Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মাঝরাতে হাসপাতালে চোর-পুলিশ লুকোচুরি

লেক টাউনে একটি খুনের মামলায় মে মাস থেকে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দি নীরজ। পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার বিকেলে ব্লিচিং পাউডার খেয়ে ফেলে সে।

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৮ ০২:২৯
Share: Save:

বন্দি পালানোর আড়াই ঘণ্টার চিত্রনাট্য! যার সাক্ষী থাকল মঙ্গলবার রাতের আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। চিত্রনাট্যের নায়ক, বছর সাতাশের নীরজ সাউয়ের অবশ্য পালানো হয়নি। শেষ পর্যন্ত ধরাই পড়তে হয়েছে। তবে আড়াই ঘণ্টায় রীতিমতো নাজেহাল পুলিশ।

লেক টাউনে একটি খুনের মামলায় মে মাস থেকে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দি নীরজ। পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার বিকেলে ব্লিচিং পাউডার খেয়ে ফেলে সে। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় আর জি করে। পুলিশ জানায়, রাত দশটা নাগাদ শৌচালয়ে যায় নীরজ। বাইরে পাহারায় ছিলেন দুই কারারক্ষী। হঠাৎই তাঁদের নাকে ঝাঁঝালো গন্ধ আসে। তাতে কিছুটা সরে বন্দির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন কারারক্ষীরা। বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেলেও শৌচালয়ের দরজা না খোলায় বন্দিকে ডাকাডাকি করতে থাকেন তাঁরা। কিন্তু ভিতর থেকে সাড়়া মেলেনি। শুরু হয় দরজায় ধাক্কাধাক্কি। অবশেষে নিজেদের চেষ্টায় দরজা খুললেও রক্ষীরা দেখেন, ভিতরে কেউ নেই। হঠাৎই এক রক্ষীর চোখে পড়ে, শৌচালয়ের জানালার পাশে থাকা বি সি রায় ক্যাজ়ুয়ালটি ব্লকের সাততলার পাইপ বেয়ে নীচে নামছে নীরজ। তা দেখে চিৎকার শুরু করেন দুই কারারক্ষী।

খবর পৌঁছয় হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের কাছে। জরুরি বিভাগ থেকে বন্দি উধাও হওয়ার ঘটনা শুনে তৎপর হয়ে ওঠেন হাসপাতালের পুলিশকর্মীরা। খোঁজখবর শুরু করে পুলিশও। তাঁদেরও চোখে পড়ে, এক যুবক পাইপ বেয়ে জরুরি বিভাগের একটি শেড থেকে নীচে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। সে দৃশ্য চোখ এড়ায়নি জরুরি বিভাগের কাছে থাকা রোগীর পরিজনেদেরও। সব মিলে শুরু হয়ে যায় হইচই। তখনই শেড থেকে পুলিশকে দেখতে পায় নীরজ। আবার আচমকা উধাও হয়ে যায় সে। হাসপাতালের অন্দরে ফের শুরু হয় চোর-পুলিশের ‘খেলা’।

একাধিক বার দমদম সংশোধনাগার ‘ঘোরা’ নীরজকে খুঁজতে গিয়ে পুলিশের নজরে আসে, হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের ডিরেক্টরের দোতলার ঘরের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের পাশে জানালায় বড় ফাঁক রয়েছে। তা দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের। সেই ঘরের সামনে যায় পুলিশ। কিন্তু ঘর বন্ধ থাকায় ঢুকতে পারেননি পুলিশকর্মীরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ওই ঘরের চাবি আনা হয়। এর পরেই তালা খুলে আলো জ্বালানোর পরে দেখা যায়, পালানোর চেষ্টা করা ওই বন্দি একটি চেয়ারের নীচে চুপটি করে বসে। নীরজকে দেখে অবশেষে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন কারারক্ষী এবং পুলিশকর্মীরা। শেষ হয় আড়াই ঘণ্টার লুকোচুরি।

পুলিশ জানায়, এর আগেও চুরি-ছিনতাইয়ের মতো বিভিন্ন কারণে বন্দি থাকার সময়ে কর্তৃপক্ষকে নাজেহাল করেছে নীরজ। বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার পাশাপাশি ওই যুবক মাদকাসক্তও বলে সূত্রের খবর।

মঙ্গলবার পাকড়াও করার পরে বুধবারও অবশ্য কারারক্ষীদের ‘স্বস্তি’তে থাকতে দেয়নি নীরজ। পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে ফের পালানোর চেষ্টা করে সে। বিছানা থেকে নেমে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য দৌড় দেয় সে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। আগের রাতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন নীরজকে আরও কড়া নজরে রাখছেন কারারক্ষী ও পুলিশকর্মীরা। ওয়ার্ডের মধ্যেই তাকে ধরে ফেলেন কারারক্ষীরা। শেষ পর্যন্ত তাকে জরুরি বিভাগে নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবু ‘স্বস্তি’তে নেই বন্দির পাহারায় থাকা কারারক্ষী!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

RG Kar Hospital Uproar incident Thief-Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE