Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Raja Rammohun Roy Library

রবীন্দ্রকণ্ঠে আবৃত্তির রেকর্ডও শোনাবে রামমোহন লাইব্রেরি

২৪ ফেব্রুয়ারি সাধারণের সামনে তুলে ধরতে চাইছেন রামমোহন লাইব্রেরি অ্যান্ড ফ্রি রিডিং রুমের সঙ্গে যুক্তেরা।

Collection of Vinyl records is in progress at Raja Rammohun Roy Library

উদ্যোগ: ভিনাইল রেকর্ডের সংগ্রহ তৈরির কাজ চলছে রামমোহন লাইব্রেরিতে।  ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:১২
Share: Save:

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বন্ধু প্রবোধচন্দ্র মহলানবিশকে নিয়ে শান্তিনিকেতনে হাজির চণ্ডীচরণ সাহা। তাঁর নতুন সংস্থা ‘হিন্দুস্থান মিউজ়িক্যাল প্রোডাক্টস ভ্যারাইটি সিন্ডিকেট’-এর জন্য কবিকণ্ঠ রেকর্ড করার আর্জি নিয়ে। ১৯৩২ সালের ৫ এপ্রিল। অনুরোধ রাখতে কলকাতায় এলেন রবীন্দ্রনাথ। বৌবাজারের ৬/১ অক্রূর দত্ত লেনের স্টুডিয়োয় ‘তবু মনে রেখো’ গান আর ‘আমি যখন বাবার মতো হব’ রেকর্ড করলেন তিনি।

বসন্তের দুপুরে প্রায় ৯১ বছর আগের সেই দু’টি রেকর্ডের একটি হাতে তুলে নিয়ে রামমোহন লাইব্রেরি অ্যান্ড ফ্রি রিডিং রুমের গ্রন্থাগার সচিব, বছর পঁয়ষট্টির চন্দনকুমার চট্টোপাধ্যায় বললেন, "এই হল কবিকণ্ঠে ‘আমি যখন বাবার মতো হব’ কবিতার সেই রেকর্ড। কী জিনিস, ভাবতে পারছেন! হাতে তুললেই অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয়। এমন কত ইতিহাস যে সংরক্ষিত হতে চলেছে এই রামমোহন লাইব্রেরি অ্যান্ড ফ্রি রিডিং রুমে, বলে শেষ করা যাবে না।" কথা থামিয়েই টেবিলের উপরে ছড়িয়ে থাকা একের পর এক গ্রামোফোন রেকর্ড হাতে তুলে নিয়ে দেখতে শুরু করলেন তিনি। কয়েক মুহূর্ত পরেই বললেন, "সব মিলিয়ে প্রায় ১৭৫০টির মতো রেকর্ড। সব ক’টি ঝেড়ে-মুছে, শিল্পীদের নাম ধরে ধরে ক্যাটালগ করা হচ্ছে। যাতে চাইলেই হাতের কাছে সবটা পাওয়া যায়।"

এই বিশাল সংগ্রহই কাল, ২৪ ফেব্রুয়ারি সাধারণের সামনে তুলে ধরতে চাইছেন রামমোহন লাইব্রেরি অ্যান্ড ফ্রি রিডিং রুমের সঙ্গে যুক্তেরা। ভগ্নপ্রায় অবস্থা থেকে তাঁদের উদ্যোগেই নব কলেবরে কাল আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে এই ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠান। সেখানকার সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত মিত্র বললেন, "দুই চিকিৎসক, দেবাশিস ভট্টাচার্য ও সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতো বিশিষ্ট মানুষদের পাশাপাশি বহু সাধারণ মানুষ এবং প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছিলেন। সকলের মিলিত সাহায্যেই এই ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠান নতুন করে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। সংস্কার হওয়ার পরে রামমোহন হলের সঙ্গে আমাদের যে বিশাল গ্রামোফোন রেকর্ডের ভাঁড়ার রয়েছে, সেটি রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরি ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর জেনারেল অজয়প্রতাপ সিংহের উপস্থিতিতেই তুলে ধরা হবে।"

রামমোহন লাইব্রেরির অর্থসচিব সজল মিত্র জানালেন, গ্রামোফোন রেকর্ড সংগ্রহ করে তাঁরা যে সংগ্রহশালা তৈরির পরিকল্পনা করছেন, সেই খবর জানাজানি হতেই রবীন ভট্টাচার্য, সাহানা চট্টোপাধ্যায়ের মতো বহু মানুষ যোগাযোগ করে নিজেদের সংগ্রহে থাকা গ্রামোফোন এবং রেকর্ড দিতে চান। তাতেই ১৯৩০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যের বহু রেকর্ড পাওয়া গিয়েছে। ৭৮ আরপিএম-এর গালার রেকর্ড যেমন মিলেছে, তেমনই মিলেছে লং প্লেয়িং রেকর্ড। এর মধ্যে কোনওটি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নিজের গলায় গাওয়া গান এবং আবৃত্তি, কোনওটি সরোজিনী নাইডুর ইংরেজি গান। রয়েছে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরে কাজী নজরুল ইসলামের রেকর্ড করা 'রবি-হারা' আবৃত্তি। এই সব শোনানোর জন্য তৈরি রাখা হচ্ছে ইংল্যান্ডে তৈরি, শতবর্ষ পুরনো এমন গ্রামোফোন, যা হাতে চালাতে হয়। থাকছে আর একটি বিদ্যুৎচালিত গ্রামোফোনও। অনুষ্ঠানের দিন সব যাতে ঠিকঠাক চলে, তা নিশ্চিত করতেই এখন চূড়ান্ত তৎপরতা চন্দনবাবুদের।

রামমোহন লাইব্রেরি অ্যান্ড ফ্রি রিডিং রুমের সভাপতি, চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, "ষাটের দশকে শেষ হয়ে যায় ৭৮ আরপিএম-এর গালার রেকর্ডের যুগ। শুরু হয় ইপি ও লং প্লেয়িং রেকর্ডের যুগ। তার পরে ২০০২ সালে ভারতের রেকর্ড সংস্কৃতি শতবর্ষ পেরিয়েছে। আর শতবর্ষের রেকর্ডে সঙ্গীত বিনোদনের গণ্ডি অতিক্রম করে আজ হয়ে উঠেছে ইতিহাস। তাই পুরনো রেকর্ড আজ গবেষণা ও সংগ্রহের বিষয়। সঙ্গীতের এই পরম্পরার চর্চার সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি গবেষণারও রসদ জোগাচ্ছে রামমোহন লাইব্রেরি।"

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE