Advertisement
E-Paper

খোঁজ মিলছে না মেট্রোর ৩ ঠিকা শ্রমিকের

মঙ্গলবার বিকেলে মাঝেরহাটে সেতু দুর্ঘটনার পরে খোঁজ মিলছে না তাঁদের কয়েক জনের।

আর্যভট্ট খান ও প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৪১
গাড়ি সমেত ভেঙে পড়েছে মাঝেরহাট ব্রিজ। —নিজস্ব চিত্র।

গাড়ি সমেত ভেঙে পড়েছে মাঝেরহাট ব্রিজ। —নিজস্ব চিত্র।

টালির চাল, দরমার বেড়া। ওঁদের আস্তানা।

সন্ধ্যার মরে যাওয়া আলোতেও আবছা মুখগুলোর উদ্বেগ স্পষ্ট ধরা পড়ছে। খালপাড়ের চৌখুপিগুলোর সামনে ঠায় বসে রয়েছেন তাঁরা। ওঁদের কেউ রানাঘাটের, কেউ কাকদ্বীপের, কেউ বা লালগোলার। অন্য দিন এই সময়ে উনুনে উনুনে রান্নার ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু আজ উনুনে আঁচ পড়েনি। কারণ, মঙ্গলবার বিকেলে মাঝেরহাটে সেতু দুর্ঘটনার পরে খোঁজ মিলছে না তাঁদের কয়েক জনের।

ওঁরা সকলেই ঠিকা শ্রমিক। মজুরি দিন গেলে সাড়ে তিনশো থেকে পাঁচশো টাকা। মেট্রো রেলের কাজ করছিলেন। মাঝেরহাট সেতু যেখানে ভেঙে পড়েছে, ঠিক তার নীচেই তাঁদের অস্থায়ী ডেরা। শ্রমিকদের দাবি, ভেঙে যাওয়া সেতুর নীচে চাপা পড়েছে শ্রমিকদের একটি ঘর। তার পর থেকেই নিখোঁজ তিন জন। শ্রমিকদের দাবি, বাপি নামে এক শ্রমিকের দেহও দেখেছেন তাঁরা। বাপির বাড়ি মুর্শিদাবাদের লালগোলা। পুলিশ জানিয়েছে, রাত পর্যন্ত জনা তিনেক ব্যক্তিকে উদ্ধার করা যায়নি। তবে কোনও শ্রমিকের মৃত্যুর খবর সরকারি ভাবে স্বীকার করা হয়নি।

আরও পড়ুন: ‘গাড়ি নিয়ে উঠতেই দুলে উঠল সেতুটা’

মাঝেরহাট সেতুর সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে মেট্রোর লাইন পাতার কাজ চলছে। তৈরি হচ্ছে কংক্রিটের খুঁটি। সেতুর নীচে খালপাড় ধরে শ্রমিকদের জন্য সারি সারি ঘর। একটা দোচালা বড় ঘরের মধ্যে ছোট ছোট খুপড়ি। কাকদ্বীপের কংসদেব হালদার জানালেন, গত দু’মাস ধরে তাঁরা সেখানেই রয়েছেন।

আরও পড়ুন:
প্রকাণ্ড সেতুটা ঝুলে রয়েছে ‘ভি’-এর আকারে
‘আমি ভাঙা সেতুর নীচে আটকে, বাঁচান ভাইজান’

বর্ধমানের রবি দাস কাজের তদারকি করেন। থাকেন শ্রমিকদের ঝুপড়িতেই। তিনি জানান, অন্য দিনের মতো বিকেলে পুরোদমে কাজ চলছিল। বেশির ভাগ শ্রমিকই কাজে ছিলেন। কেউ কেউ ছিলেন ঘরের মধ্যে। আচমকাই বিকট শব্দ। পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। রবি বলেন, ‘‘প্রথমে কিছু বুঝতে পারিনি। চারদিক ধুলো-ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছিল। তার পরেই চিৎকার-চেঁচামেচি। তাকিয়ে দেখি, সেতুর একটা অংশ ভেঙে পড়েছে।’’

রানাঘাটের মনোজ সরকার বলেন, ‘‘ব্রিজ ভেঙে পড়েছে শোনার পরেই ও দিকে ছুট লাগাই। কাছে যেতেই বুক ধড়াস করে ওঠে। সর্বনাশ, ওখানেই তো আমাদের একটা ঘর ছিল। পুরো ঘরটাই তো ভেঙে পড়া সেতুর নীচে।’’

শ্রমিকেরা জানান, কাছে গেলেও সেই মুহূর্তে কিছু করার ছিল না। কারণ, ঝুপড়ি ঘরটি তখন চাপা পড়ে গিয়েছে। কিছু ক্ষণের মধ্যে পুলিশ পৌঁছয়। তত ক্ষণে সব শ্রমিকেরা মিলে ঠিক করেন, উদ্ধার কাজ শুরু করবেন। অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের কাছে যেতেই দেয়নি। শুরু হয়েছে মাথা গোনা। ধীরে ধীরে সবার খোঁজ মিললেও চার জন নিখোঁজ। তার মধ্যে পরে বাপির দেহ তাঁরা দেখেছিলেন বলে দাবি।

সমানে কেঁদে চলেছেন রবি দাস। তিনি বলেন, ‘‘দিন কয়েক পরেই ঘরে ফেরার কথা ছিল বাপির। জানি না, এখন ওর বাড়ির লোকেদের কী বলব।’’

(শহরের প্রতি মুহূর্তের সেরা বাংলা খবর জানতে পড়ুন আমাদের কলকাতা বিভাগ।)

Majerhat Bridge Collapse Kolkata flyover collapse Majerhat bridge মাঝেরহাট
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy