Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সল্টলেক আমরি

খোঁজ শুরু হতেই মিলিয়ে গেল বাড়তি টাকার দাবি

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’দিন আগেই টাউন হলের বৈঠকে প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন। বলেছিলেন, কিছু বেসরকারি হাসপাতাল রোগী ভর্তির সময়ে ‘প্যাকেজ’ যা বলছে, পরে চূড়ান্ত বিলে সেই পরিমাণ অনেক ক্ষেত্রেই বেড়ে যাচ্ছে।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৫২
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’দিন আগেই টাউন হলের বৈঠকে প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন। বলেছিলেন, কিছু বেসরকারি হাসপাতাল রোগী ভর্তির সময়ে ‘প্যাকেজ’ যা বলছে, পরে চূড়ান্ত বিলে সেই পরিমাণ অনেক ক্ষেত্রেই বেড়ে যাচ্ছে। এ বার প্যাকেজ ছাড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটল সল্টলেকের আমরি হাসপাতালে। বিপাকে পড়েছেন কলকাতা পুলিশের হোমগার্ড অদিতি রায়। সিঙ্গুরের বাসিন্দা অদিতি স্বরাষ্ট্র দফতরের কমিশনার স্বপন পালের অধীনে কর্মরত। চিকিৎসার খরচ মেটাতে পারছেন না বলে তাঁর মাকে ওই হাসপাতাল থেকে ছাড়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ অদিতির। নবান্নের খবর, স্বরাষ্ট্রসচিব মলয় দে-ও বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার জন্য স্বাস্থ্য দফতরে অনুরোধ করেন। অদিতির অভিযোগ, তার পরেও প্যাকেজ অতিরিক্ত বকেয়া টাকা না মেটালে রোগীকে ছাড়া হবে না বলে জানায় আমরি। বিষয়টি জানার পরে আনন্দবাজার খোঁজখবর শুরু করতেই তড়িঘড়ি নড়ে বসেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগীর বাড়ির লোকদের জানিয়ে দেওয়া হয়, বিমার বাইরে কোনও বাড়তি টাকা দিতে হবে না।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পড়ে গিয়ে কব্জি ভেঙে যায় অদিতির মা চম্পা রায়ের। কলকাতা পুলিশের চিকিৎসা বিমার আওতায় তাঁকে সল্টলেক আমরিতে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকেরা ২১ ফেব্রুয়ারি চম্পাদেবীর অস্ত্রোপচার হয়। অদিতির অভিযোগ ছিল, ‘‘২৩ তারিখ ছেড়ে দেওয়ার সময়ে হাসপাতাল ৪৪ হাজার টাকা দাবি করে। সেই টাকা দিতে পারিনি বলে ডাক্তার ছুটি দেওয়া সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার আমার মাকে ছাড়া হয়নি।’’ অদিতির অভিযোগ, মাকে ভর্তি করার পরে অস্ত্রোপচার করতেই সাত দিন কেটে যায়। বলা হয়, অপারেশনের খরচ ২৮ হাজার, প্লেট বসাতে ৩৫ হাজার। সব মিলিয়ে ৬৩ হাজার টাকা। কিন্তু ছুটির বিলে ধরানো হয় এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে বিমা সংস্থা অনেকটা দিয়ে দেয়।

আরও পড়ুন: ১৮ হাজারের ওষুধ, প্রশ্নের মুখে বিল নামল পাঁচ হাজারে

উপায়ান্তর না দেখে এর পরে নবান্নে স্বরাষ্ট্রকর্তাদের কাছে দরবার করেন তিনি। সূত্রের খবর, স্বরাষ্ট্রসচিবের অনুরোধে স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী হস্তক্ষেপ করেন। স্বাস্থ্য দফতরের হস্তক্ষেপের কথা স্বীকার করে আমরির (সল্টলেক) জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশনস্) মৌতালি ভট্টাচার্য শুক্রবার দুপুরে বলেন, ‘‘১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চম্পাদেবী ভর্তি। তাঁর বিবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। অপারেশন হয়েছে। বিমা সংস্থা যেটুকু মিটিয়েছে, তার পরেও ৫৫ হাজার টাকা বাকি ছিল।’’ তাঁর বক্তব্য ছিল, স্বাস্থ্যভবনের অনুরোধে প্রথমে ১০ হাজার, পরে আরও পাঁচ হাজার টাকা কমানো হয়। বাকি ৪০ হাজার টাকা চম্পাদেবীর আত্মীয়দের মিটিয়ে দিতে বলা হয়।

ওই বিল যদি সামান্য রোজগেরের পরিবার মেটাতে না পারেন? ‘‘হাসপাতালে রোগীর চাপ রয়েছে। একটা বেড আটকে থাকুক, আমরা চাই না। কিন্তু বকেয়া না মেটালে রোগীকে ছাড়া যাবে না।’’— স্পষ্ট উত্তর দেন মৌতালিদেবী। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, বৃহস্পতিবার ছুটি হয়ে যাওয়ার পরেও চম্পাদেবীর পরিবার বকেয়া মিটিয়ে তাঁকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন না। উল্টে অন্য রোগীদের কাছে গল্পগাছা করে পরিস্থিতি ঘোরালো করছেন।

অদিতি বলছেন, ‘‘টাকা মেটাতে না পারায় দিনের বেলা হাসপাতাল ছুটি দেয়নি। রাতে তারাই ডেকে বলে, পুরো টাকা দিতে না পারলে রোগী নিয়ে বাড়ি চলে যান।’’3
রোগী কখন চলে গেলেন, ‘জানলই না’ আর জি কর
পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

এক হাসপাতাল থেকে রোগীর আত্মীয়বন্ধুরা তাঁকে বন্ড সই করে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে চান। আইনত তাতে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সই হয়ে গেলে রোগীকে ছাড়তে দেরি হওয়ারও কথা নয়। অথচ, সেটুকু করতেই আরজিকর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কয়েক ঘণ্টা সময় নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

শুধু তা-ই নয়, রোগী যে কখন হাসপাতাল থেকে চলে গিয়েছেন সেই খবরও নাকি কেউ রাখেননি! এই অভিযোগ তুলেছেন খোদ শাসক দলের বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। তবে রোগীকে ছাড়তে দেরির কথা মানলেও রোগী তাঁদের অজান্তে চলে গিয়েছেন এ কথা মানছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

রোগী নাজিরউদ্দিন ওরফে চাঁদু সব্যসাচী-অনুগত হিসেবে পরিচিত এবং হাতিয়াড়া অঞ্চলের স্থানীয় তৃণমূল নেতা। বৃহস্পতিবার দুপুরে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য গত বৃহস্পতিবার রাতে সব্যসাচীবাবু ছাড়াও একাধিক নেতা-মন্ত্রীর ফোন গিয়েছিল আরজিকর কর্তৃপক্ষের কাছে। তাতেও রোগীকে ছাড়া হয়নি বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত রোগীর অবস্থা খারাপ হচ্ছে দেখে হাসপাতালের অনুমতির অপেক্ষা না করেই রোগীকে উঠিয়ে নিয়ে যান বাড়ির লোক। অভিযোগ উঠেছে, এক জন রোগীকে যে হাসপাতালের শয্যা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সে দিকেও হাসপাতালের কেউ নজর রাখেননি।

প্রশ্ন উঠছে, প্রথম সারির সরকারি মেডিক্যাল কলেজে কর্মসংস্কৃতি এবং রোগী নিরাপত্তার যদি এই হাল হয়, তা হলে মানুষ কোথায় একটু নিশ্চিন্ত হবে? নেতা-মন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠদের এতটা হেনস্থা হতে হলে প্রভাব-পরিচিতিহীন সাধারণ গরিব মানুষকে কী পরিমাণ হেনস্থা হতে হয় সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে।

সব্যসাচীবাবুর কথায়, ‘‘রোগী চলে যাওয়ার প্রায় ঘণ্টা তিনেক পরে ডেপুটি সুপার পরিচয় দিয়ে এক জন আমাকে ফোন করেন। তিনি জানান, একটি নথি মিলছিল না বলে রোগীকে ছাড়তে দেরি হচ্ছিল। এখন সেটা পাওয়া গিয়েছে ফলে দ্রুত তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে। অথচ রোগী তার বহু আগে আরজিকর থেকে চলে গিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গিয়েছেন। চিকিৎসাও শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘নাজির আমাদের দলের পুরনো নেতা। চিকিৎসার বিষয়ে ওঁর পাশে দাঁড়াতে গিয়ে এমন খারাপ অভিজ্ঞতা হবে ভাবিনি।’’

আরজিকরের অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যালের কথায়, ‘‘রোগীকে ছেড়ে দিতে দেরি হচ্ছিল কারণ, রোগীর বেড টিকিট নিয়ে এক জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী স্টোর-এ ওষুধ আনতে গিয়েছিলেন। সেখানে বেড টিকিট কোনও ভাবে হারিয়ে গিয়েছিল। তার মধ্যে আবার স্টোরের নার্সের ডিউটি পরিবর্তন হয়।’’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিন্তু দাবি করেছেন, বেড টিকিট খুঁজে পাওয়ার পরে রাত ১০টা ২০ মিনিটে মহম্মদ সেলিম নামে এক জন বন্ডে সই করেন, তার পর রাত সাড়ে দশটায় রোগী হাসপাতাল ছাড়ে। সেই সময়েই বিধায়ককে ফোনে জানানো হয় যে, রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

রোগীর পরিবার এবং সব্যসাচীবাবু কিন্তু অন্য দাবি করছেন। আরজিকর হাসপাতাল মহম্মদ সেলিম নামে যে ব্যক্তির কথা জানিয়েছে সেই সেলিমই রোগীর বন্ধু বলে পরিচয় দিয়ে বলেছেন, ‘‘আমরা বিকেল ৩টের সময় রোগীকে আরজিকরের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করি। ওঁরা কিছু ওষুধ আমাদের দিয়ে রোগীকে খাওয়াতে বলে। এর কিছু পরে রোগীর বমি শুরু হয়। ওঁরা রোগীর চিকিৎসায় কোনও আগ্রহ দেখাচ্ছিলেন না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সব্যসাচীবাবু, মালা সাহা, শশী পাঁজা-র ফোনেও যখন কাজ হয়নি তখন আমরা ভয় পেয়ে রোগীকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাব ঠিক করি। রাত সাড়ে আটটায় আমি নিজে বন্ডে সই করি। কিন্তু সাড়ে দশটা পর্যন্ত হাসপাতাল রোগীকে ছাড়েনি। তখন আমরা রোগীকে তুলে নিয়ে বাইপাসের ধারের এক বেসরকারি হাসপাতালে চলে যাই। কেউ আমাদের বাধা দেয়নি। আরজিকর যে দাবি করছে তা পুরোপুরি মিথ্যা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Further Investigation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE