Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

প্রচার সার, বিধি ভাঙছে পুলিশই

পথ-দুর্ঘটনায় রাশ টানতে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচি চালু করেছেন। সঙ্গে সাযুজ্য রেখে প্রশাসনও সক্রিয় হয়েছে ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’ কর্মসূচী বাস্তবায়িত করতে।

আইন মানার দায় কি শুধু নাগরিকদের? হেলমেটহীন অবাধ যাত্রা পুলিশের। ব্যারাকপুরে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

আইন মানার দায় কি শুধু নাগরিকদের? হেলমেটহীন অবাধ যাত্রা পুলিশের। ব্যারাকপুরে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

বিতান ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৬ ০০:৫৯
Share: Save:

পথ-দুর্ঘটনায় রাশ টানতে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচি চালু করেছেন। সঙ্গে সাযুজ্য রেখে প্রশাসনও সক্রিয় হয়েছে ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’ কর্মসূচী বাস্তবায়িত করতে। পুলিশের ডিজি, কমিশনারের মতো কর্তাদের উপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর সাধের কর্মসূচির উদ্বোধন হয়েছে ঘটা করে। হেলমেট না থাকা ও অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর অভিযোগে প্রতিদিন কয়েকশো মোটরবাইক আরোহীকে জরিমানা করা হচ্ছে। কিন্তু এর পরেও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে হুঁশ ফেরেনি এতটুকু। হেলমেট না পরার ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই খোদ পুলিশও। শুধু শহরই নয়, শহরতলি ও গ্রামীণ এলাকার বাস্তব ছবিটা অন্তত সে দিকেই ইঙ্গিত করছে। হেলমেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমজনতাকে সচেতন বা বাধ্য— কোনওটাই করতে পারেনি প্রশাসন। সবেমাত্র চালু হওয়া কর্মসূচি এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে।

পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সমীক্ষাই বলছে, নিয়ম ভাঙায় এগিয়ে আইনের রক্ষকেরাই। ট্রাফিক কর্তারাই জানাচ্ছেন, হেলমেট ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি অনীহা পুলিশ এবং আইনজীবীদের। ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি শহর কলকাতার লাগোয়া ব্যারাকপুর, বিধাননগর, হাওড়া— তিন কমিশনারেট ছাড়াও উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি এবং হাওড়ার গ্রামীণ এলাকাতে হেলমেট পরা ও মোটরবাইক চালানোর নিয়ম নিয়ে সচেতনতা প্রচার শুরু করেছে বেশ কিছু বাইকার্স ক্লাব এবং সংগঠন। তাদের সমীক্ষাতেও উঠে এসেছে একই তথ্য।

হেলমেট ব্যবহার নিয়ে প্রশাসন কড়া হওয়ার পরে প্রথমে হেলমেটের বিক্রি কিছুটা বেড়েছিল। কিন্তু তা যে স্রেফ নিয়মরক্ষার জন্য, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে পেট্রোল পাম্পগুলির সামনে দাঁড়ালেই। পাম্প কর্মীদের অভিযোগ, অনেকেই অন্য আরোহীদের কাছ থেকে হেলমেট ধার করেন শুধুমাত্র পেট্রোল ভরার সময়টুকুর জন্য। তেল ভরা হয়ে গেলেই হেলমেটের জায়গা হয় বাইকের পিছনে।

প্রথম দফায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ মাত্রাতিরিক্ত গতি এবং হেলমেট না থাকার অভিযোগে কয়েকশো মোটরবাইক আরোহীকে বাইক সমেত গ্রেফতার করেছিল। কিন্তু আইনের ফাঁক গলে সহজেই তাঁরা ছাড়া পেয়ে যাওয়ায় সেই অভিযানও সম্প্রতি শিথিল হয়েছে। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে রাস্তায় যে ভাবে যতটুকু সচেতনতা আনা সম্ভব, আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু অনেক বেশি সচেতন করা দরকার নিয়ম ভাঙা বাইক আরোহীদের পরিবারের শিশুদের। আমরা স্কুলগুলিতে ইতিমধ্যেই সেই সচেতনতা প্রসারের কাজ শুরু করেছি।’’

কিন্তু আইনের রক্ষকেরাই যে নিয়ম মানছেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে কী ভাবছেন পুলিশ কর্তারা? তন্ময়বাবু জানান, যত প্রভাবশালী ব্যক্তিই হোন না কেন, নিয়ম ভাঙলে সব ক্ষেত্রেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

লাগাতার সচেতনতা অভিযান চালানোর কথা বলেছেন উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ও হুগলির পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠীও। পুলিশ কর্তাদের কথায়, হেলমেট না থাকলে শুধু জরিমানা করে ছেড়ে দিতে হচ্ছে বহু ক্ষেত্রে। তবে ওই আরোহীকে পুলিশকর্মীরা হেলমেট পরার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও বোঝাচ্ছেন। দ্বিতীয় বার ধরা পড়ার ভয়ে কেউ কেউ হেলমেট পরছেন ঠিকই, তবে তার সংখ্যা হাতে গোনাই। তাই হেলমেট-বিধি কড়া ভাবে বলবৎ করতে শেষ পর্যন্ত পুলিশের ভরসা সেই সচেতনতাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police helmet law
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE