বিপদ: আতঙ্কিত আবাসিকেরা। বুধবার, হাওড়ায়। নিজস্ব চিত্র
আবাসনে লেগেছে আগুন। কিন্তু সময় হয়ে এসেছে পরীক্ষার। এমনই আতঙ্কের মাঝে দেড়তলার চাতালের জানলা দিয়ে ঝাঁপ দিল এক আইএসসি পরীক্ষার্থী। বুধবার ছিল তার ইংরেজি পরীক্ষা। বেরোনোর সময়েই হঠাৎ আবাসনের মিটার বক্সে আগুন লেগে চার দিক ধোঁয়ায় ভরে যায়। যাতায়াতের রাস্তাতেই দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে আগুন। ফলে নীচে নেমে যাওয়ার উপায় ছিল না ওই পরীক্ষার্থী-সহ অন্য আবাসিকদেরও।
এ দিন সকালে এমনই পরিস্থিতিতে আটকে পড়ে আতঙ্ক ছড়ায় হাওড়ার একটি পাঁচতলা আবাসনের বাসিন্দাদের মধ্যে। ওই পরীক্ষার্থীর মতো ন’বছরের ছেলেকে নিয়ে রীতিমতো ঝুঁকি নিয়ে চারতলা থেকে গ্রিল বেয়ে দোতলা পর্যন্ত নেমে আসেন আর এক আবাসিকও। তবে পরে তাঁকে স্থানীয়েরা মই দিয়ে নামিয়ে আনেন। পুলিশ অবশ্য জানায়, আগুন শুধু মিটার বক্সেই ছড়িয়ে ছিল। ফলে আতঙ্ক ছড়ালেও বড় দুর্ঘটনা কিছু ঘটেনি। এমনকী, আগুন নিভেও যায় কম সময়েই।
হাওড়ার আন্দুল রোডে দানেশ শেখ লেনের উপরের ওই আবাসনে বাসিন্দারা জানান, এ দিন সকাল সওয়া ১১টা নাগাদ আচমকাই একতলায় একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। কয়েক জন বাসিন্দা নীচে সিঁড়ির কাছে নেমে দেখেন মিটার বক্সে আগুন ধরেছে। ক্রমশ সেই আগুন বাকি মিটারগুলিতে ছড়াতে শুরু করে। চারদিক কালো ধোঁয়ায় ভরে যায়। মোম বিশ্বাস নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমরা নীচে নামতে না পেরে ভয়ে সকলে উপরে উঠে যাই। আগুন ছড়াতে শুরু করলে কী যে করব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।’’ বাসিন্দারা জানান, আগুনের খবর ছড়াতেই স্থানীয়েরা এসে বালি নিয়ে মিটার বক্সের উপরে ছড়াতে শুরু করেন। তাতে আগুন নিভলেও ধোঁয়ায় চারদিক ভরে যায়। একতলা থেকে ধোঁয়া উঠে যায় উপরে। এমনকী, আবাসনের চারদিকেও কালো ধোঁয়া ভরে যায়। ঘটনার বেশ কিছুক্ষণ পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের তিনটি ইঞ্জিন। আসে সিইএসসি-ও। ততক্ষণে অবশ্য প্রতিবেশীরা বালি দিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। স্থানীয় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি এসে কেটে দেন বিদ্যুৎ সংযোগও। প্রাথমিক ভাবে দমকলের অনুমান, শর্ট সার্কিটের কারণেই মিটার বক্সে আগুন লেগেছিল। স্থানীয় কাউন্সিলর তথা হাওড়া পুরনিগমের চেয়ারম্যান অরবিন্দ গুহ এ দিন বলেন, ‘‘দু’মাস ধরে রাস্তায় যানজট হচ্ছে। সে কারণেই আজ দমকল পৌঁছতে কিছুটা দেরি হয়েছে। যানজটের বিষয়ে পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।’’
জ্বলছে মিটার বক্স।
এ দিন সন্ধ্যায় কৃষ্ণকুমার সারাওগী নামে ওই পরীক্ষার্থী জানায়, আগুন লাগার পরে নীচে নামতে গিয়ে কালো ধোঁয়ায় তার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হতে শুরু করে। তার কথায়, ‘‘কী করে পরীক্ষা দিতে যাব, বুঝতেই পারছিলাম না। শেষে ঝাঁপ দিলাম। তবে পরীক্ষাকেন্দ্র একটু দূরে হলে আজ হয়তো পৌঁছতে পারতাম না।’’
ওই আবাসনেই চারতলায় থাকেন অরিন্দম বসু। গত মঙ্গলবার তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। ফলে বাড়িতেই ছিলেন এ দিন। ক্রমশ চার দিক ধোঁয়ায় ভরে যেতে দেখে আতঙ্কে ন’বছরের ছেলেকে পিঠে চাপিয়ে নীচে নামার সিদ্ধান্ত নেন তিনিও। পরে তিনি বলেন, ‘‘ছেলেকে চেপে ধরতে বলে আমি কার্নিস টপকে গ্রিল বেয়ে নামতে শুরু করি। দোতলা পর্যন্ত নামার পরে পাড়ার ছেলেরা মই লাগিয়ে আমাদের নামিয়ে আনেন।’’
অরিন্দমবাবুর মেয়ে অবন্তীরও এ দিন আইএসসি পরীক্ষা ছিল। কালো ধোঁয়ার মধ্যেই কোনও মতে পরীক্ষা দিতে বেরোয় সেও। পরীক্ষা কোনও মতে দিতে পারলেও রাত পর্যন্ত আতঙ্ক কাটেনি অবন্তীর। চোখমুখে ভয়ের ছাপ নিয়েই চলছে পরের পরীক্ষার প্রস্তুতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy