সীতা ঘোষ
চিকিৎসকদের পরামর্শে মাকে সন্তানের মৃত্যুর কথা জানাননি পরিজনেরা। তবে এসএসকেএম হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ১১ নম্বর বেডে শুয়ে সীতা ঘোষ শুক্রবার বললেন, ‘‘আমার শরীর পুড়লেও তখন গুরুত্ব দিইনি। ওকে (পুত্র বিভাস বা বিল্টু প্রসঙ্গে) কী ভাবে বাঁচাব, সেটাই ভেবেছি। চেষ্টা করেও পারলাম না। আজ তো ওর বার্থডে!’’
নাগেরবাজারের কাজিপাড়ায় বোমা বিস্ফোরণে মঙ্গলবার দুপুরে মৃত্যু হয় আট বছরের বিভাস ঘোষের। সে দিন থেকেই হাসপাতালে সীতা। সেদিনের ঘটনার প্রসঙ্গ আসতেই ছলছল করে উঠল তাঁর চোখ। ক্ষীণ স্বরে জানালেন, গত মঙ্গলবার কাজের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ কানফাটানো শব্দের পর শরীরে জ্বালা শুরু হয়। তবে তখন জ্বালাযন্ত্রণাকে গুরুত্ব দেওয়ার বদলে পুত্রকে বাঁচানোই তাঁর লক্ষ্য ছিল। এ দিন দেওর দীপেঞ্জয়ের কাছে বিল্টুর খেলনার কথা জানতে চান সীতা। দীপেঞ্জয়ের কথায়, ‘‘বৌদি বলল, বিল্টুর ভিডিয়ো গেম কোথায়! ও তো তোমার কাছে চেয়েছিল। আমি বলেছি, বিল্টুকে দিয়ে দিয়েছি।’’
মায়ের মুখে ভাইয়ের জন্মদিনের উল্লেখ শুনেও প্রসঙ্গটি এড়িয়েই গিয়েছে বিভাসের দাদা বিকাশ। এ দিন দুপুরে মাকে খাইয়ে গিয়েছে সে। দমদমের কে কে হিন্দু অ্যাকাডেমির পড়ুয়া বিকাশ আগামী বছর মাধ্যমিক দেবে। সে প্রসঙ্গ তুলতে ছলছলে চোখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ করে রইলেন মা। আর একটি কথাও বললেন না।
সে দিনের ঘটনার পর থেকে এক কানে শুনতে পাচ্ছেন না সীতা। দু-একদিনের মধ্যে কানের চিকিৎসা শুরু হবে। এখনও তাঁর বাঁ হাতের ক্ষতস্থান থেকে তরল গড়ানোয় নতুন করে ব্যান্ডেজ করা হয়। সীতার সিটি স্ক্যান রিপোর্টে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকেরা। ইতিমধ্যেই একাধিক এক্স-রে হয়েছে তাঁর।
অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বিকাশের বাবা জন্মেজয়। তাঁর মন্তব্য, ‘‘না পারছি গিলতে, না পারছি কিছু বলতে।’’ এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ দমদম পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সঞ্জয় দাসকে ছাড়া কাউকে পাশে পাওয়া যায়নি বলে পরিবার সূত্রে দাবি। জন্মেজয় বলেন, ‘‘দিদি যদি আমাদের পাশে দাঁড়ান, পরিবারটা বাঁচে।’’