Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জোর প্রস্তুতি, তবু কি পাল্টাবে বর্ষার শহর

শহরের খালগুলিতে জলের গতি না বাড়ানো গেলে শহরের জলছবি বদলানো কঠিন বলেই মনে করছেন খাল বিশেষজ্ঞরা। আর বর্ষার মুখে সেই কাজে ‘খামতি’ যে থেকেই গিয়েছে তা স্বীকার করছেন পুরসভার একাধিক ইঞ্জিনিয়ারও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৬ ০৬:২১
Share: Save:

শহরের খালগুলিতে জলের গতি না বাড়ানো গেলে শহরের জলছবি বদলানো কঠিন বলেই মনে করছেন খাল বিশেষজ্ঞরা। আর বর্ষার মুখে সেই কাজে ‘খামতি’ যে থেকেই গিয়েছে তা স্বীকার করছেন পুরসভার একাধিক ইঞ্জিনিয়ারও। বৃহস্পতিবার বর্ষার প্রস্তুতির পুর-বৈঠকে প্রথমেই এ কথা ওঠে। এর জন্য সেচ দফতরের উপর দায়িত্ব পড়েছে যত শীঘ্র সম্ভব খালগুলির সংস্কার করা হোক। বৈঠকে হাজির সেচ দফতরের প্রতিনিধিদের তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

দুয়ারে বর্ষা। যে কাজ এতদিন ধরে করতে বলা হচ্ছে, সেই কাজে পুরসভা আগে উদ্যোগী হয়নি কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। পুর এলাকার মধ্যে থাকা খাল যে ভাবে প্রতিনিয়ত ভরাট হচ্ছে, তা রুখতে পুরসভার ভূমিকার সমালোচনা করছেন অন্য দফতরের অফিসারেরাও। তাঁদের কথায়, শহর জুড়ে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার ও খালের ধারে দখলদারি রুখতে পুর প্রশাসন এতটা নির্বিকার থাকলে খালের সমস্যা বাড়বে। তা খাল সংস্কার করলেও।

বৈঠকে পুর-অফিসারেরা ছাড়াও হাজির ছিলেন সেচ, পূর্ত, কেএমডিএ, দমকল, পুলিশ, সিইএসসি, রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ, কলকাতা টেলিফোন্স, রেল ও অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের আধিকারিকেরা। অতি বর্ষায় শহরে বন্যা পরিস্থিতি হলে প্রতিটি দফতরকেই কিছু দায়িত্ব পালন করতে হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ দিনের বৈঠকে ডাকা হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের আবহাওয়া দফতরের পূর্বাঞ্চল শাখার ডেপুটি ডিরেক্টর গোকুলচন্দ্র দেবনাথকে।

মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, বর্ষার মোকাবিলায় আবহাওয়া দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা খুবই জরুরি। বিশেষ করে ঝড়-ঝঞ্ঝার পূর্বাভাস থাকলে বিপর্যয় মোকাবিলা সামাল দিতে সুবিধা হয়। সে সব ভেবেই আবহাওয়া দফতরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে পুর-অফিসারদের।

পুরসভা সূত্রে খবর, শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ জুড়ে রয়েছে বেলেঘাটা খাল, চড়িয়াল, মণিখালি, পর্ণশ্রী, বেগড় খাল, টাউন হেডকাট, কেওড়াপুকুর, রেনিয়া, সুবার্বান-সহ আরও কয়েকটি খাল। মূলত শহরের নিকাশি জল এই সব খালের মধ্যে দিয়েই গঙ্গা বা অন্য নদীতে গিয়ে পড়ে। প্রায় প্রতি বছরই অভিযোগ ওঠে খাল সংস্কার না হওয়ায় নিকাশি নালার জল খাল বেয়ে নদীতে যেতে পারে না। খালের নাব্যতা না থাকায় জলের প্রবাহ আটকে থাকে। এতেই শহর জুড়ে জল জমে থাকে। এর উপর শহরের ভিতরে মাটির নীচে গালিপিট ও নিকাশি নালা পলিতে ভরে থাকায় জলের গতি স্তব্ধ হয়ে যায়। এ সবই শহরে জল জমে থাকার প্রধান কারণ বলে মনে করেন ইঞ্জিনিয়ারেরা।

অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই এ বার প্রায় এক বছর ধরে শহরে মাটির নীচে থাকা পলি পরিষ্কারে অনেকগুলি মেশিন কাজে লাগিয়েছে পুরসভা। তাতে অনেকটা সুফল মিললেও কাজ এখনও বাকি রয়েছে বলে জানান নিকাশি দফতরের আধিকারিকেরা। এ দিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে শহর জুড়ে থাকা খালের সংস্কার করতে হবে। এবং তার ভার দেওয়া পড়েছে সেচ দফতরের উপর। পুর এলাকার অধিকাংশ খালই সেচ দফতরের অধীনে। বছর খানেক ধরে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে কিছু কিছু খাল সংস্কার করা হয়েছে। তবে আরও করা প্রয়োজন বলে বৈঠকে জানান মেয়রও।

কলকাতা শহরের নিকাশির জল বের করতে পাম্পিং স্টেশনগুলিতে রয়েছে তাতে ৩৫০টি পাম্প। এর অধিকাংশই বর্ষার সময় চালানো হয়। মেয়র পারিষদ তারক সিংহ জানান, হাই টেনশন লাইনের গণ্ডগোল হলে অনেক সময় পাম্প চলে না। সিইএসসি এবং বিদ্যুৎ পর্ষদের ইঞ্জিনিয়ারেরা দক্ষ হওয়ায় আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ওই লাইন সারানোর জন্য তাঁদের বলা হয়েছে। বর্ষার সময় বিদ্যুৎ পরিষেবা যাতে স্বাভাবিক থাকে তাও দেখতে বলা হয়েছে তাদের।

বর্ষায় শহর প্লাবিত হলে কী ভাবে তার মোকাবিলা করতে হবে তা নিয়েও এ দিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতর, পুলিশকে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। রেললাইন ডুবে গেলে দ্রুত সচল করা নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে রেল কতৃর্পক্ষকেও। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনিক কর্তাদের বলা হয়েছে বর্ষার সময় ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে তৈরি থাকবেন। সাইক্লোন বা বন্যার মতো পরিস্থিতি সামাল দিতে যা জরুরি।

তারক সিংহ জানান, বেলেঘাটা-সহ শহরের একাধিক খালে খুব শীঘ্রই ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে। শহর জুড়ে থাকা একাধিক খালের সংস্কার না হলে শহরের নিকাশি ব্যবস্থা ফের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে বলে মনে করেন পুরকর্তারা। বুধবারই মধ্য ও পূর্ব কলকাতার নিকাশি ব্যবস্থার অন্যতম খাল বেলেঘাটার কী হাল তা আনন্দবাজারে প্রকাশিত হয়েছিল। সে দিনই দুপুরে ওই খাল পরিদর্শনে যান পুরসভার নিকাশি দফতরের আধিকারিকেরা। এ দিন তারকবাবু জানান, ওই খাল সংস্কারের টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে যাতে কাজ শুরু করা যায় সে ব্যাপারে সেচমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁদের দাবি, আসন্ন বর্ষার মোকাবিলা করতে প্রস্তুত কলকাতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Water log Monsoon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE