Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

নামে বিদেশি, বাজেয়াপ্ত ১০০ লিটার জাল মদ

অভিযোগ, ওই সব নামী ব্র্যান্ডের স্কচ এবং ভদকা আদতে তৈরি হচ্ছে এ শহরেরই ঝুপড়ি ঘরে। আবগারি অফিসারেরা জানিয়েছেন, সস্তার দেশীয় হুইস্কির সঙ্গে জল ও রেক্টিফায়েড স্পিরিট মিশিয়ে তা বোতলবন্দি করা হচ্ছে।

সুনন্দ ঘোষ
শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:১৮
Share: Save:

থরে থরে সাজানো নামকরা বিদেশি ব্র্যান্ডের স্কচ আর ভদকা। একেবারে সিল করা বোতল। এ শহর থেকে তা চলে যাওয়ার কথা ছিল বিহার, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশায়। তবে, তার আগেই সেগুলি বাজেয়াপ্ত করেছেন রাজ্য আবগারি দফতরের অফিসারেরা।

অভিযোগ, ওই সব নামী ব্র্যান্ডের স্কচ এবং ভদকা আদতে তৈরি হচ্ছে এ শহরেরই ঝুপড়ি ঘরে। আবগারি অফিসারেরা জানিয়েছেন, সস্তার দেশীয় হুইস্কির সঙ্গে জল ও রেক্টিফায়েড স্পিরিট মিশিয়ে তা বোতলবন্দি করা হচ্ছে। তার পরে ওই বোতল সিল করে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ভিন্‌ রাজ্যে।

আবগারি অফিসারদের দাবি, যাঁরা মাঝেমধ্যে এই ধরনের বিদেশি ব্র্যান্ডের স্কচ খান, তাঁরা এই নকল মদ খেলে ধরে ফেলতে পারবেন যে এটার স্বাদ ভিন্ন। সেই কারণে, এই সব জাল বিদেশি মদ এমন জায়গায় পাঠানো হয় যেখানে বিদেশি স্কচ বা ভদকার চল কম। সেখানকার মানুষদের তুলনায় কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে বিদেশি নামী ব্র্যান্ডের স্কচ, ভদকা। বলা হচ্ছে, সেগুলি বিদেশি বিমানবন্দরের ডিউটি-ফ্রি শপ থেকে কেনা হয়েছে।

গোপন সূত্রে খবর পেয়ে শুক্রবার রাতে রিপন স্ট্রিটে হানা দিয়ে আবগারি অফিসারেরা একটি ডেরা থেকে ১০০ লিটারেরও বেশি এমন জাল বিদেশি মদ বাজেয়াপ্ত করেছেন। দেশীয় হুইস্কি এবং ভদকার সঙ্গে জল ও রেক্টিফায়েড স্পিরিট মিশিয়ে তা বিদেশি ব্র্যান্ডের বোতলে ভরা হচ্ছিল। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে প্রায় ৩০ লিটার দেশীয় হুইস্কি, ভদকা ও রেক্টিফায়েড স্পিরিটও। এই চক্রের পান্ডা, তপসিয়া রোডের বাসিন্দাকে গ্রেফতার করে শনিবার আদালতে তোলা হলে তাঁকে ১০ দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

অভিযুক্তকে জেরা করে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, তাঁরা বাজার থেকে বিদেশি ব্র্যান্ডের স্কচ ও ভদকার খালি বোতল কেনেন। সেগুলি পরিষ্কার করে, সেখানে জল ও স্পিরিট মিশ্রিত দেশীয় মদ পুরে সিল করে দেওয়া হয়। সিল করার জন্য একটি ছোট হস্তচালিত যন্ত্রও পাওয়া গিয়েছে তাঁদের কাছ থেকে। কিছু বিদেশি ব্র্যান্ডের বোতলের মুখে এখন ‘গোয়ালা ক্যাপ’ থাকে। প্লাস্টিকের তৈরি বিশেষ এই ক্যাপের ভিতর দিয়ে গ্লাসে মদ ঢালার সময়ে তা আস্তে আস্তে পড়ে। সেই গোয়ালা ক্যাপ খোলা যায় না এবং তা থাকলে বোতলে কিছু ভরাও যায় না। আবগারি অফিসারদের কথায়, বোতল অরক্ষিত রেখে নিপুণ হাতে এই গোয়ালা ক্যাপ খুলে ফেলার ‘কারিগর’-ও আছেন। বাজারে আলাদা করে গোয়ালা ক্যাপ কিনতেও পাওয়া যায়। তাই, সেই সব বোতলে জাল মদ ভরতে সমস্যাও হয় না।

জেরার মুখে অভিযুক্ত জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে আরও এক ব্যক্তি এই কারবারে যুক্ত। তাঁরা দু’জনে এই মদ বানিয়ে পৌঁছে দিতেন বাবুঘাট বা হাওড়া স্টেশনে। সেখান থেকে বাসে অথবা ট্রেনে নকল মদ চলে যেত ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহারে। এমনকী, এ শহর বা এই রাজ্যে কিছু কিছু সস্তার পার্টিতেও এমন নকল মদ পরিবেশন করা হত বলে জেরায় জানিয়েছেন অভিযুক্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE