Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রথম দিনের মেনুতে সবই হাল্কা খাবার

এতটা পথ উজিয়ে এসেছে ওরা। আপ্যায়নের ব্যবস্থা তাই আগেভাগেই তৈরি ছিল। চিড়িয়াখানার বড়সাহেব আশিসবাবু জানালেন, খাঁচায় ঢোকার পরেই ওআরএস মেশানো জল দেওয়া হয় সবাইকে। পশুরাজ থেকে জাগুয়ার কিংবা মাউস ডিয়ার, ঢকঢক করে তৃষ্ণা মিটিয়েছে।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৭ ০৬:৩০
Share: Save:

ঘড়ির কাঁটা সাড়ে তিনটে পেরোতেই উসখুশ করছিলেন আলিপুর চিড়িয়াখানার বড়সাহেব। বারবার চোখ চলে যাচ্ছিল হাতঘড়়ির দিকে। চারটে বাজতেই কানে এল গাড়ির শব্দ। এক ছুটে সদলবল গেটের সামনে হাজির তিনি।

রবিবার ভোর চারটে। খুলে গেল আলিপুর চিড়িয়াখানার বিরাট লোহার গেট। পুলিশের পাইলট কারের পিছন পিছন ঢুকলেন নবদম্পতিরা। তার পরে চিড়িয়াখানার কর্মীরাই তাদের পৌঁছে দিলেন যার যার ঘরের সামনে। চার দিনের যাত্রা শেষে, ভোরের আলো ফোটার আগেই ঘরে ঢুকে গেল মালালা, আর্য, বিশ্বাস, শ্রুতিরা।

না, এরা কেউ মানুষ নয়। নিখাদ চারপেয়ে। মালালা, আর্য জাগুয়ার। বিশ্বাস ও শ্রুতি ভারতীয় সিংহ-দম্পতি। এদের সঙ্গে এসেছে ছ’টি মাউস ডিয়ারও। রোহন, রাণু, কিরণ, অরুণা, রেখা এবং নীলম। মানুষ না হলেও এরা আলিপুরের কর্মীদের কাছে মানুষের চেয়ে কম ভিআইপি নয়। হায়দরাবাদ থেকে গাড়িতে চাপিয়ে আনার সময়ে চিন্তায় রীতিমতো কালঘাম ছুটেছিল অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত থেকে কিপার সুভাষচন্দ্র দে, শিবপ্রসাদ কাহারদের। নবদম্পতিদের স্বাগত জানাতে শনিবার রাতেই দাঁতনে বাংলা-ওড়িশা সীমান্তে হাজির হয়েছিলেন সুভাষ, শিবপ্রসাদ।

এতটা পথ উজিয়ে এসেছে ওরা। আপ্যায়নের ব্যবস্থা তাই আগেভাগেই তৈরি ছিল। চিড়িয়াখানার বড়সাহেব আশিসবাবু জানালেন, খাঁচায় ঢোকার পরেই ওআরএস মেশানো জল দেওয়া হয় সবাইকে। পশুরাজ থেকে জাগুয়ার কিংবা মাউস ডিয়ার, ঢকঢক করে তৃষ্ণা মিটিয়েছে। কিন্তু দিনভর কেউই তেমন গা নাড়ায়নি।

আশিসবাবু বলছেন, চার দিন ধরে গাড়িতে করে এসেছে। একটু তো কাহিল হবেই। ‘‘দুপুরেই ফলার সেরেছিল হরিণেরা। বিকেলের পরে সিংহ-জাগুয়ারদের পাতে পড়েছে মুরগির মাংস। ক্লান্ত শরীরে মোষ কিংবা শুয়োরের মতো গুরুপাকে বদহজম হতে পারে। সে কথা ভেবেই চিকেনের হাল্কা ডায়েট,” বলছেন চিড়িয়াখানার এক শীর্ষ কর্তা।

তা হলে কি আজ, সোমবার থেকেই দর্শকদের সামনে হাজির হবে নবদম্পতিরা? চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এখনই সামনে আনা হবে না এই নতুন সদস্যদের। মাসখানেক অন্তরালেই কাটাতে হবে তাদের।
এই সময়কে বলা হয় ‘কোয়ারান্টাইন’ করে রাখা।

এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আলিপুরের কর্তারা বলছেন, এক পরিবেশ থেকে আর এক পরিবেশে এসে মানিয়ে নিতে গিয়ে নতুন বাসিন্দারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে কি না, সেটা দেখা হয়। তার উপরে পথে-ঘাটে যদি কোনও সংক্রমণের শিকার হয়ে থাকে, তা হলেও এই এক মাসে বোঝা সম্ভব। তা না করে বাইরে ছেড়ে দিলে সেই সংক্রমণ অন্য পশুদের শরীরেও ঢুকে পড়তে পারে।

নতুন অতিথিদের তাই সিসিটিভি এবং কিপারদের কড়া নজরে রাখা হচ্ছে। তার কিছু নিদর্শন দেখা গিয়েছে বৃহস্পতিবার থেকেই। ওই দিন সকালেই জাপান থেকে ক্যাঙারু এসেছে আলিপুরে। এর আগের দফায় চেক প্রজাতন্ত্রের লাল ক্যাঙারু আনা হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি। এ বার তাই বাড়তি সতর্কতা।

চিড়িয়াখানার অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, কল্যাণী থেকে চার রকমের ঘাস এসেছে। রোদের গরম এড়াতে ঘরের বাইরে খড়ের ছাউনি, চারটে ফ্যান লাগানো হয়েছে। সন্ধের পরে নজরদারি রাখতে সিসি ক্যামেরার লিঙ্ক নিজের স্মার্টফোনে করে নিয়েছেন অধিকর্তা। তাতেই ধরা পড়েছে, জোয়ার ঘাস, গাজর, রাঙা আলু বেশি মনে ধরেছে অজি পশুদের। সেই মতোই তৈরি হচ্ছে ডায়েট চার্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE