দুর্ঘটনাস্থল থেকে বরাতজোরে বেঁচে ফেরা দুই বন্ধু মানব মালি ও রাজকুমার সোমকর। — নিজস্ব চিত্র
শহরের রাজপথে সিসি টিভির ফুটেজে ধরা পড়েছিল প্রাণ নিয়ে পালানোর সেই মরিয়া মুহূর্ত।
মাথার উপরে সাক্ষাত মৃত্যু হয়ে তখন ধসে পড়ছে উড়ালপুলের অংশ। গোটা চারেক ট্যাক্সি, গাড়ি, ক’জন পথচারীর জ্যান্ত কবরে ঢোকার মুহূর্তে চকিতে পিঠটান দিয়ে ছিটকে যাচ্ছে দু’টি অবয়ব। বিপর্যয়ের দিনে, শোকের শহরে এই মানিকজোড়ের চওড়া কপালটাও এখন রীতিমতো চর্চার বিষয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুর্ঘটনাস্থলের কাছেই দুই লাজুক মিতভাষী তরুণের খোঁজ মিলল। তখনও ভয়ে জবুথবু।
দু’জনের ঠিকানাই ৩০৭ রবীন্দ্র সরণি। ২৯ বছরের রাজকুমার সোনকর, পরিবারের ছোটখাটো ব্যবসা সামলান। ১৯ বছরের মানব মালি কলেজের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া। এ দিন দুপুরে রবীন্দ্র সরণি ধরে রাজকুমারের অসুস্থ ভাইকে দেখতে বিশুদ্ধানন্দ সরস্বতী হাসপাতালে যাচ্ছিলেন তাঁরা। তখনই উড়ালপুলটি ভেঙে পড়ে।
নিশ্চিত মৃত্যুর কান ঘেঁষে এই জীবন লাভের রহস্যটা কোথায়?
কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের সিগন্যাল খুলে যাওয়াটাকেই দুই যুবক এক বাক্যে পরম আশীর্বাদ বলে মনে করছেন। এ যেন এক অদ্ভূত উলট-পুরাণ। শহরের রাজপথে হঠাৎ ট্রাফিক সিগন্যাল খোলায় বেঘোরে মৃত্যুর মুখে পড়েছেন কোনও কোনও হতভাগ্য। এ যাত্রা, ঘটেছে উল্টোটাই। দুই যুবক পুলিশকে জানিয়েছেন, রবীন্দ্র সরণি ধরে উত্তর থেকে দক্ষিণে হাঁটছিলেন তাঁরা। কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিটে হাওড়ার দিক থেকে গিরিশ পার্কগামী যানবাহন তখন সিগন্যালে আটকে। দুই যুবক মোড় পেরোতে যাওয়ার মুহূর্তেই সেই সিগন্যাল খুলে যায়। তাঁদের সামনে একটা ট্যাক্সি চলে আসায় থমকে যান দুই যুবক। ঠিক তখনই মাথার উপরে বিকট শব্দ। হুড়মুড়িয়ে উড়ালপুল ভেঙে পড়ছে দেখেই ‘বাপ রে’ বলে পিঠটান দেন দু’জন। সামনের বেশ কয়েকটা গাড়ি, ক’জন পথচারী চাপা পড়লেও সেকেন্ডের ভগ্নাংশে সরে আসেন ওই দুই যুবক।
সন্ধ্যায় রাজকুমার বলছিলেন, ‘‘আমরা ছুটে চলে এলেও কয়েক পা দূরে গিয়ে প্রাণভয়ে কাঁপতে কাঁপতে রাস্তায় বসে পড়ি।’’ ক’জন পথচারী তাঁদের নিয়ে গিয়ে একটা চায়ের দোকানে বসান। গরম দুধ খেতে দেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর ইলোরা নস্কর দুই যুবককে সাহস জোগান। একটু বাদে তিনিই ওঁদের বাড়ি পৌঁছোনোর ব্যবস্থা করেন।
তত ক্ষণে দু’জনের প্রাণ বাঁচানোর দৃশ্য ছড়িয়ে পড়েছে সংবাদমাধ্যমে। বিপর্যয়ের সামনে মরিয়া পালানোর সেই ভঙ্গি ছড়িয়ে দিচ্ছে সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার হিমস্রোতের ছোঁয়াচ।
আরও পড়ুন:
বারবেলায় যেন পাহাড় ভাঙল শহরের মাথায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy