এসএসকেএমে রাজেন্দ্রনাথ পাণ্ডের নামে তৈরি করা আউটডোর টিকিটের প্রতিলিপি।
তিনি রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, অথচ তাঁর নামেই প্রতি সোমবার আউটডোর টিকিট হচ্ছে এসএসকেএম হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগে! অভিযোগ, শুধু সোমবার নয়, উপাচার্যের নামে আউটডোর টিকিট হয় প্রতি বুধ ও শুক্রবারও।
তিনি চিকিৎসক রাজেন্দ্রনাথ পাণ্ডে। এসএসকেএমে কুকুরের ডায়ালিসিস-কাণ্ডে জড়িয়েছিল তাঁর নাম। তাঁর আগের উপাচার্যেরা হয় সরকারি হাসপাতালের পদ ছেড়ে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলেন বা কোনও বেসরকারি জায়গায় প্রাইভেট প্র্যাক্টিসে জড়িত থাকলে তা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। কারণ, উপাচার্যের কাজ পূর্ণ সময়ের এবং তাঁর দায়িত্বও বিপুল। এই পদে থাকলে অন্য কোথাও, অন্য কোনও কাজ করার কথা নয়।
অথচ, রাজেন্দ্রনাথ পাণ্ডে এখনও প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করেন একাধিক বেসরকারি হাসপাতালে। সেই সঙ্গে এসএসকেএম হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগেও জ্বলজ্বল করছে তাঁর নাম।
স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নাম কী করে সরকারি হাসপাতালের শিক্ষক-চিকিৎসকের তালিকায় থাকতে পারে? এটা তো মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া-র (এমসিআই) নিয়মবিরুদ্ধ। কারণ, শিক্ষক-চিকিৎসক এবং উপাচার্য দু’টোই পূর্ণ সময়ের দায়িত্ব, যেটা একসঙ্গে কোনও এক জন করতে পারেন না।
এ ব্যাপারে রাজেন্দ্রনাথ পাণ্ডের জবাব, ‘‘সরকারের আমাকে ছাড়া চলে না, এতে আমি কী করতে পারি? আমি কোথায় কোথায় কাজ করি সরকার তো সবই জানে। প্রাইভেট প্র্যাক্টিসও করি। উপাচার্য হয়েও কোনও কাজই আমি বাদ দিইনি।’’ এর পরে তাঁর মন্তব্য, ‘‘সরকারই আমায় উপাচার্য করেছে, এসএসকেএমে রেখেছে, রিক্রুটমেন্ট বোর্ড, হেলথ অ্যাডভাইজ়রি বোর্ড, মাল্টি ডিসিপ্লিনারি গ্রুপ, টেকনিক্যাল কমিটি—সর্বত্র রেখেছে।’’
প্রথমে অবশ্য এসএসকেএমে তাঁর নামে আউটডোর টিকিট হওয়ার কথা রাজেন্দ্রবাবু স্বীকার করেননি। বলেছেন, ‘‘না তো। হয় না তো!’’ তার পরে তাঁকে দেখানো হয়, সোমবার, ১৩ অগস্ট এসএসকেএম থেকে সোমা পাল ও সঞ্জয় সিংহ নামে দুই রোগীর আউটডোর টিকিট করানো হয়েছে তাঁর নামে। তখন তিনি বলেন, ‘‘হ্যাঁ, আমি সোমবার সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত আউটডোরে রোগী দেখে দিই।’’ এমসিআইয়ের কাছে তাঁর নাম এসএসকেএমের শিক্ষক-চিকিৎসক হিসাবে নথিভুক্ত থেকে যাওয়াটা যে নিয়মবিরুদ্ধ, সে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দেন, ‘‘ওরকম অনেক হয়।’’
উপাচার্য হওয়ার আগে রাজেন্দ্রবাবু ছিলেন এসএসকেএমের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান। ২০১৭ সালের নভেম্বরে তিনি রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার পর থেকে সেই পদে স্থায়ী কোনও বিভাগীয় প্রধানকে খাতায়-কলমে রাখা হয়নি। এক জন কার্যনির্বাহী প্রধান রয়েছেন। হাসপাতালের একাংশের অভিযোগ, রাজেন্দ্রনাথ পাণ্ডেই এখনও বিভাগীয় প্রধানের ক্ষমতা ভোগ করেন, সেই কারণেই কাউকে প্রধান করা হয়নি। রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কোনও জরুরি পরিস্থিতিতে অল্প সময়ের জন্য কোনও হাসপাতালের শিক্ষক-চিকিৎসক হিসেবে থাকতে পারেন। এত দিন থাকাটা এমসিআইয়ের নিয়মে বাঞ্ছনীয় নয়। কেন রাজেন্দ্রনাথ পাণ্ডে এত দিন রয়েছেন এবং কেন এসএসকেএমের নেফ্রোলজি বিভাগে নতুন কোনও প্রধান নিয়োগ করা হয়নি সে ব্যাপারে খোঁজ নেব।’’
স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ববর্তী উপাচার্য ভবতোষ বিশ্বাসের কথায়, ‘‘আমাকে আর জি কর হাসপাতালের কার্ডিওভাস্কুলার সার্জারির বিভাগীয় প্রধানের পদ ছেড়ে উপাচার্য হতে হয়েছিল। সমস্ত প্রাইভেট প্র্যাক্টিসও বন্ধ করতে হয়েছিল।’’ তবে উপাচার্য পদে থেকে প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করার অভিযোগ এক সময়ে ভবতোষবাবুর বিরুদ্ধেও উঠেছিল বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। আর এক পূর্ববর্তী উপাচার্য অমিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ছাত্রদের প্রয়োজনে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এক-আধ দিন কোনও মেডিক্যাল কলেজে পড়াতে পারেন। কিন্তু শিক্ষক-চিকিৎসক হিসেবে এমসিআই-এর কাছে তাঁকে দেখানো যাবে না। সেটা অপরাধ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy