Advertisement
E-Paper

শিল্পতালুক থেকে সরকারি অফিস, চোখ মোবাইলে

সকাল থেকেই সল্টলেকের রাস্তাঘাট ছিল সুনসান। এর মধ্যেই রাস্তা বা ফুটপাতে যাঁদের দেখা গিয়েছে, বেশির ভাগের চোখ ছিল মোবাইলের পর্দায়।

আর্যভট্ট খান ও কাজল গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০১:৫৬
আলোচনা: পাঁচ নম্বর সেক্টরের তথ্যপ্রযুক্তি তালুকেও বৃহস্পতিবার চর্চা ছিল ভোট নিয়েই। নিজস্ব চিত্র

আলোচনা: পাঁচ নম্বর সেক্টরের তথ্যপ্রযুক্তি তালুকেও বৃহস্পতিবার চর্চা ছিল ভোট নিয়েই। নিজস্ব চিত্র

তখন প্রথম রাউন্ডে এগিয়ে-পিছিয়ে থাকার গণনা চলছে। বেলা এগারোটা নাগাদ চায়ের দোকানের সামনের ভিড়টা যেন কিছুটা হলেও হঠাৎ বেড়ে গেল। কয়েক জন অফিস থেকে চা খেতে নেমে ফের মোবাইলের খবরেই আটকে গেলেন। কারও চোখমুখ উজ্জ্বল, তো কারও বা চোখমুখে হতাশা স্পষ্ট। এক মধ্যবয়স্ক অফিসকর্মী খানিকটা হতাশ কণ্ঠেই বললেন, ‘‘সকাল দেখেই বোঝা যাচ্ছে, দিনটা কেমন যাবে!’’ তখনও একেবারে হতাশ হতে রাজি ছিলেন না অনেকেই।

তবে সময় যত গড়িয়েছে গেরুয়া ঝড় যে এ রাজ্যে আছড়ে পড়ছে, তা বুঝতে পারছিলেন সল্টলেক, নিউ টাউনের বাসিন্দারা। সকাল থেকেই সল্টলেকের রাস্তাঘাট ছিল সুনসান। এর মধ্যেই রাস্তা বা ফুটপাতে যাঁদের দেখা গিয়েছে, বেশির ভাগের চোখ ছিল মোবাইলের পর্দায়। আর যাঁরা অফিসে বসেছিলেন, তাঁদের কেউ কেউ সেখানেই টিভি দেখেছেন, কেউ বা ল্যাপটপ খুলে অনলাইনে ভোটের খবর দেখেছেন।

এ দিন অবশ্য সরকারি অফিসগুলি কার্যত ফাঁকা ছিল। বিকাশ ভবন, ময়ূখ ভবনের প্রতিটি তলের কর্মীদের সংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক কম ছিল। বিকাশ ভবনের এক কর্মী বলেন, ‘‘ভোট পরবর্তী গোলমালের আশঙ্কায় অনেকেই আজ ছুটি নিয়েছেন। রাস্তায় গাড়িঘোড়াও খুব কম চলেছে। আমরা যাঁরা অফিসে এসেছি, তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যাব।’’ সল্টলেকের অফিস পাড়ার মতোই প্রায় একই রকম চিত্র ছিল নিউ টাউনের পাঁচ নম্বর সেক্টরের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পতালুকের।

তবে রাজ্য ও দেশের খবরের পাশাপাশি সল্টলেক ও নিউ টাউনের বাসিন্দারা তাঁদের বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী কাকলি ঘোষদস্তিদারের খবর জানতে স্বভাবতই বেশি আগ্রহী ছিলেন। প্রথম কয়েক রাউন্ড হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও বেলা যত বেড়েছে, কাকলিদেবীর জয়ের পথ অনেকটাই মসৃণ হয়েছে। রাজ্যের বেশ কিছু আসনে যখন তৃণমূলের পিছিয়ে থাকার খবর আসছিল, তখন ওই লোকসভা কেন্দ্রে এগিয়ে থাকায় কার্যত স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছিলেন তৃণমূলকর্মীরা। যদিও সার্বিক ফলের নিরিখে তেমন উচ্ছ্বাস ধরা পড়েনি কারও কথায়।

ভোটের আগে যাঁকে কেন্দ্র করে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল, সেই রাজারহাট নিউ টাউনের তৃণমূলের বিধায়ক তথা বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত অবশ্য ভোটের ফল নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘এই বিষয়ে যা বলার দলের মুখপাত্রই বলবেন।’’ বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসু বলেন, ‘‘বারাসত লোকসভা কেন্দ্রে কাকলিদি জয়ী হয়েছেন। তাঁকে অভিনন্দন। এই সময়েও দলের পাশে এসে যাঁরা দাঁড়ালেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানাই।’’

সূত্রের খবর, বারাসত লোকসভার অন্তর্গত বিধাননগর বিধানসভা কেন্দ্রে এ বারও একটা সময় পর্যন্ত তৃণমূলের থেকে বিজেপি ১৭ হাজারেরও বেশি ভোটে এগিয়ে ছিল। তবে সল্টলেকের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৯০ ভোটে তৃণমূল জয়ী হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় কাউন্সিলর নির্মল দত্তের। তৃণমূলের এক অংশের দাবি, এর আগেও বিভিন্ন ভোটে বিধাননগরে বিজেপি এগিয়েছিল। এ বারেও তা কেন বদলানো গেল না, তা মূল্যায়ন করে দেখতে হবে বলে জানান তৃণমূল নেতৃত্ব।

অন্য দিকে, রাজারহাট-নিউ টাউন বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে যথেষ্টই আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল তৃণমূলের অন্দরে। তৃণমূল সূত্রের দাবি, সেখানে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে সিন্ডিকেট নেতাদের ভাগ হয়ে যাওয়ায় আখেরে বিজেপির লাভ হবে বলে আশঙ্কা ছিল। তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, দলের পক্ষের অনুপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। যদিও আশঙ্কা উড়িয়ে ওই বিধানসভা থেকে ২০ হাজারেরও বেশি ভোটে তৃণমূল প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। বিধাননগরের ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায় জানান, শুধু এক থেকে পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডেই সাড়ে আট হাজারে এগিয়ে থেকেছে তৃণমূল। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে কে রয়েছেন, কে নেই, সেটা বিচার্য নয়। মানুষ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে ভরসা রেখেছেন। সেটাই বড় কথা।’’

এলাকার বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা রবীন মণ্ডলের আক্ষেপ, ‘‘এত কম ভোট পড়বে, তা ধারণার বাইরে! তৃণমূল যে বছর বিধানসভা ভোটে জিতেছিল, সে বারেও আমাদের প্রচুর ভোট ওদের দিকে গিয়েছিল।

এ বারেও নিজেদের ভোট আটকে রাখতে পারলাম না।’’ সল্টলেকের বিজেপি নেতা উমাশঙ্কর ঘোষদস্তিদার বলেন, ‘‘আমরা লড়াই করেছি। রাজ্যের অনেক জায়গায় সফল হলেও এখানে জিততে পারিনি। তবে দ্বিতীয় স্থানে আছি।’’

Election Results 2019 Lok Sabha Election 2019 লোকসভা ভোট ২০১৯ Election Result BJP TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy