Advertisement
E-Paper

সুড়ঙ্গে ফের ভবঘুরে, প্রশ্নে মেট্রোর সুরক্ষা

প্ল্যাটফর্মে চার দিকে অষ্টপ্রহর সিসিটিভি-র চোখ। সঙ্গে রেল রক্ষী বাহিনী (আরপিএফ) ও কলকাতা পুলিশের বাহিনী। এ ছাড়া মেট্রোকর্মীরা তো আছেনই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৬ ০৬:২৮

প্ল্যাটফর্মে চার দিকে অষ্টপ্রহর সিসিটিভি-র চোখ। সঙ্গে রেল রক্ষী বাহিনী (আরপিএফ) ও কলকাতা পুলিশের বাহিনী। এ ছাড়া মেট্রোকর্মীরা তো আছেনই। কিন্তু এই সুরক্ষা-বলয় কতটা ঠুনকো, সেটা বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছে সুড়ঙ্গে লোকজনের অনধিকার প্রবেশ। এর পরে দুষ্কৃতীরাও যে ঢুকতে পারবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? বৃহস্পতিবার বেলগাছিয়ার কাছে সুড়ঙ্গ থেকে এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করার পরে এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে যাত্রী থেকে শুরু করে মেট্রোর অন্দরে।

কী ঘটেছিল এ দিন?

জানা গিয়েছে, দমদম থেকে ছেড়ে একটু গতিতেই সুড়ঙ্গে এগোচ্ছিল ডাউন মেট্রোটি। সুড়ঙ্গে ঢোকার কিছুটা পরেই একটি বাঁক রয়েছে। সেটা পেরিয়ে এগোলেই বেলগাছিয়া স্টেশন। বাঁক পেরিয়ে ট্রেন সোজা হতেই হেডলাইটের আলোয় সুড়ঙ্গের অনেক দূর পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যায়। আর তাতেই চক্ষু চড়কগাছ চালকের।

তিনি দেখেন, ট্রেনের সামনে লাইন ধরে বেলগাছিয়ার দিকে দৌড়চ্ছেন এক ব্যক্তি। আর সময় নষ্ট করেননি চালক। সুড়ঙ্গেই থামিয়ে দেন ট্রেন। ট্রেনের আওয়াজ কানে যেতেই ওই ব্যক্তিও লাইনের পাশে দাঁড়িয়ে পড়েন। উপায়ান্তর না পেয়ে চালক ঘটনাটি জানান মেট্রোর কন্ট্রোলে। কন্ট্রোল খবর পাঠায় বেলগাছিয়া স্টেশনে।

এর পরেই তৃতীয় লাইনের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে মেট্রোর কর্মীরা আরপিএফকে সঙ্গে নিয়ে লাইন ধরে হাঁটতে শুরু করেন। কিছুটা এগিয়ে তাঁরা দেখেন, ধীর পায়ে স্টেশনের দিকে এগিয়ে আসছেন ওই ব্যক্তি। ওই অবস্থাতেই তাঁকে পাকড়াও করে স্টেশনে নিয়ে আসেন পুলিশকর্মীরা।

সুড়ঙ্গে মানুষ ঢোকা কলকাতা মেট্রোয় নতুন নয়। এর আগেও পার্ক স্ট্রিটে সুড়ঙ্গে এক মহিলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ট্রেন থামিয়ে উদ্ধার করেছিলেন চালক। কিন্তু বারবার এমন ঘটতে থাকায় মেট্রোর সুরক্ষা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। মেট্রোকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, মেট্রোয় কলকাতা পুলিশ, আরপিএফ, সিসিটিভি ইত্যাদি নানা সুরক্ষা থাকার কথা বলা হলেও সুড়ঙ্গে বারবার লোক ঢুকে দেখিয়ে দিচ্ছে, ওই সুরক্ষা কার্যত লোক দেখানো। তাঁদের প্রশ্ন, এর পরে যে অনায়াসে সুড়ঙ্গে দুষ্কৃতী ঢুকবে না, তার নিশ্চয়তা দেবে কে?

এই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি মেট্রোকর্তাদের থেকে।

কী ভাবে এবং কোথা থেকে ওই ব্যক্তি সুড়ঙ্গে ঢুকেছিলেন, তা এখনও মেট্রোর সুরক্ষা কর্মীদের কাছে স্পষ্ট হয়নি। তাঁরা দমদম ও বেলগাছিয়া স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ বারবার খতিয়ে দেখছেন। রাতে মেট্রোর জনসংযোগ অফিসার ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, দমদম স্টেশন থেকে সুড়ঙ্গ পর্যন্ত লাইন যাওয়ার উড়ালপুলে কাজ চলছে। ওই জায়গায় মাল নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি সিঁড়ি লাগানো হয়েছে। সম্ভবত ওই সিঁড়ি বেয়েই ওই যুবক উঠেছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি জেরায় জানিয়েছেন, তাঁর নাম রাজু সাউ। বাড়ি উল্টোডাঙায়। কেন বা কোথা দিয়ে তিনি সুড়ঙ্গে নামলেন, বারবার জিজ্ঞাসা করার পরেও তিনি তার জবাব দেননি। পুলিশের সন্দেহ, রাজু মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি যে জুতো পরে লাইনের উপর দিয়ে ছুটছিলেন সেটি ছিল দড়ি দিয়ে বাঁধা।

অন্য দিকে, এ দিনই সিগন্যাল বিকল হয়ে অফিসের ব্যস্ত সময়ে বিঘ্নিত হয় মেট্রো চলাচল। চূড়ান্ত অসুবিধায় পড়েন যাত্রীরা। মেট্রো সূত্রে খবর, সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ মহানায়ক উত্তমকুমার স্টেশনে আপ লাইনে একটি সিগন্যাল খারাপ হয়ে যায়। ওই সময়ে ‘পেপার ক্লিয়ারেন্স’ (কাগজে লিখে অনুমতি দেওয়া)–এর মাধ্যমে ট্রেন চালাতে গিয়ে প্রতিটা ট্রেনের দেরি হয়।

যাত্রীদের বক্তব্য, আটটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে একটি মেট্রো বাতিল করে দেওয়ায় পরের মেট্রোয় অস্বাভাবিক ভিড় হয়। যদিও মেট্রোকর্তারা ট্রেন বাতিল করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, বাতিল নয়, দু’টি ট্রেন দেরিতে চলেছে।

সম্প্রতি টালিগঞ্জে একটি অতিরিক্ত প্ল্যাটর্ফম চালু করেছেন মেট্রো-কর্তৃপক্ষ। তখন লাইনের সিগন্যাল ব্যবস্থাও পাল্টানো হয়েছে। সম্ভবত সেই কারণেই এ দিনের বিপত্তি বলে মনে করছেন মেট্রোকর্তারা।

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

Metro tunnel Vagabond security
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy