখার সিদ্ধান্তে রাজ্য সরকারের কোষাগার ভরলেও তার হ্যাপা পোহাতে হল পুলিশকে। মদের দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভিড় আর মণ্ডপে দর্শনার্থীদের মধ্যে মাতালদের অভব্যতা সামাল দিতে গিয়ে রীতিমতো নাজেহাল হল তারা।

নবমীর রাতে সিঁথি থানা এলাকায় প্রকাশ্যে মদ্যপানের বিরোধিতা করে যেমন মারধর খেতে হয়েছে বৃদ্ধকে, তেমনই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের কয়েকটি ঘটনাতেও প্রকাশ্যে মদ্যপানের প্রতিবাদ করতে গিয়ে মারধর, হুমকির মুখে পড়েছেন অনেকে। মণ্ডপে মদ্যপ যুবকদের অভব্যতার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে বেশ কয়েকটি পুজোর কর্তারা রীতিমতো উষ্মা প্রকাশ করেছেন। ধরপাকড়ও হয়েছে দেদার। বেশিরভাগ অভিযুক্তই অবশ্য ব্যক্তিগত জামিনে ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন।

নিউ ব্যারাকপুরের এমনই একটি ঘটনায় নাম জড়িয়েছে খোদ পুলিশেরই!

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, দশমীর রাতে নিউ ব্যারাকপুরের আট নম্বর রেলগেট লাগোয়া এস এন ব্যানার্জি রোডের ধারে কিছু যুবক প্রকাশ্যে মদ্যপান করছিলেন। তা দেখে প্রতিবাদ করেন এলাকার বাসিন্দারা। সে সময়ে মদ্যপ যুবকদের পক্ষ নিয়ে বাসিন্দাদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নিউ ব্যারাকপুর থানারই এক সিভিক পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, যাঁরা প্রকাশ্যে মদ্যপানের প্রতিবাদ করেছিলেন, মাঝরাতে তাঁদের কয়েক জনের বাড়িতে চড়াও হয়ে মারধর করা হয়েছে।

এই ঘটনায় আহত রিনা মণ্ডল নামে বছর পঁয়তাল্লিশের এক মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, ঘটনাটি জানাতে স্থানীয় বাসিন্দারা ওই রাতেই নিউ ব্যারাকপুর থানায় গেলে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চায়নি পুলিশ। পরে বুধবার সকালে চার জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। তার পরে সুমন ও জয় নামে দুই যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে অভিযুক্ত সিভিক পুলিশের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনও লিখিত অভিযোগ হয়নি বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

ঘটনার উল্লেখ করে স্থানীয় বাসিন্দা অচিন্ত্য মণ্ডল বলেন, ‘‘পুজোর ক’দিন এখানে তো মদ খাওয়ার উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছিল। রাস্তার ধারে, গাছের আড়ালে বসে মদ্যপান চলছিল। সঙ্গে অশ্রাব্য গালিগালাজ। রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা তো দূর, ঘরে টেকাই দায় হয়ে উঠেছিল। পুলিশকে এর আগেও জানানো হয়েছে কিন্তু সর্ষের মধ্যেই তো ভূত।’’

নিউ ব্যারাকপুরের ওই এলাকায় মূলত নিম্ন-মধ্যবিত্ত লোকজন থাকেন। এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে বহিরাগত যুবকদের এ ভাবে মদ খাওয়া ও গালিগালাজের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করেননি। দশমীর রাতে নেশাখোরদের হৈ-হল্লা চলাকালীন বাসিন্দাদের কয়েক জন তাদের চলে যেতে বলেন‌। তা থেকে প্রথমে বচসা শুরু হয়, পরে তা গড়ায় হাতাহাতি পর্যন্ত। বাধা দিতে গিয়ে আহত হন রিনাদেবী। তাঁর মাথায়, হাতে ও বুকে চোট লাগে। রাতেই মধ্যমগ্রাম গ্রামীণ হাসপাতাল ও পরে সেখান থেকে কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে।

যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি নিউ ব্যারাকপুরের তিন নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে। স্থানীয় কংগ্রেস কাউন্সিলর অভিজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘‘পুজোয় মদের দোকানগুলো খোলা থাকায় অনেকেই বন্ধুদের সঙ্গে ঠাকুর দেখার নাম করে বেরিয়ে মদ কিনেছে। রাস্তার ধারে, ঝোপ-ঝাড়ে মদের বোতল নিয়ে বসে পড়েছে। দশমীর রাতে সবাই বিরক্ত হয়েই আপত্তি করেন। প্রশাসনের উচিত কড়া ব্যবস্থা নেওয়া।’’

দশমীর রাতে ব্যারাকপুরের সর্বপল্লির পুজোমণ্ডপে পাড়ার মহিলারা যখন প্রতিমা বরণ করছিলেন, সে সময়ে কাঞ্চন পাল নামে এক যুবক তাঁদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন বলে অভিযোগ। ঘটনায় হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন পাড়ারই চার-পাঁচ জন। ওই ঘটনার বিরুদ্ধে বুধবার টিটাগড় থানায় বিক্ষোভ দেখান এলাকার মহিলারা। উভয় তরফেই অভিযোগ দায়ের হয়। এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি।

একই রাতে নৈহাটি ও কামারহাটিতে দু’টি পুজোমণ্ডপে মত্ত অবস্থায় মহিলাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের জন্য উত্তেজনা ছড়ায়। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনায় অভিযোগ খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট থানার আধিকারিকদের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police Drunkard Durga puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE