প্রতীকী ছবি।
দৃশ্য ১) বাড়ি ফিরতে গিয়ে বড় রাস্তা থেকে গলিতে ঢুকতেই বিপত্তি। রাস্তার দু’ধারে যেমন খুশি গাড়ি পার্ক করা। পাঁচ পথ পেরোতেই হিমসিম খেতে হল স্থানীয় বাসিন্দা অসীমবাবুকে।
দৃশ্য ২) আড্ডার পাট চুকিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন কয়েক জন প্রবীণ বাসিন্দা। রাস্তার ধারে ঝোপের মধ্যে দেখতে পেলেন, এক যুবক পড়ে রয়েছেন। বাসিন্দারা তাঁকে সুস্থ করার পরে জানতে পারলেন, ওই যুবক তাঁদের পাড়াতেই একটি গেস্ট হাউসে থাকেন।
এমন অজস্র উদাহরণ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সল্টলেকে। ব্লকের মধ্যে গজিয়ে উঠছে বিয়েবাড়ি এবং গেস্ট হাউস। সে সব জায়গায় এক সময়ে বাড়ির মালিকেরাই বসবাস করতেন। এখন অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাড়ির মালিক দেশের বাইরে থাকেন। আর বাড়িগুলি গেস্ট হাউস হিসেবে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বসতবাড়ি এমন বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করার তো নানা সমস্যা আছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরেই এমন চলছে। অথচ প্রশাসন নিশ্চুপ।
এত দিন পরে অবশেষে নড়েচড়ে বসেছে বিধাননগর পুর প্রশাসন। অনেক ক্ষেত্রেই নিয়মকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যে বিয়েবাড়ি এবং গেস্টহাউস চলছে, তা স্বীকার করে নিয়েছে বর্তমান পুরবোর্ড। পুর প্রশাসনের বক্তব্য, আবাসিক ও কর্মাশিয়াল প্লটে বাণিজ্যিক কাজ পরিচালনার নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে সেই নিয়ম ভাঙার অভিযোগ উঠেছে। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
দীর্ঘ দিন ধরেই বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাড়িগুলি বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহারের জন্য বৈধ অনুমতি রয়েছে কি না, তা জানা যায় না। যার ফলে বেশ কিছু সমস্যাও দেখা যায়।
সেই সব অভিযোগের যে সারবত্তা রয়েছে, সে কথা অবশেষে স্বীকার করে একটি ক্ষেত্রে এ বার পদক্ষেপও করেছে পুরসভা। সম্প্রতি বিধাননগর উত্তর থানা এলাকায় একটি বাড়িতে পয়ঃপ্রণালী, নিকাশি এবং জল সরবরাহের সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পুরসভার তরফে।
মেয়র সব্যসাচী দত্ত জানান, একটি বাড়ি বিয়েবাড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছিল। তদন্তে দেখা যায়, বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহারের জন্য পুরসভার প্রয়োজনীয় অনুমতি নেই। তাই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যদিও পুরসভা সূত্রের খবর, ওই বাড়ি ঘিরে যে অভিযোগ রয়েছে, তার জন্য নোটিস পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।
তা হলে পুরসভা কেন পদক্ষেপ করল? মেয়র জানান, পুরসভা পদক্ষেপ করতে পারবে না, এমন কোনও নির্দেশ কিংবা স্থগিতাদেশ আদালত দিয়েছে বলে তাঁর জানা নেই।
কিন্তু অভিযোগ জমা পড়লে তবেই পুরসভা জানতে পারবে কোন বাড়ি বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার হচ্ছে? পুরসভার নজরদারি কোথায়? বাসিন্দাদের একটি সংগঠনের কর্মকর্তা কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘দেরিতে হলেও পুরসভা পদক্ষেপ করেছে। প্রতি ওয়ার্ডে এমন অনৈতিক কাজ হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখুক প্রশাসন।’’
যদিও পুরসভা সূত্রে খবর, একটি নয়, এমন অনেক ক্ষেত্রেই দীর্ঘ দিন ধরে অভিযোগ উঠছে। সে ক্ষেত্রে কেন পদক্ষেপ করা হয়নি, তার সদুত্তর মেলেনি। তবে মেয়র জানান,অভিযোগ এলে দ্রুত পদক্ষেপ করা হচ্ছে। আর কোথায় কোথায় এমন হচ্ছে, খতিয়ে দেখা হবে। নিয়ম ভাঙলে পুরসভা আইন মোতাবেক পদক্ষেপ করবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy