Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
এনআরএসে নিগ্রহ

মহিলা পুলিশের গায়ে হাত, তবু কেন হাত গুটিয়ে

সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হলে পুলিশ তেমন সক্রিয় হবে না, এটা প্রায় গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু খোদ পুলিশের গায়ে হাত পড়লেও লালবাজার কেন নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকবে? প্রশ্নটা ক্রমশ মাথা চাড়া দিচ্ছে পুলিশেরই অন্দরে। যার প্রেক্ষাপট গড়ে দিয়েছে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা। আলিপুর থানায় তৃণমূল সমর্থকদের হামলাবাজিতে মূল অভিযুক্ত তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা প্রতাপ সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগই লিপিবদ্ধ করেনি পুলিশ। সার্ভে পার্কে এক সার্জেন্টকে নিগ্রহ করে পার পেয়ে গিয়েছেন তৃণমূল কাউন্সিলর সঞ্জয় দাস।

শিবাজী দে সরকার ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৫ ০৪:৩৪
Share: Save:

সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হলে পুলিশ তেমন সক্রিয় হবে না, এটা প্রায় গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু খোদ পুলিশের গায়ে হাত পড়লেও লালবাজার কেন নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকবে?

প্রশ্নটা ক্রমশ মাথা চাড়া দিচ্ছে পুলিশেরই অন্দরে। যার প্রেক্ষাপট গড়ে দিয়েছে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা। আলিপুর থানায় তৃণমূল সমর্থকদের হামলাবাজিতে মূল অভিযুক্ত তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা প্রতাপ সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগই লিপিবদ্ধ করেনি পুলিশ। সার্ভে পার্কে এক সার্জেন্টকে নিগ্রহ করে পার পেয়ে গিয়েছেন তৃণমূল কাউন্সিলর সঞ্জয় দাস। লেকটাউনে ট্র্যাফিক পুলিশকে চড় মারলেও শাসকদলের সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করেনি। আবার গিরিশ পার্কে পুলিশের উপরে গুলিচালনায় মূল অভিযুক্ত গোপাল তিওয়ারির নাগাল পুলিশ তো পায়ইনি, উপরন্তু তাকে আড়াল করার জন্য সন্দেহের বৃত্তে লালবাজারেরই একাংশ।

এবং শহরের বুকে পুলিশ নিগ্রহের শেষ ঘটনাটি সম্পর্কেও লালবাজারের ‘নিস্পৃহতা’ দেখে বিশেষত মহিলা পুলিশকর্মীরা রীতিমতো নিরাপত্তার আশঙ্কায় ভুগছেন। কী রকম?

মানসিক ভারসাম্যহীন এক বৃদ্ধাকে রবিবার বিকেলে এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি করাতে নিয়ে যাওয়া মানিকতলা থানার তিন পুলিশকর্মীকে মারধর করা হয়েছিল। আঙুল ওঠে কিছু জুনিয়র ডাক্তারের দিকে। রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ অভিযোগ রুজু হয়, যদিও মহিলা পুলিশকর্মীর গায়ে হাত পড়া সত্ত্বেও শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের হয়নি। কেউ গ্রেফতারও হয়নি। এমতাবস্থায় নিচুতলার মহিলা পুলিশকর্মীদের অনেকের অভিমত, এনআরএসের জুনিয়র ডাক্তারেরা অধিকাংশ শাসকদলের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে পুলিশ হাত গুটিয়ে আছে। লালবাজারের কর্তাদের অবশ্য যুক্তি: নিগৃহীতদের বয়ানের ভিত্তিতেই মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার মধ্যে একটি জামিন-অযোগ্য ধারা। তা হলে কেউ গ্রেফতার হল না কেন?

লালবাজার-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য: ঘটনাকালে হাসপাতালের ইমার্জেন্সি আর ওটি-তে কারা কারা ডিউটিতে ছিলেন, তা জানতে রেজিস্টার চেয়ে পাঠানো হয়েছে। অন্য দিকে নিচুতলার প্রশ্ন, অভিযোগ নিতে এত দেরি করা হল কেন? কেনই বা তদন্ত করতে পুলিশ দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছাল না? এক মহিলা অফিসারের কথায়, ‘‘নিগৃহীতেরা অভিযুক্তদের চিনিয়ে দিলেই অনেক এগোনো যেত!’’ কিন্তু পুলিশের একটি মহলের আশঙ্কা, তথ্য চেয়ে সময় কাটানোর ফাঁকে অভিযুক্তদের বাঁচাতে নতুন কোনও ফন্দি বার হতে পারে। অভিযুক্তেরা আগাম জামিনের আর্জিও জানাতে পারে।

নিচুতলার অভিযোগ: জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশও শাসকদলের ছত্রচ্ছায়ায়। ‘‘একে তো স্বাস্থ্য দফতর মুখ্যমন্ত্রীর নিজের হাতে, তার উপরে তৃণমূলের এক দাপুটে নেতা দফতরের যাবতীয় কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর ভয়ে তাবড় আইপিএসরাও এগোতে পারেন না।’’— বলছেন এক অফিসার। প্রসঙ্গত এনআরএসেরই ছাত্রাবাসে কোরপান শাহ হত্যায় অভিযুক্ত কিছু হবু ডাক্তারকে আড়াল করার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের কিছু চিকিৎসক-নেতার বিরুদ্ধে।

এ বারও তার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কায় রয়েছে পুলিশের নিচুতলা। এক মহিলা পুলিশকর্মীর আক্ষেপ, ‘‘মহিলা পুলিশকে পিটিয়েও অভিযুক্তেরা বুক ফুলিয়ে ঘুরছে! সাধারণ মেয়েদের নিরাপত্তা আমরা দেব কী করে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE