Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

হাল্কা ঝোলের পথ ধরেছে পাইস হোটেলও

ধর্মতলার সিদ্ধেশ্বরী আশ্রমে যা ‘কবিরাজি ঝোল’, কলেজ স্ট্রিটের উৎকলীয় হেঁশেল স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেলে তা-ই ‘মেডিক্যাল ঝোল’।

সহজপাচ্য: কম মশলার রান্নায় সেজেছে গরমের মেনু। শনিবার, খিদিরপুরে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

সহজপাচ্য: কম মশলার রান্নায় সেজেছে গরমের মেনু। শনিবার, খিদিরপুরে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৭ ১৩:১৫
Share: Save:

মাথার উপরে পাখা ঘুরলেও, দরদরিয়ে ঘাম গড়াচ্ছে। মেয়েকে শহরে ডাক্তার দেখিয়ে গনগনে খিদে পেটে বজবজের ঘোষাল দম্পতির একটাই বাসনা, ‘কবিরাজি ঝোল’। পেঁপে-কাঁচকলাযোগে হাল্কা জিরে বাটা-আদা বাটা দেওয়া রুই মাছের ‘ঠান্ডা’ ঝোল গোটা পরিবার সাপ্টে খেয়ে উঠল।

ধর্মতলার সিদ্ধেশ্বরী আশ্রমে যা ‘কবিরাজি ঝোল’, কলেজ স্ট্রিটের উৎকলীয় হেঁশেল স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেলে তা-ই ‘মেডিক্যাল ঝোল’। আমাশার রোগী অবধি স্বচ্ছন্দে খেতে পারবেন।

লেক মার্কেটের তরুণ নিকেতনের কর্তা অরুণ দেবও বলছেন, হাল্কা ঝোল-ভাতটাই এখন ‘সেলিং লাইক হট কচুরিজ’। কলকাতার নাগাড়ে বৃষ্টিহীন নিদাঘ দিনে অতএব ঝোল-ভাতটাই ‘ইন থিং’। অসুস্থ, পেটরোগা, বয়স্ক— একলা বা অসহায় মানুষ, এমন অনেক ধরনের খাইয়েরই বছরভর ক্ষুন্নিবৃত্তির বন্দোবস্ত করে শহরের সাবেক পাইস হোটেলগুলি। তাই মেডিক্যাল বা কবিরাজি ঝোল মেনুতে বাঁধা। কিন্তু চড়া গরমে এই আয়োজনের বহর প্রায় দ্বিগুণ করতে হয়েছে। এর পরেই চাহিদা আম ডাল, অম্বল বা চাটনির। সঙ্গে দোসর শুক্তো, উচ্ছে চচ্চড়ি, লাউ বড়ির ডালনা, আম শোল কি আম রুই, দই মাছ, বড়ি-কালো জিরের পাবদা কি ট্যাংরা ঝোল। কদাচিৎ মুরগির ট্যালটেলে স্টুও।

বইপাড়ায় ‘প্রেসিডেন্সি বোর্ডিং হাউস’-এর নীচের মহল হোটেলে বেলা একটার পরে ঢুকে আম শোল চাইলে কিন্তু কর্ণধার সন্দীপ দত্ত আক্ষেপ করবেন। সব শেষ। ইশ্, দেরি করে ফেললেন মশাই!

খিদিরপুরের শতক ছুঁই ছুঁই ইয়ংবেঙ্গল হোটেলে আবার অন্য আফশোস। ‘‘একটু বেশি কাঁটাওয়ালা বাটা মাছের মৃদু টক আম-বাটার সমঝদারের কালেভদ্রে দেখা মেলে।’’— বললেন কর্ত্রী পৃথা রায়বর্ধন। পৃথা তবু যত্ন করে তাঁর মা কমল বসুরায়ের রেসিপি লেবুর রসযোগে ‘লেমন পাবদা’ রাঁধেন। গরমের দিনে আদর্শ। কিংবা সুগারের রোগীর কথা ভেবে আলুবিহীন ঝিঙে পোস্ত, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লাউ বড়ি, উচ্ছে দেওয়া তেতোর ডাল, কলাইয়ের ডালও করা হয়।

গরমে সার্বিক ভাবে গুরুপাক তেলমশলার ডায়েট থেকে কলকাতা মুখ ফিরিয়েছে বলা যাচ্ছে না। পাইস হোটেলে খাসির মাংসের চাহিদা কমলেও এখনও অনেকে চিংড়ির মালাইকারি খুঁজছেন। পৃথার অভিজ্ঞতা, ‘‘দূর মফস্‌সল থেকে ফ্যান্সি মার্কেটে আসা নিম্নবিত্ত বা শহুরে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির বঙ্গসন্তান, অনেকে, ধ্রুপদী বাঙালি রান্নার বৈচিত্র্য চেনেন না।’’

এই গরম সে-সবই চাখার সুযোগ করে দিচ্ছে। তরুণ নিকেতনের সুপারহিট পদ এখন নিম বেগুন বা লাবড়া। সিদ্ধেশ্বরীর কর্ণধার দেবযানী সেন বলছিলেন, এ সময়ে মোচা, লাউ, এঁচোড়ে চিংড়িটা এড়িয়ে চলি। গরমে মশলার বাজেট অনেকেই সিকিভাগ কমিয়ে এনেছেন। ঝিঙে, সজনে ডাঁটা, বেগুন, পেঁপে, রাঙা আলু, উচ্ছের বাজেট আবার অন্য সময়ের
চেয়ে দ্বিগুণ।

‘‘রাস্তার ভাজাভুজির থেকে বাঙালির পাঁচ পদ মেনুই স্বাস্থ্যকর!’’— মানছেন পুষ্টিবিশারদ রেশমি রায়চৌধুরী। তবে কিছু পুরনো হোটেলে ফ্রিজ নেই। পরিচ্ছন্নতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। এটা মাথায় রেখেই কব্জি ডোবানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE