আশিস খালকো।
ছিঁচকে এক গাড়ি চোরের কাছে নাকাল দশা পুলিশের!
অথচ পুলিশের জেরার সামনে বাঘা-বাঘা চোর, ডাকাতও ভেঙে প়়ড়ে। সেখানে এক চোর কী ভাবে ঘোল খাওয়াচ্ছে তদন্তকারীদের! অসহায় মুখ করে এক পুলিশ অফিসার বলেন, ‘‘প্রশ্ন করলে সে উত্তরও দিচ্ছে। তবে কী যে বলছে, কিচ্ছুটি বুঝতে পারা যাচ্ছে না। আবার ধমক দিলেই হাউমাউ করে কান্না জুড়ছে। হাত জোড় করে কাকুতি মিনতি করছে। এ সবই হল ভাষার গেরো।’’
ব্যাপারটা কী?
পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার দুপুরে ফুলবাগান থানার সুরেশ সরকার রোডের পার্কিং এলাকা থেকে এক যুবককে একটি মোটরবাইকের লক ভেঙে চুরি করতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্দেহ হয়। তাঁরাই যুবককে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। থানায় এনে জেরা করতে জানা যায়, ওই যুবকের নাম আশিস খালকো। ওড়িশার সুন্দরগড়ের বাসিন্দা সে। ব্যস, ওই তিনটে শব্দই শুধু বোঝা গিয়েছিল। তার পরে আরও কত কিছু বলে চলেছে সে! কিন্তু যার মর্মার্থ উদ্ধার করতে পারছেন না তদন্তকারীরা। আশিস কিন্তু নির্বিকার। ‘‘মুখটা এমন করে রয়েছে, যেন ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানে না। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা বলছে, ব্যাটা পাকা শয়তান। সবটা জেনে বুঝেই করছে।’’ বলছেন এক পুলিশ অফিসার।
ভাষার এই গেরো কাটাতে ফুলবাগান থানা থেকে শহরের বিভিন্ন থানা ও গোয়েন্দা বিভাগে বার্তা দিয়ে বলা হয়েছে, ওই অঞ্চলের ভাষা বোঝে এমন কাউকে পাঠানো হোক। পুলিশ অফিসারেরা বলছেন, ‘‘কিন্তু আনা হবে কোথা থেকে?’’
ছত্তীসগ়ঢ় এবং ঝাড়খণ্ড লাগোয়া জেলা হল এই সুন্দরগড়। ওড়িয়া কিংবা ঝাড়খণ্ডের স্থানীয় ভাষা বোঝেন এমন কয়েক জনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরাও আশিসের ভাষা বুঝতে পারেননি। তাঁরা বলেছেন, আশিস সুন্দরগড়ের জনজাতিদের ভাষা বলছে।
আশিসের এই অবোধ্য ভাষার পিছনে কেউ কেউ পাকা চোরের মাথাও দেখছেন। এক পুলিশকর্তা বলছেন, ‘‘এ শহরে যখন মোটরবাইক চুরি করত, তা হলে নিশ্চয়ই ও বাংলা বা হিন্দি জানে। চোরাই বাইক তো আর সুন্দরগড়ে নিয়ে গিয়ে বেচত না। পুলিশে ধরা পড়ে এখন ভাষার ফাঁক গলে ছা়ড় পাওয়ার ফিকির করছে।’’ কিন্তু সে যে বাংলা বা হিন্দি বোঝে, তা-ই বা প্রমাণ হবে কী করে?
পুলিশেরই একাংশ বলছে, ইদানীং হেফাজতে থাকা দুষ্কৃতীদের উত্তম-মধ্যম দাওয়াই দেওয়ার রেওয়াজ আর নেই। তাই ও যে হিন্দি, বাংলা বোঝে সেটা প্রমাণ করাও বেশ দুষ্কর। পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার আশিসকে শিয়ালদহ আদালতে তোলা হয়েছে। ১২ জুলাই পর্যন্ত তার জেল হেফাজত হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, এই বিভ্রাট থেকে রেহাই পেতে আশিসকে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ নিজেদের হেফাজতে নিতে চাইছে। সম্মতি মিলেছে
শীর্ষকর্তাদের থেকেও। তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। গোয়েন্দা হেফাজতে নিয়েও কি বিশেষ কিছু লাভ হবে? লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই যুবক তথ্য লুকোতেই এমন কাণ্ড করছে। ওর ভাষা বোঝে এমন কাউকে খুঁজে বার করেই রহস্যের ভেদ করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy