Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

ছবির হাত ধরেই হাঁটতে শিখবে স্বপ্ন

সমস্যার সমাধানে সম্প্রতি মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক থেকে শংসাপত্র পাওয়া এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে সর্বশিক্ষা মিশন। প্রথমে কসবা, বালিগঞ্জ এবং লেক এলাকার ১২টি স্কুলকে এই আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। ৯, ১১, ১২ ও ১৭ নম্বর সার্কেলের মধ্যে কসবা প্রাথমিক বিদ্যালয়, পরেশনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিকাপুর আরএফপি স্কুল, মুরলীধর বালিকা বিদ্যালয়ের মতো বেশি পড়ুয়া থাকা ১২টি স্কুলকেই বেছে নেওয়া হয়েছে।

ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৭ ০২:২৪
Share: Save:

সুপ্রিয় তরফদার

পরিবার থেকে দূরে চলে যাওয়ার যন্ত্রণাকে রঙে-রেখায় ফুটিয়ে তুলেছিল পাঁচ বছরের ছোট্ট ঈশান। সেই খুদের খাতায় তার হাতে আঁকা অ্যানিমেশন দেখে তাক লেগে গিয়েছিল স্কুলের নিকুম্ভ স্যারের। হিন্দি ছবি ‘তারে জমিন পর’-এর সেই গল্পের মতো এ বার দক্ষিণ কলকাতার বাছাই করা কয়েকটি বাংলা মাধ্যমের প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়াদের অ্যানিমেশনের পাঠ দিতে উদ্যোগী হয়েছে সর্বশিক্ষা মিশন। কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে স্কুলে স্কুলে এই পাঠ দেওয়া শুরু হচ্ছে বলে জানান মিশনের এক কর্তা।

সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রের খবর, প্রতি বছরই মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক প্রতিটি রাজ্যের কয়েক জন শিক্ষককে সৃজনশীলতার নানা রকম পাঠ দেয়। হাতের আঙুলের ছায়ার সাহায্যে বিভিন্ন জীবজন্তুর ছবি ও ঘটনাকে কী ভাবে প্রকাশ করা যায়, তারও প্রশিক্ষণ দেওয়া হত তাঁদের। কম্পিউটার ছাড়াও শুধুমাত্র খাতায়-কলমে কী ভাবে অ্যানিমেশন তৈরি করা যায়, শিক্ষকদের শেখানো হত সেটাও। উদ্দেশ্য একটাই, তাঁরা যাতে স্কুলে গিয়ে পড়ুয়াদের তা শেখান। কিন্তু মিশনের এক কর্তার দাবি, বহু ক্ষেত্রেই স্কুলের পড়ুয়াদের শিক্ষকেরা সেই পাঠ আর দিতেন না।

সমস্যার সমাধানে সম্প্রতি মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক থেকে শংসাপত্র পাওয়া এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে সর্বশিক্ষা মিশন। প্রথমে কসবা, বালিগঞ্জ এবং লেক এলাকার ১২টি স্কুলকে এই আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। ৯, ১১, ১২ ও ১৭ নম্বর সার্কেলের মধ্যে কসবা প্রাথমিক বিদ্যালয়, পরেশনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিকাপুর আরএফপি স্কুল, মুরলীধর বালিকা বিদ্যালয়ের মতো বেশি পড়ুয়া থাকা ১২টি স্কুলকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি স্কুলের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকও সেরে ফেলেছেন মিশনের কর্তারা।

কী কী শেখানো হবে?

সর্বশিক্ষা মিশনের এক কর্তা জানিয়েছেন, ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কয়েকটি দল গড়ে দেবে। সেই সব দলের সদস্যেরা ১২টি স্কুলে গিয়ে শিক্ষক এবং পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ দেবেন। কোনও ঘটনাকে কী ভাবে ছবির মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়, তা শেখানোর পাশাপাশি বিষয়টিকে মনোগ্রাহী করার উপরেও জোর দেওয়া হবে বলে জানান ওই কর্তা। শিক্ষার অধিকার আইন (২০০৯) অনুযায়ী, স্কুল থেকে এই পরিষেবা পাওয়া শিশুদের অধিকারের মধ্যে পড়ে। ওই প্রকল্পের ফলে সেটাই সুরক্ষিত হবে বলে মত একাধিক শিক্ষকের।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কম্পিউটারের থেকে খাতায়-কলমে প্রশিক্ষণ শিশুদের বুদ্ধির বিকাশে অনেক বেশি সহায়ক। তাই হাতে ধরে খাতায়-কলমে অ্যানিমেশনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে এক দিকে যেমন বুদ্ধির স্বাভাবিক বিকাশ ঘটবে, অন্য দিকে ২০০৯ সালের আইন অনুযায়ী শিশুর সৃজনশীলতার শর্তও পূরণ করা হবে। তা হলে কলকাতার সমস্ত স্কুলকে এই আওতায় আনা গেল না কেন?

সর্বশিক্ষা মিশনের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘যে সামান্য পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ হয়েছে, তা দিয়েই আপাতত কাজ চালানো হচ্ছে। এর পরে ফের অর্থ পাওয়া গেলে অন্য স্কুলকেও এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কোনও রকম ভেদাভেদের সম্ভাবনা নেই।’’ বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাতেও এই ধরনের সুযোগ রয়েছে। তবে সব ক্ষেত্রে তার ঠিকঠাক প্রয়োগ হয় না। এটা হওয়া উচিত। শিশুদের চরিত্র গঠনে এই ধরনের প্রশিক্ষণ সাহায্য করে। তবে প্রত্যেক শিশু যাতে এর আওতায় আসে, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE