কসবায় জলাভূমির চরিত্র বদল করে বেআইনি ভাবে মিউটেশন দেওয়ার ঘটনার শাস্তি হিসেবে অবশেষে কর-মূল্যায়ন দফতরের চিফ ম্যানেজার ভাস্কর ঘোষকে ওই দফতর থেকে সরিয়ে দিল পুর-প্রশাসন। স্বভাবতই ৮০বি কসবা বোসপুকুর রোডে বেআইনি মিউটেশন দেওয়ায় স্রেফ ‘পদ্ধতিগত ভুল’ বলে যে তত্ত্ব প্রথম দিকে খাড়া করতে চেয়েছিল পুর-প্রশাসনের একাংশ, সোমবার কার্যত তা নাকচ হল মেয়র পারিষদের বৈঠকে। এক মেয়র পারিষদের কথায়, “ওই মিউটেশন-কাণ্ড যে নিয়ম মেনে হয়নি, তা প্রমাণিত হয়েছে তদন্ত রিপোর্টে। চিফ ম্যানেজার নিজেও ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাই প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনতে ওই দফতরের চিফ ম্যানেজার-সহ পাঁচ জনকেই সরানো হল।” এর মধ্যে চার জনকে অবশ্য আগেই সরানো হয়েছে।
তা হলে প্রথমে পদ্ধতিগত ভুলের কথা বলা হয়েছিল কেন?
এর জবাবে পুরসভার এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “ওই অফিসারদের তরফ থেকে প্রথমটায় সে রকমই সাফাই দেওয়া হয়েছিল। পরে তদন্তে সব কিছু প্রমাণিত হয়েছে।”
সোমবার পুরসভায় মেয়র পারিষদের বৈঠক ছিল। বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে অবশ্য কসবার মিউটেশন-কাণ্ড ছিল না। বৈঠকের শেষ দিকে বিষয়টি তোলেন মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ দফতর) দেবব্রত মজুমদার। প্রসঙ্গত, কসবা মিউটেশন-কাণ্ডে তিন মেয়র পারিষদকে নিয়ে সম্প্রতি এক তদন্ত কমিটি গঠন করে পুর-প্রশাসন। দেবব্রতবাবু ওই কমিটির অন্যতম সদস্য। বাকি দু’জন হলেন অতীন ঘোষ এবং দেবাশিস মজুমদার। পুরসভা সূত্রের খবর, বৈঠকে দেবব্রতবাবু বলেন কসবার মিউটেশন-কাণ্ডের তদন্ত রিপোর্ট ইতিমধ্যেই জমা দেওয়া হয়েছে। এ বার ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ওই বক্তব্য শুনে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানতে চান, যাঁরা জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধে কী করা হবে। তখন দেবব্রতবাবু জানান, ওঁদের ওই দফতর থেকে সরিয়ে দেওয়া দরকার। তার পরেই মেয়র শোভনবাবু পুর-কমিশনারকে ওই ব্যাপারে পদক্ষেপ করতে বলেন। ঠিক হয় এ বার থেকে কর মূল্যায়ন দফতরে তিন জন চিফ ম্যানেজারকে দায়িত্ব দেওয়া হবে ওই দফতরের। সেই মোতাবেক এ দিন সন্ধ্যায় পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ জানান, ভাস্কর ঘোষকে সরিয়ে সেখানে তিন জন চিফ ম্যানেজারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। টলিট্যাক্স ও সাউথের দায়িত্ব নিচ্ছেন ভাস্কর ভট্টাচার্য, উত্তরের দায়িত্বে যাচ্ছেন শৌভিক শিকদার এবং সংযোজিত এলাকার দায়িত্ব পাচ্ছেন সহেলী মুখ্যোপাধ্যায়। আর চিফ ম্যানেজার (লাইসেন্স) সহেলী মুখোপাধ্যায়ের জায়গায় পাঠানো হচ্ছে ভাস্কর ঘোষকে। একই সঙ্গে ওই জমিকে ফের জলাভূমির চরিত্র ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, এলাকায় কর আদায়ের সুবিধার্থে বেশ কয়েক বছর আগে পুরসভার কর মূল্যায়ন দফতরে একাধিক চিফ ম্যানেজার ছিলেন। পরে সেই প্রথা ভেঙে দিয়ে এক জনকে কর চিফ ম্যানেজার পদে রাখা শুরু হয়। তৃণমূল বোর্ড ক্ষমতায় আসার পরেই ওই প্রথা ফের চালু করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন একাধিক মেয়র পারিষদ। কিন্তু করা যায়নি। কসবা মিউটেশন-কাণ্ডের পরে ফের সেই বিষয়ে উদ্যোগী হন একাধিক মেয়র পারিষদ। তাঁদের বক্তব্য, কলকাতার এলাকা বেড়েছে। পুরসভার প্রধান আয়ের উৎস কর আদায়। তাই ওই দফতরে তিন জন চিফ ম্যানেজার থাকলে কাজের গতি বাড়বে বলে মনে করেন তাঁরা।
যদিও শুধু দফতর বদলি করেই জড়িতদের যথাযোগ্য শাস্তি দেওয়া হল বলে মনে করেন না পুর-প্রশাসনের কেউ কেউ। তাঁদের মতে, টলিট্যাক্সে এক ডেপুটি অ্যাসেসরের আমলেই সবচেয়ে বেশ বেআইনি ঘটনা ঘটেছে। কিছু দিন আগেই তাঁকে অন্য দফতরে বদলি করা হয়েছে। তাই কসবা-কাণ্ডের জন্য কোনও শাস্তি তাঁকে পেতেই হল না বলে মনে করছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy