জমির দখলদারিকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন দু’টি সংস্থার মধ্যে লড়াই তুঙ্গে উঠেছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে জমি বিতর্ক গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। এরই মধ্যে একটি সংস্থা অভিযোগ তুলেছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ও ছবি ব্যবহার করে উন্নয়নের নামে তাঁদের জমি জোর করে দখল করে নেওয়া হচ্ছে। এই নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে ওই সংস্থার অফিসার ও কর্মী মহলে।
যে দু’টি সংস্থার মধ্যে লড়াই বেধেছে, সেই দু’টি হল হাওড়া পুরসভা ও হাওড়া উন্নয়ন সংস্থা (এইচআইটি)। একটি সংস্থার মাথায় রয়েছেন প্রবীণ তৃণমূল নেতা ও সাঁকরাইল কেন্দ্রের বিদায়ী বিধায়ক শীতল সর্দার। তিনি এইচআইটি-র চেয়ারম্যান। অন্য সংস্থার শীর্ষে রয়েছেন হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী। এইচআইটি-র অভিযোগ, উন্নয়নের নামে হাওড়া পুরসভা জোর করে তাঁদের জমি দখল করে সুইমিং পুল, পার্ক এবং ফুটবল অ্যাকাডেমি তৈরি করে নিজেদের আয়ের পথ প্রশস্ত করছে। এর ফলে, ওই সব জমিতে বিভিন্ন আবাসন প্রকল্প করে এইচআইটি যে আয়ের পরিকল্পনা করেছিল, তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে পাকাপাকি ভাবে। যদিও হাওড়া পুরসভার তরফে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
এইচআইটি-র মুখ্য ইঞ্জিনিয়ার তুষারকান্তি দে বলেন, ‘‘একের পর এক জমি কোনও আলোচনা ছাড়াই পুরসভা যে ভাবে দখল করে নিচ্ছে, তাতে সংস্থার কর্মীদের ভবিষ্যতে পেনশন পাওয়ার পথও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পেনশনের টাকা রাজ্য সরকার দেয় না। ওই সব জমিতে আবাসন প্রকল্প তৈরি করে এবং তা বিক্রি করে যে আয় হতো, তা দিয়েই সংস্থার কর্মীদের পেনশন দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল।’’
এইচআইটি-র কর্মীদের একাংশের আরও অভিযোগ, হাওড়া শহরে সংস্থার যে সব জমি রয়েছে, তা রাতারাতি দখল করে সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ও নাম দিয়ে কোনও একটা প্রকল্প ঘোষণা করে দেওয়া হচ্ছে। তার পরে ঘটা করে সেটির উদ্বোধনও করা হচ্ছে। অভিযোগ, ইতিমধ্যে এ ভাবেই ডুমুরজলায় এইচআইটি আবাসনের বাসিন্দাদের জন্য তৈরি একটি মাঠ দখল করে সেখানে ক্রিকেট অ্যাকাডেমি তৈরি হবে বলে পুরসভা নোটিস বোর্ড লাগিয়ে আশপাশের দখলদারদের হটিয়ে দিয়েছে।
একই ভাবে ওলাবিবিতলায় একটি পার্ক দখল করে মাঠের মধ্যেই সার দিয়ে দোকানঘর তৈরি করে এইচআইটি-র জমিতে থাকা দখলদারদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। পুরসভার তরফে ইতিমধ্যে ওই জায়গাতেই আন্তর্জাতিক মানের একটি সুইমিং পুল তৈরির ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে। এই ঘটনায় দুই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যেই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
ওলাবিবিতলার প্রবীণ বাসিন্দা দীপেন্দু নাথ বলেন, ‘‘খেলার মাঠ নষ্ট করে সুইমিং পুল তৈরির পুর-উদ্যোগ ভোটের চমক ছাড়া কিছু নয়। মাঝখান থেকে মাঠটিতে খেলাধুলো, দুর্গাপুজো সব বন্ধ হয়ে গেল।’’ ডুমুরজলা আবাসনের বাসিন্দারা জানান, এলাকার মানুষজনকে বঞ্চিত করে পুরসভা জোর করে মাঠ দখল করে ক্রিকেট অ্যাকাডেমি করছে, তা তাঁরা মেনে নেবেন না। এক বাসিন্দা সুমন রায় বলেন, ‘‘আমরা পুরসভার এই উদ্যোগের প্রতিবাদ করে পুর-কমিশনারকে বিষয়টি জানিয়েছি। তাতেও কাজ না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।’’
এইচআইটি-র চেয়ারম্যান শীতলবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর আদর্শ মতো উন্নয়ন আমরাও চাই। কিন্তু তা অন্য সংস্থার জমি দখল করে নয়। পুরসভা আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই একের পর এক জমি নিয়ে নিচ্ছে। এটা ঠিক হচ্ছে না। আমরা এ জন্য ওদের সঙ্গে আলোচনা চেয়ে চিঠি দিয়েছি।’’
যদিও এইচআইটি-র সব অভিযোগ অস্বীকার করে হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এখানে দখলদারির কোনও ব্যাপার নেই। শহরে যে উন্নয়নের কাজ হচ্ছে, তা সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই করছি। ওলাবিবিতলা পার্ক বা ডুমুরজলা আবাসনের মাঠ নিয়ে পুরসভা খুব শীঘ্রই এইচআইটি-র সঙ্গে আলোচনায় বসবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy