Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Murder

শাসন থেকে ‘মুক্তি’ পেতেই বাবাকে খুন, বলছে চার্জশিট

মায়ের মৃত্যুর পর থেকে বাবাই ছিলেন অভিভাবক। কিন্তু একমাত্র মেয়ের জীবনযাপন নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন তিনি।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২১ ০৬:৫৬
Share: Save:

মায়ের মৃত্যুর পর থেকে বাবাই ছিলেন অভিভাবক। কিন্তু একমাত্র মেয়ের জীবনযাপন নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন তিনি। বাবার শাসন মেনে নিতে পারত না মেয়েও। সেই কারণেই বাবা বিশ্বনাথ আঢ্যের (৫৬) হাত থেকে মুক্তি পেতে পরিকল্পনা করে তাঁকে আগুনে পুড়িয়ে খুন করেছিল মেয়ে পিয়ালি আঢ্য। খুনের আগে বাবাকে বেসামাল করতে মদ খাইয়েছিল সে। ওই ঘটনার তদন্ত শেষ করে আদালতে জমা দেওয়া চার্জশিটে এমনটাই জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রের খবর, চার্জশিটে পিয়ালির বিরুদ্ধে খুন-সহ একাধিক ধারায় অভিযোগ এনেছেন তদন্তকারীরা। ঘটনার ৮৮ দিনের মাথায়, গত বুধবার ব্যাঙ্কশাল
আদালতে ওই চার্জশিট জমা দেন উত্তর বন্দর থানার তদন্তকারীরা। ওই চার্জশিটে ৩৯ জন প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানের উল্লেখ করা হয়েছে।
একই সঙ্গে টিআই প্যারেডের (শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া) রিপোর্টও জমা দেওয়া হয়েছে চার্জশিটের সঙ্গে। তবে ফরেন্সিক রিপোর্ট এখনও না-মেলায় তা পরে অতিরিক্ত চার্জশিট আকারে জমা দেওয়া হবে বলে সূত্রের খবর।

গত ২১ মার্চ ভোরে উত্তর বন্দর থানা এলাকার চাঁদপাল জেটির কাছে একটি পার্কের ভিতর থেকে উদ্ধার হয় এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির অগ্নিদগ্ধ দেহ। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, দেহটি তপসিয়া থানা এলাকার ক্রিস্টোফার রোডের বাসিন্দা, পঞ্চান্ন বছরের বিশ্বনাথ আঢ্যের। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট থেকে পুলিশ জানতে পারে, বিশ্বনাথবাবুকে পুড়িয়ে খুন করা হয়েছে। মেয়ে পিয়ালিকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই তার কথায় অসঙ্গতি পান তদন্তকারীরা। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ২০ মার্চ রাতে বিশ্বনাথবাবু মেয়ের সঙ্গে চাঁদপাল জেটির কাছে এসেছিলেন। এর পরেই পুলিশ পিয়ালিকে গ্রেফতার করে। আগামী ২৪ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

চার্জশিটে পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৪ সালে মায়ের মৃত্যুর পরে বেলেঘাটার মামাবাড়ি থেকে চলে এসে বাবার সঙ্গে থাকতে শুরু করে পিয়ালি। কিন্তু মেয়ের জীবনযাপন নিয়ে অখুশি ছিলেন বিশ্বনাথবাবু। পিয়ালিকে যে কারণে মাঝেমধ্যে শাসন করতেন তিনি। তিতিবিরক্ত পিয়ালি শাসন থেকে মুক্তি পেতে বাবাকেই সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। সেই মতো ১৯ মার্চ মামাবাড়ি থেকে কেরোসিন জোগাড় করে সে। তার পরে বিশ্বনাথবাবুর কর্মস্থলে গিয়ে বাবার নাম করে টাকা নিয়ে আসে। পরদিন সকালে বাবাকে নিয়েই চাঁদপাল জেটির কাছে ওই পার্কে গিয়ে সব ঘুরে দেখে আসে। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, বাড়ি ফিরে বাবাকে জলের সঙ্গে মদ মিশিয়ে খাওয়ায় পিয়ালি। তার পরে সে দিনই রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ফের চাঁদপাল জেটির কাছে ওই পার্কে বাবাকে নিয়ে যায়। সেখানে বাবার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় পিয়ালি। তার পরে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ার ভান করে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তা সফল হয়নি।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গঙ্গার ধারের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ‘রেকি’ করার পরেই ওই পার্কটিকে বেছে নিয়েছিল পিয়ালি। কারণ, রাতের ওই সময়ে সেটি ফাঁকা থাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE