Advertisement
E-Paper

কলকাতার ধাঁচে নজরদারি, ভাসানে রোখা গেল দুর্ঘটনা

একেই বোধ হয় ‘কলকাতা মডেল’ বলে! খাস শহর লাগোয়া বরাহনগর হোক কিংবা একটু দূরের বারাসত, ব্যারাকপুর— প্রতিমা নিয়ে গঙ্গার ঘাটের কাছে গেলেই পুজোকর্তারা আটকে গিয়েছেন বাঁশের ব্যারিকে়ডে। প্রতিমার ভার উদ্যোক্তাদের কাঁধ থেকে চলে গিয়েছে কুলিদের কাঁধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৫২
কড়া নিরাপত্তায় বিসর্জন। খড়দহের একটি ঘাটে। — নিজস্ব চিত্র

কড়া নিরাপত্তায় বিসর্জন। খড়দহের একটি ঘাটে। — নিজস্ব চিত্র

একেই বোধ হয় ‘কলকাতা মডেল’ বলে!

খাস শহর লাগোয়া বরাহনগর হোক কিংবা একটু দূরের বারাসত, ব্যারাকপুর— প্রতিমা নিয়ে গঙ্গার ঘাটের কাছে গেলেই পুজোকর্তারা আটকে গিয়েছেন বাঁশের ব্যারিকে়ডে। প্রতিমার ভার উদ্যোক্তাদের কাঁধ থেকে চলে গিয়েছে কুলিদের কাঁধে। ঘট, ফুল, বেলপাতা নিয়ে গুটিকয়েক পুজোকর্তা গঙ্গার ঘাটে যেতে পেরেছেন বটে। কিন্তু তা-ও পুলিশি ঘেরাটোপের ভিতরে।

পুলিশকর্তারা বলছেন, আগে ফি-বছরই বিসর্জনের দিনে গঙ্গায় ডুবে প্রাণ যেত অনেকের। এ বার সেখানে দুর্ঘটনার সংখ্যা শূন্য! যার পিছনে ‘কলকাতা মডেল’-কেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন পুলিশের অনেকে। যদিও ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘পুরসভা থেকে পুজোর উদ্যোক্তা, সকলের সহযোগিতাতেই এই সাফল্য মিলেছে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে প্রায় ১২০০টি বারোয়ারি পুজো হয়েছে। বিসর্জনের জন্য নির্দিষ্ট ঘাট ছিল ৩৫টি। সমস্ত ঘাটেই বসেছিল সিসিটিভি ক্যামেরা। এ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট পুরসভাগুলির সঙ্গে আলোচনা করে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট মেরামতির কাজও করিয়েছিল পুলিশ। পাশাপাশি পুরসভার তরফে বিসর্জনের জন্য রাখা হয়েছিল কুলি। এত দিন ঘাটে-ঘাটে পুলিশ থাকলেও পুজো কমিটির লোকেরাই বিসর্জন দিতেন। অনেক সময়ে টাল সামলাতে না পেরে কিংবা মত্ত অবস্থার কারণে জলে পড়ে যেতেন পুজো কমিটির কোনও সদস্য। ভিড়ের মধ্যে সিঁড়ির ধাপ খেয়াল করতে না পেরেও তলিয়ে যেতেন কেউ কেউ।

এ বার বিসর্জনের শোভাযাত্রা নিয়ে আগেভাগেই পরিকল্পনা করেছিলেন পুলিশকর্তারা। ঘাটে যাতায়াতের রাস্তা একমুখী করে দেওয়ায় যানজটও হয়নি। ফলে গঙ্গার ঘাটে একসঙ্গে বহু প্রতিমার ভিড় হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। ফলে বিসর্জনের সময়ে বিশৃঙ্খলাও এড়ানো গিয়েছে। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, জলের কাছে ভিড়কে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু ঘট বা ফুলপাতা বিসর্জনের জন্য পুজোকর্তাদের কয়েক জনকে ব্যারিকেডের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়েছিল। তবে সে সময়ে কোনও বিপদ ঘটলে যাতে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তার জন্য কলকাতার ধাঁচেই প্রতিটি ঘাটে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মী, নৌকো মজুত রেখেছিল পুলিশ। ঘাটে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো পরিস্থিতি নজরে রাখছিলেন পুলিশকর্তারা।

কলকাতার ধাঁচে এ বার কুলির ব্যবস্থা, বাঁশের ব্যারিকেড রাখা হয়েছিল বারাসত পুরসভার আটটি বিসর্জনস্থলেও। ফলে কোথাওই কোনও বিপদের খবর মেলেনি। প্রশাসন সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনায় ইছামতী, যমুনা, বিদ্যাধরীর মতো নদীর বিভিন্ন ঘাটে বিসর্জন হয়। এর বাইরে প্রচুর বিল, পুকুরেও প্রতিমা বিসর্জন দেয় স্থানীয় পুজো কমিটিগুলি। প্রশাসনের কর্তারা মেনে নিচ্ছেন, কলকাতার মতো জেলার সর্বত্র পুরসভা বা পঞ্চায়েতের তরফে কুলির ব্যবস্থা করা যায়নি। তবে নজরদারি ছিল।

জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানান, পুজোর আগে থেকেই পুরসভা, পঞ্চায়েত, পুজো কমিটিগুলিকে নিয়ে বারবার বৈঠক করা হয়েছে। তাতে বিসর্জনের নির্দিষ্ট বিধিনিয়ম জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এর পাশাপাশি নদী, বড় বিল বা পুকুরের ঘাটে ভিড় নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন ছিল প্রচুর পুলিশ। ফলে নির্দিষ্ট লোকজন ছাড়া উৎসাহী জনতা বা শোভাযাত্রার ভিড় ঘাটের কাছে যেতে পারেনি। যে সব এলাকায় নদীর ঘাট পোক্ত বা বিসর্জনের উপযুক্ত নয়, সেখানে প্রতিমা জলে ফেলার জন্য অস্থায়ী ব্যবস্থাও করা হয়েছিল।

উত্তরের মতো দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের মতো এলাকাতেও বিসর্জন নিয়ে আঁটোসাঁটো নজরদারি রেখেছিল পুলিশ-প্রশাসন। বিশেষত, বিধানচন্দ্র রায় ঘাটে নিরাপত্তার কড়াকড়ি ছিল বেশি। গঙ্গার সংযোগকারী মগরাহাট খালে ও নিরঞ্জন ঘাটের চারপাশে প্রচুর পুলিশ রাখা হয়েছিল। নজরদারির জন্য ছিল ওয়াচ টাওয়ারও।

24 Parganas Security Perfect Security Idol Immersion
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy