Advertisement
০১ এপ্রিল ২০২৩
Red Light Area

Sonagachi: সোনাগাছিতে কাস্টমার কেয়ার ডেস্ক, মাস্ক পরে কি মিলন সম্ভব? প্রশ্ন শবনমদের মনে

শুধু ক্রেতাদের জন্য নয়, যৌনকর্মীদেরও করোনাকালে নানা নতুন বিধি মেনে চলতে হচ্ছে। তবে সেই নিয়ম মানা সহজ নয়।

কলকাতার যৌনপল্লি।

কলকাতার যৌনপল্লি। ফাইল চিত্র

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২১ ১৪:৩৪
Share: Save:

করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউ অনেকটাই ক্ষতি করে দিয়েছে কলকাতার লাল আলোর পাড়া সোনাগাছির। ব্যবসার ক্ষতি তো হয়েছেই। উপরন্তু করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এই পাড়ার অনেক বাসিন্দা। তৃতীয় ঢেউ আসার আগে তাই আরও সতর্ক শহরের অন্যতম বৃহৎ নিষিদ্ধপল্লি সোনাগাছি। রাজ্য জুড়ে যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি’ সোনাগাছি তো বটেই গোটা, রাজ্যের সব যৌনপল্লি এলাকাতেই ‘কাস্টমার কেয়ার ডেস্ক’ খোলার পরিকল্পনা করেছে দুর্বার।

Advertisement

সোনাগাছিতে ইতিমধ্যেই এমন দু’টি ডেস্ক খোলা হয়েছে। আগামী দিনে সেই সংখ্যা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন সংস্থার মুখপাত্র মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায়। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা শুরুতে পাঁচটি ডেস্ক খোলার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু তার মধ্যে দু’টি চালানো সম্ভব হচ্ছে। আসলে লকডাউন পরিস্থিতি চলায় আমাদের কর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবকরাও ঠিকঠাক কাজে আসতে পারছেন না।’’

কী কাজ করছে এই ডেস্ক? দুর্বারের সদস্যরা সম্ভাব্য কাস্টমারদের থার্মাল গানের মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা মাপার পরেই পল্লিতে ঢুকতে দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে তাঁদের মাস্ক পরা রয়েছে কিনা, স্যানিটাইজারে হাত ধুয়েছেন নিয়েছেন কিনা, তা-ওপরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তবে কাজের কিছু সমস্যাও হচ্ছে। দুর্বারের এক সদস্যের কথায়, ‘‘এখানে যাঁরা আসেন, সবাই যে কাস্টমার তা নয়। আবার অনেকে কাস্টমার হলেও সেটা বলতে চান না। আমরা যথাসম্ভব সকলকে পরীক্ষা করছি।’’

শুধু কাস্টমারদেরই নয়, যৌনকর্মীদেরও করোনা নিয়ে নিয়মবিধি মেনে চলার অনুরোধ করেছে দুর্বার। কলকাতায় করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই এলাকা ধরে ধরে নিয়মিত সচেতনতা শিবির করা হয়েছে। করোনাকালের নিয়মে বলা হয়েছে, এক সঙ্গে একাধিক কাস্টমারকে ঘরে নেওয়া যাবে না। ঘর সব সময় স্যানিটাইজ করতে হবে। প্রত্যেক কাস্টমারবিদায় নেওয়ার পর যৌনকর্মীদের স্নান করা বাধ্যতামূলক। বিছানার চাদরও বদলাতে হবে। আর কাস্টমার যতক্ষণ ধরে থাকবেন, ততক্ষণ মাস্ক পরে থাকতেই হবে। কাস্টমারকেও সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকতে বাধ্য করতে হবে।

Advertisement

এত সব নিয়ম কি যৌনকর্মীরা মানছেন? মসজিদ বাড়ি লেনের বাসিন্দা যৌনকর্মী শবনমের (নাম পরিবর্তিত) বক্তব্য, ‘‘প্রাণের দায়ে মানতে হচ্ছে ঠিকই। এত নিয়ম মানা সত্যিই কঠিন। তবে এখন কাস্টমার এতটাই কমে গিয়েছে, যে সমস্যা হচ্ছে না। তবে মাস্ক নিয়ে মুশকিল কাটছে না।’’ শবনম জানান, করোনা পরিস্থিতিতে যে কাস্টমাররা আসছেন তাঁদের বেশিরভাগই অসেচতন শ্রেণির। তাঁর কথায়, ‘‘যখন কন্ডোম ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল, তখনই অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল। অনেক কাস্টমার তো এখনও মানতে চায় না। আর মাস্ক তো একটু পরেই সরে যায়। সত্যিইতো, মাস্ক পরে কি মিলন সম্ভব! তবু প্রাণের দায়ে চেষ্টা করতে হচ্ছে।’’

করোনাকালে অনেকটাই ফাঁকা কলকাতার এই পাড়া। দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিট, অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিট, শেঠবাগান, রামবাগান— সব গলিই অনেক খালি হয়ে গিয়েছে। মহাশ্বেতার হিসেব মতো এই পাড়ার স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ১০ হাজারের মতো। এর পরে কমপক্ষে তিন হাজার কর্মী শহরতলি থেকে যাতায়াত করেন। এর পরেও হাজার তিনেক ‘ফ্লাইং’ (যাঁরা অন্য জায়গা থেকে কাস্টমার নিয়ে এই পাড়ায় এসে ঘণ্টা হিসাবে ঘরভাড়া নেন) কর্মী রয়েছেন। লকডাউন পরিস্থিতিতে ‘ফ্লাইং’ এবং শহরতলি থেকে কেউই আসছেন না। স্থায়ী বাসিন্দাদের অনেকেই বাজার মন্দা হওয়ায় চলে গিয়েছেন। সব মিলিয়ে সোনাগাছিতে যৌনকর্মীর সংখ্যা এখন অর্ধেকের কম হয়ে গিয়েছে। মহাশ্বেতার কথায়, ‘‘শুধু কলকাতার হিসেব দেখলেই হবে না। রাজ্যের লক্ষাধিক মেয়ে করোনাকালে অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে রয়েছে। আমাদের উদ্যোগ ছাড়াও কিছু বেসরকারি ত্রাণ, সরকারি সাহায্য মিলেছে। কিন্তু তাতে সমস্যা পুরোপুরি মেটেনি।’’

সোনাগাছিতেই দীর্ঘদিন দালালের কাজ করতেন শ্যাম। তিনি এখন সোদপুর এলাকায় সাইকেলে ঘুরে ঘুরে মাস্ক বিক্রি করেন। শ্যামের কথায়, ‘‘পাড়া এখন আর আগের মতো নেই। প্রথম লকডাউনে অনেকে আটকেছিল। খুব কষ্ট গিয়েছে তখন। ট্রেন চালু হতেই যে যেদিকে পারে চলে গিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.