Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অকাল জন্মদিনের পরেই ‘দিদিদের’ কাঁদিয়ে বিদায় ভীমের 

শিশুকল্যাণ সমিতির প্রতিনিধিদের হাতে আদরের ভীমের ভবিষ্যৎ সঁপে দিলেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

অশ্রুসজল: আর জি করে জন্মদিন পালন ছোটা ভীমের।

অশ্রুসজল: আর জি করে জন্মদিন পালন ছোটা ভীমের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৫৪
Share: Save:

কেক কাটার পরে হাপুস নয়নে কাঁদছেন দিদিরা। তা দেখে একরত্তি শিশুও ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলল। মাতৃসমা দিদিদের গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া জলের ধারা বেশ কয়েক বার খুদে হাতের আঙুলগুলো ছুঁয়ে গেল। শুক্রবার সরকারি হাসপাতালের এস‌এনসিইউ বিভাগে এ ভাবেই পালিত হল ছোটা ভীমের জন্মদিন। সময়ের কিছু দিন আগেই। সেই জন্মদিন পালনের পরে বিকেলে শিশুকল্যাণ সমিতির প্রতিনিধিদের হাতে আদরের ভীমের ভবিষ্যৎ সঁপে দিলেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

২০১৮ সালের ২০ এপ্রিল আর জি করের প্রসূতি বিভাগে জন্মেছিল ভীম। হাসপাতালের নথি অনুযায়ী, মায়ের নাম সুজাতা মণ্ডল। সন্তান প্রসবের তিন দিন পরেই আচমকা উধাও হয়ে যান তিনি। সেই থেকে

হাসপাতালের এস‌এনসিইউ বিভাগের ‘দিদি’রাই একরত্তি শিশুটির অভিভাবকের ভূমিকা নেন। সাধারণত, পরিত্যক্ত শিশুদের কথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেই জানতে পারে পুলিশ। এর পরে সরকারি প্রক্রিয়া মেনে সেই শিশুদের হোমে পাঠানো হয়। পুলিশের দাবি, ভীমের বিষয়টি পরে জানা যায়। এর‌ই মধ্যে আচমকা এক মহিলা ওই শিশুটিকে নিজের সন্তান বলে দাবি করলে জটিলতা তৈরি হয়। ওই মহিলা আদৌ ভীমের মা কি না, তা দেখার ভার পড়ে তদন্তকারীদের উপরে। তত দিন পরম স্নেহেই এস‌এনসিইউ বিভাগে বড় হচ্ছিল পরিত্যক্ত শিশুটি। কিন্তু বছর ঘুরলেও নানা টানাপড়েনে বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়নি। তাতে অন্য সমস্যা দেখা দেয়।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

হাসপাতাল সূত্রের খবর, সদ্যোজাতদের নার্সারিতে বড় হ‌ওয়ায় ভীমের বিকাশ ঠিক মতো হচ্ছিল না। তা ছাড়া, সদ্যোজাতদের বিভাগে একটি পরিণত শিশু থাকলে সে সংক্রামিত হতে পারে। আবার তার থেকেও অন্য সদ্যোজাতদের সংক্রামিত হ‌ওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। ভীমের ক্ষেত্রে দেরির জন্য একে অপরের কোর্টে বল ঠেলেছে পুলিশ ও হাসপাতাল।

পুলিশ সূত্রের খবর, সম্প্রতি কলকাতা শিশুকল্যাণ সমিতির দায়িত্বে থাকা হাওড়া

শিশুকল্যাণ সমিতির কাছে ভীমের বিষয়টি উত্থাপন করে টালা থানা। যার প্রেক্ষিতে শুক্রবার ভীমকে সমিতির কাছে হাজির করাতে বলা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে সে কথা জানার পরে পরদিন দুপুরে দু’সপ্তাহ আগেই শিশুটির জন্মদিন পালনের আয়োজন করা হয়। ছোটা ভীমের কার্টুন আঁকা জন্মদিনের কার্ডে ‘মা যশোদা’র কথা বলা হয়েছে। এক অজানা যাত্রাপথের উল্লেখ রয়েছে। পাপিয়া সাহা নামে এক সিস্টার বলেন, “ওকে আমরা যেমন আদর দিয়েছি, তেমন‌ই আদর যেন পায়।” পম্পা দাসমণ্ডল নামে এসএনসিইউ বিভাগের এক কর্মীর কথায়, “ও আমাদের পরিবার হয়ে গিয়েছিল। আর‌ও ছোট অবস্থায় চলে যেতে পারত। তা হলে এত মায়া পড়ত না। সকালে জল খাবে। বোতল দেখিয়ে বলছে, দিদি দে, দিদি দে। খুব কষ্ট হচ্ছে।” কান্নায় গলা বুজে আসা আর এক কর্মী তাপসী ঘটকের প্রশ্ন, “খুব ইচ্ছে করলে এক বার দেখতে দেবে না?”

পুলিশ সূত্রের খবর, ভীমকে হোমে রাখার নির্দেশ দিয়েছে শিশুকল্যাণ সমিতি। পরিত্যক্ত শিশুটিকে নিয়ে মহিলার দাবির কী হবে?

হাসপাতালের অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল বলেন, “মায়ের দাবি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে শিশুর ডিএন‌এ পরীক্ষা হবে কি না, তা শিশুকল্যাণ সমিতি ঠিক করবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE