Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

উড়ছে মাছি, মাটিতে প্রৌঢ়া, দেখল না কেউ

এসএসকেএম হাসপাতালের ইমার্জেন্সি অবজারভেশন ওয়ার্ডের বারান্দা। সেখানে পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন এক প্রৌঢ়া। তাঁর বাঁ দিকের গাল থেকে মাংস খসে পড়ছে। গোটা এলাকা মাছিতে ভরে গিয়েছে।

এ ভাবেই পড়ে ছিলেন প্রৌঢ়া। পরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ভর্তি করাতে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

এ ভাবেই পড়ে ছিলেন প্রৌঢ়া। পরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ভর্তি করাতে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৭ ০১:০২
Share: Save:

এসএসকেএম হাসপাতালের ইমার্জেন্সি অবজারভেশন ওয়ার্ডের বারান্দা। সেখানে পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন এক প্রৌঢ়া। তাঁর বাঁ দিকের গাল থেকে মাংস খসে পড়ছে। গোটা এলাকা মাছিতে ভরে গিয়েছে। হাসপাতালের ডাক্তার থেকে কর্মী, রোগীর পরিবার থেকে সাধারণ মানুষ— সকলেই নাকে রুমাল চেপে বেরিয়ে যাচ্ছেন অবলীলায়। কয়েক দিন এ ভাবে পড়ে থাকা ওই প্রৌঢ়ার যে দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন, সেই হুঁশ নেই কারও। শনিবার বিকেলে হাসপাতালে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের কর্মী পরিচয় দিয়েও ওই প্রৌঢ়ার চিকি‌ৎসা শুরু করাতে সময় লেগে গেল দু’ঘণ্টা। এমনই অমানবিক ঘটনার সাক্ষী থাকল রাজ্যের সুপার স্পেশ্যালিটি সরকারি হাসপাতাল।

চিকিৎসকদের সঙ্গে বিভিন্ন আলোচনায় হাসপাতালের কর্মী এবং ডাক্তারদের মানবিক হওয়ার আবেদন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু রাজ্যের অন্যতম প্রধান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এই ঘটনা আরও এক বার তাঁদের দায়িত্ব এবং মানবিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল। এ দিন ওই প্রৌঢ়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে গেলে বারবার দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন চিকিৎসকেরা।

এ দিন বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ নিউরো-ইমার্জেন্সিতে গিয়ে বিষয়টি জানালে এক মহিলা চিকিৎসক বলেন, ‘‘এটা জেনারেল ইমার্জেন্সির বিষয়। আমাদের কিছু করার নেই।’’ জেনারেল ইমার্জেন্সিতে গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বললে তিনি সাফ বলেন, ‘‘ইমার্জেন্সির ভিতরে কেউ রোগীকে নিয়ে এলে সেটা আমাদের বিষয়। বাইরে কে পড়ে রয়েছে, সেটা ওয়ার্ড মাস্টার দেখবেন। আমাদের কিছু করার নেই।’’ ওয়ার্ড মাস্টার বলেন, ‘‘এটা একান্তই ইমার্জেন্সির বিষয়। আমার কিছু করার নেই।’’ সেখানে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী ব্যঙ্গের সুরে বলেন, ‘‘সমস্ত দায় দেখছি পুলিশেরই! এটা তো হাসপাতালের কর্মীদের দায়িত্ব।’’

এর পরে পেরিয়ে যায় আরও ঘণ্টাখানেক। হাসপাতালের সুপার মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিষয়টি জানানো হয়। তিনি আশ্বাস দেন দ্রুত ওই মহিলার চিকিৎসা শুরু হবে। এর প্রায় আধ ঘণ্টা পরে অবশেষে ওই প্রৌঢ়াকে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যান পুলিশ এবং হাসপাতালের কর্মীরা। তখন এক নার্স বলেন, ‘‘এই প্রৌঢ়া তো কয়েক দিন ধরেই বারান্দায় পড়ে রয়েছেন। প্রৌঢ়ার অবস্থাও ভাল নয়। উনি কথাও বলতে পারছেন না।’’ নার্সদের নজরে এলেও কেন ওই প্রৌঢ়ার চিকিৎসা শুরু করা গেল না? উত্তর নেই কারও মুখে।

উল্টে এক কর্মীর আক্ষেপ, ‘‘এত হাসপাতাল থাকতে বাড়ির লোক এসএসকেএম হাসাপাতালেই কেন দিয়ে যায়? মুখ্যমন্ত্রীর নজরে পড়ার জন্য পরিবারের লোকেরা ইচ্ছে করে এ সব করেন।’’ তখনও অবশ্য যন্ত্রণায় গোঁ গোঁ শব্দ করে যাচ্ছেন ওই প্রৌঢ়া।

হাসপাতালে হাজির অন্য এক রোগীর আত্মীয়, কলেজপড়ুয়া সুমিত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমি বেলা বারোটায় হাসপাতালে এসেছি। তখন থেকে ওই প্রৌঢ়া এ ভাবেই কাতরাচ্ছেন। পুলিশ ও হাসপাতালের কর্মীকে জানিয়ে লাভ না হওয়ায় সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি জানাই।’’ হাসপাতাল কেন ন্যূনতম দায়িত্ব পালন করে না? প্রশ্ন তাঁর।

সুপার মণিময়বাবু অবশ্য টানা কয়েক দিন ওই মহিলার বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকার কথা স্বীকার করেননি। তিনি বলেন, ‘‘আমি তো সকাল এগারোটা নাগাদ এই বারান্দা দিয়েই হেঁটে গিয়েছিলাম। তখন তো দেখিনি। তার পরে কোনও একটা সময়ে হয়তো এসেছেন। তবে কেন এ ভাবে দীর্ঘক্ষণ পরে থাকলেন, সে বিষয়টি দেখছি।’’

(ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

PG Hospital SSKM Hospita Inhumanity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE