Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

এক রুট এক নিগম সফল হল না এখনও

এক রুট, এক নিগম— বছরখানেক আগে এই নিয়মে কলকাতা-সহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য পরিবহণ দফতর।বছরখানেক পরে দেখা যাচ্ছে, কোনও নিগমের হাতে রুটের চেয়ে বাস বেশি। কোথাও রুট অনেক, সেই তুলনায় বাসের সংখ্যা কম।

যেখানে যোগ হাতের সাথে...। সোমবার, শহরের পথে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

যেখানে যোগ হাতের সাথে...। সোমবার, শহরের পথে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

অত্রি মিত্র
শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৫৭
Share: Save:

এক রুট, এক নিগম— বছরখানেক আগে এই নিয়মে কলকাতা-সহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য পরিবহণ দফতর।

বছরখানেক পরে দেখা যাচ্ছে, কোনও নিগমের হাতে রুটের চেয়ে বাস বেশি। কোথাও রুট অনেক, সেই তুলনায় বাসের সংখ্যা কম। কোনও নিগমের হাতে আবার বাস থাকলেও পর্যাপ্ত চালক ও কন্ডাক্টর নেই। ফলে, বছর না ঘুরতেই সঠিক পরিকল্পনার অভাবে পরিবহণ দফতরের ওই নীতি কার্যত ব্যর্থ হতে চলেছে। যার জেরে হয়রানি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।

যেমন ধরা যাক, এমএস-৩৭ রুটের কথা। গড়িয়া থেকে বারাসত— এই রুটটি দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ কলকাতার যাত্রীদের বারাসত-সহ উত্তর ২৪ পরগনার সঙ্গে অন্যতম যোগাযোগের রুট হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু সিএসটিসি-র বাস কলকাতার বাইরে যেতে পারবে না— এই নিয়মের আওতায় পড়ে দমদম বিমানবন্দরে (পরিবহণ দফতরের হিসেবে ওই পর্যন্ত কলকাতা) গিয়েই থেমে যাচ্ছে ওই বাস। দুর্ভোগ হচ্ছে হাজার হাজার যাত্রীর। বারাসতের সঙ্গে গড়িয়া-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনার যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে থাকছে শুধুই কিছু বেসরকারি বাস। একই ভাবে আগে প্রতিটি জেলাতেই অতীতে বিভিন্ন নিগম বাস চালাত। কিন্তু এখন একটি নিগম, একটি জেলাতেই বাস চালায়। ফলে, গড়ে বেশির ভাগ রুটেই বাসের সংখ্যা কমেছে। তার জেরেও জেরবার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা।

‘এক রুট, এক নিগম’ নীতিটা কী?

পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, নিগমগুলিকে লাভজনক করে তুলতে এবং তাদের ক্ষমতার পর্যাপ্ত ব্যবহারের জন্য বছরখানেক আগে এই নীতি নেওয়া হয়েছিল। কারণ, পরিবহণ দফতরের কর্তাদের বক্তব্য ছিল, একটি রুটে একাধিক নিগম বাস চালানোয় তারা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় মত্ত থাকত। এর জেরে কোনও নিগমই লাভের কড়ি ঘরে তুলতে পারত না। নিজেদের মধ্যেকার এই প্রতিযোগিতা বন্ধেই পরিবহণ দফতর বিশ্বজিৎ দত্ত, নীলাঞ্জন শাণ্ডিল্য এবং সি মুরুগান— এই তিন কর্তাকে নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করে। ওই কমিটি ঠিক করে দেয়, কোথায় কোন নিগম বাস চালাবে। পরিবহণ-কর্তাদের দাবি ছিল, ওই নীতি চালু হলে জেলার দুর্গম এলাকাগুলিতেও সরকারি বাস পৌঁছবে। ওই নির্দেশিকা অনুযায়ী, কলকাতায় বাস চালানোর দায়িত্ব পড়ে সিএসটিসি-র উপরে। হাওড়া, হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগনার কেএমএ এলাকায় বাস চালানোর দায়িত্ব পায় সিটিসি। উত্তর ২৪ পরগনার সল্টলেক এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার কেএমএ এলাকার রুটের দায়িত্ব পড়ে ভূতল পরিবহণের উপরে। ঠিক হয়, মুর্শিদাবাদ ছাড়া বাকি দক্ষিণবঙ্গে বাস চালাবে এসবিএসটিসি এবং মুর্শিদাবাদ থেকে বাকি উত্তরবঙ্গে বাস চালাবে এনবিএসটিসি।

এতে সমস্যা কোথায়?

পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, আগে দূরপাল্লার রুটে বিভিন্ন নিগম থাকায় কম সময় অন্তর বাস পেতেন যাত্রীরা। বর্তমানে, বেশির ভাগ রুটেই যাত্রীরা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পাচ্ছেন না। যেমন, আগে কলকাতা থেকে দিঘা, নামখানা, ধামাখালি, সাঁওতালডিহির মতো রুটগুলিতে অন্য নিগমের সঙ্গে সিএসটিসি-ও বাস চালাত। নতুন নীতি কার্যকর হওয়ার পরে ওই সব রুটে সিএসটিসি বাস চালায় না। কিন্তু যে সব নিগম ওই সব রুটে বাস চালায়, তারাও পর্যাপ্ত বাস দিয়ে সেই অভাব ঢাকতে পারছে না।

পরিবহণ-কর্তাদের একাংশের অভিযোগ, ‘এক রুট, এক নিগম’ চালু করতে গেলে প্রতিটি নিগমের কাছেই পর্যাপ্ত পরিমাণে বাস থাকা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কলকাতায় বাস চালানোর দায়িত্ব পাওয়া সিএসটিসি-র কাছে পুরনো ও নতুন মিলিয়ে প্রায় হাজারখানেক বাস রয়েছে। অন্য দিকে, বাকি নিগমগুলির কাছে সাকুল্যে তিনশো বাসও একসঙ্গে চলার মতো নেই। সিএসটিসি-র কাছে প্রচুর বাস থাকলেও একসঙ্গে তারা পাঁচশোর বেশি বাস চালাতেই পারছে না। কারণ, বাসের তুলনায় পর্যাপ্ত চালক ও কন্ডাক্টর নেই। আবার লাভের কড়ি গুণতে সম্প্রতি সিএসটিসি বেশির ভাগ বাসই চালাচ্ছে অপেক্ষাকৃত লাভজনক রুটে। ফলে, কম জনপ্রিয় রুটের যাত্রীরা কার্যত বাসই পাচ্ছেন না। পরিবহণ দফতরের এক কর্তার অভিযোগ, ‘‘কোথাও কোথাও সিএসটিসি নতুন নীতিকে তোয়াক্কা না করে লাভের আশায় অন্য নিগমের রুটে ঢুকে পড়ছে। যেমন ধরুন, বানতলা বা মধ্যমগ্রামে সিএসটিসি-র বাস চালানোর কথা নয়। ওখানে তারা এখনও বাস চালিয়ে যাচ্ছে।’’

রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার অবশ্য দাবি, ‘‘সমস্যা আছে ঠিকই। কিন্তু সে সব সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ারও চেষ্টা হচ্ছে। সিটিসি-কে সম্প্রতি একশো নতুন বাস কেনার অর্থ মকুব করেছে অর্থ দফতর। ধাপে ধাপে অন্য নিগমগুলিকেও এই সুযোগ দেওয়া হবে। নতুন বাস এলে সমস্যা অনেকটাই কমবে। চালক-কন্ডাক্টরের সমস্যা কমাতে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগেও সম্মতি দেওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE