আশি পেরোনো বৃদ্ধা সমস্ত শারীরিক সমস্যা উপেক্ষা করে রোজ আসছেন মহড়া দিতে। পড়াশোনার পাশাপাশি রোজ নাটকের সংলাপ মুখস্থে ব্যস্ত ১৮-র তরুণীও। উৎসাহে, উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছেন তাঁদের মতো আরও অনেকে। এঁরা সকলেই ক্যানসারকে জয় করে ফিরে এসেছেন জীবনের মূল স্রোতে। এ বার চাইছেন তাঁদের মতো আরও অনেকে সামিল হোন এই লড়াইয়ে। যে রোগের নাম শুনলেই ভয়ে সিঁটিয়ে যান মানুষ, এ বার সেই রোগের সূত্র ধরে হাত মেলাতে চলেছে দুই বাংলা!
ভারত ও বাংলাদেশের ক্যানসার চিকিৎসকদের উদ্যোগে সেরে ওঠা স্তন ক্যানসার রোগীরা এ বার এক যোগে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ শুরু করবেন কলকাতায়। অক্টোবর মাসটি স্তন ক্যানসার সচেতনতা মাস হিসেবে পালন করা হয়। সেই অক্টোবরের শুরুতেই দুই বাংলার চিকিৎসকেরা ক্যানসারজয়ীদের একত্রিত করে ‘এ পার বাংলা-ও পার বাংলা’ নামে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। এসএসকেএম হাসপাতালের ব্রেস্ট কেয়ার সেন্টার, অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্রেস্ট সার্জনস অফ ইন্ডিয়া এবং অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্রেস্ট সার্জনস অফ বাংলাদেশ-এর মিলিত উদ্যোগে এই বিশেষ প্রকল্পটি শুরু হবে।
হঠাৎ বাংলাদেশ কেন? সে দেশের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এ দেশের মতো বাংলাদেশেও এখনও ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা অনেক কম। পরীক্ষা করানোর ক্ষেত্রে মহিলাদের সঙ্কোচের কারণে সেখানে স্তন ক্যানসার ধরা পড়ছে অনেক দেরিতে। আর ধরা পড়ার পরে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিতেও অনেকটা সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। এমনকী কলকাতার একাধিক হাসপাতালেও বাংলাদেশ থেকে আসা ক্যানসার রোগীদের ভিড় থাকে, যাঁদের মধ্যে অনেকেরই রোগ ধরা পড়েছে বেশ দেরিতে। ফলে বহু ক্ষেত্রেই চিকিৎসকদের আর কিছু করার থাকে না। অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্রেস্ট সার্জনস অফ বাংলাদেশ বেশ কিছু দিন ধরেই এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ বার তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এসএসকেএম হাসপাতাল।
উন্নত দেশগুলিতে ক্যানসার নির্ণয়ের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে গত বেশ কয়েক বছর ধরেই। কিন্তু সেই খাতে বিপুল খরচ করেও ফল খুব বেশি আশাপ্রদ হয়নি। সেই কারণেই উন্নয়নশীল দেশগুলির ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের চেয়ে রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর উপরেই জোর দেওয়ার সুপারিশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। সচেতনতার ক্ষেত্রে নিজের স্তন পরীক্ষা করে টিউমারের অস্তিত্ব টের পাওয়া যেমন জরুরি, তেমনই রোগ ধরা পড়লে অবসাদ কাটিয়ে উঠে রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করাটাও জরুরি।
এসএসকেএমের ব্রেস্ট কেয়ার সেন্টারের প্রধান, শল্য চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার বলেন, ‘‘প্রথম পর্যায়ে ধরা পড়লে ক্যানসার যে সেরে যায়, এই বার্তা সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়াটা খুব জরুরি। এই কথাটা আমি ডাক্তার হিসেবে বললে সেটা মানুষ ততটা বিশ্বাস করবেন না, যতটা করবেন সেরে ওঠা মানুষেরা নিজেরা বললে। তাই এই উদ্যোগ। তা ছাড়া শুধু সেরে ওঠা নয়, রোগ ধরা পড়ার পরে চিকিৎসা চলাকালীনও নানা সঙ্কট তৈরি হয়। তখনও ক্যানসার রোগীদের মনের জোর বাড়ানোর জন্য ক্যানসার সার্ভাইভারদের ভূমিকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’’ ক্যানসার হওয়ার পরে আতঙ্কে চিকিৎসার জন্য ঘটিবাটি বিক্রি করার পর্যায়ে না পৌঁছে গোড়াতে তাকে রুখে দেওয়াটাই সবচেয়ে বড় মন্ত্র হওয়া উচিত বলে মনে করেন দীপ্তেন্দ্রবাবু।
কেমোথেরাপি নিয়ে চুল উঠে যাওয়ার পর সদ্য চুল গজানো শুরু হয়েছে যাঁদের, সে দিনের অনুষ্ঠানে তাঁরাও মঞ্চে উঠে গান গাইবেন। থাকবে নাচ, নাটকও। নিয়মিত মহড়ার মাধ্যমে সে দিনের জন্য ওঁদের প্রস্তুত করছেন যাঁরা, ‘দিশা’ নামে ক্যানসারজয়ীদের সেই সংগঠনের কর্ণধার চিকিৎসক অগ্নিমিত্রা গিরি সরকার বলেন, ‘‘এখানে যাঁরা আসেন, তাঁরা তত দিনে রোগটার খুঁটিনাটি জেনে গিয়েছেন। তাই রোগ নিয়ে আমাদের নতুন কিছু বলার থাকে না। আমরা কাউকে প্রচুর দিন বাঁচার কথাও বলি না। আমরা শুধু জীবনটাকে অর্থবহ করে তোলার কথা বলি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy