Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

স্বাস্থ্য অটুট, জোরে হাওয়া দিলে তবেই ঘুরবে ‘বুড়ি’ পরি

ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পরি কেন ঘোরে না, এ প্রশ্ন দীর্ঘদিনের। ভিক্টোরিয়ায় আসা দর্শক তো বটেই, বাইরে থেকেও অনেকে জানতে চান, পরির নড়াচড়া বন্ধ কেন?

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৩
Share: Save:

মৃদুমন্দ মলয় বাতাস নয়! ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পরির চাই জোরালো হাওয়া। নইলে সে ঘুরতে নারাজ। সাম্প্রতিক এক পরীক্ষায় এমনটাই জানা গিয়েছে।

ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পরি কেন ঘোরে না, এ প্রশ্ন দীর্ঘদিনের। ভিক্টোরিয়ায় আসা দর্শক তো বটেই, বাইরে থেকেও অনেকে জানতে চান, পরির নড়াচড়া বন্ধ কেন? এর আগেও একাধিক বার পরির ঘোরা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তা নিয়ে জল্পনাও কম হয়নি। সেই কারণেই সম্প্রতি পরিটিকে আবার ভাল ভাবে পরীক্ষা করান ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষ। তাতেই জানা যায়, পরির স্বাস্থ্য এখনও অটুট। অভাব জোরালো হাওয়ার। পরিকে ঘুরতে হলে হাওয়ার গতি অন্তত ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার হওয়া দরকার।

ভিক্টোরিয়া সূত্রের খবর, ‘বায়োডেটা অব দি এঞ্জেল’ নামে ওই পরি সংক্রান্ত ভিক্টোরিয়ার পুরনো নথি বলছে, ১৯২১ সালে প্রায় সাড়ে ছয় টন ওজনের ওই পরিকে যখন ভিক্টোরিয়ার মাথায় বসানো হয়েছিল, তখন তার ঘুরতে ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার গতির হাওয়া দরকার হত। কিন্তু বর্তমানে সেই পরীর ঘুরতে ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার হাওয়া প্রয়োজন। কারণ, বল বেয়ারিংয়ের যে প্রযুক্তির সাহায্যে ওই পরি ঘোরে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার ক্ষয় হয়েছে। তা ছাড়া, ৯৭ বছর আগে যখন ওই পরি বসানো হয়েছিল, তখন শহরে বহুতল ছিলই না। কিন্তু এখন ভিক্টোরিয়া সংলগ্ন এলাকা বহুতলে ভরে গিয়েছে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই বাতাসের গতি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।

শুধু বেশি গতির হাওয়াই নয়, পরির ঘোরা বা না ঘোরা হাওয়ার অভিমুখের উপরেও নির্ভরশীল। হাওয়ার অভিমুখ অনুকূল থাকলে তবেই পরি ঘুরবে, না হলে নয়। ভিক্টোরিয়ার কিউরেটর-সেক্রেটারি জয়ন্ত সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘আমরা একটা কথা স্পষ্ট ভাবে জানাতে চাই যে, পরির ঘোরা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু আগে যেখানে ১৫ কিলোমিটার গতির হাওয়াতেই কাজ হত, সেখানে এখন ২০ কিলোমিটার গতির হাওয়া লাগছে।’’

আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, ভিক্টোরিয়া সংলগ্ন এলাকায় সাধারণত ১২-১৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে হাওয়া বয়। মার্চ থেকে মে এবং বর্ষাকালে ওই গতি কখনও কখনও ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটারও হয়। আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলেন, ‘‘২০ কিলোমিটার গতির হাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। সাধারণত ভিক্টোরিয়া এলাকায় হাওয়ার গতি থাকে ১২-১৫ কিলোমিটার।’’

ইতিহাস বলছে, রানি ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর পরপরই তাঁর স্মৃতিকে সম্মান জানাতে ওই সৌধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন লর্ড কার্জন। সেই আমলে ওই স্মৃতিসৌধ নির্মাণে খরচ হয়েছিল প্রায় এক কোটি পাঁচ লক্ষ টাকা। গত নয় দশকে ওই পরিকে নিয়ে অজস্র গুজবও তৈরি হয়েছে। ‘বিগ ব্রাদার ইজ ওয়াচিং ইউ’-এর মতো বলা হত, রানি ভিক্টোরিয়ার প্রতিনিধি ওই পরি সারা শহরকে দেখছে। অনেকে বিশ্বাস করতেন, ব্রিটিশ-রাজের নজরে যে সকলেই রয়েছে, ওই পরি তারই প্রতীক।

শুধু এটাই নয়। এমনও জনশ্রুতি রয়েছে যে, ওয়েদার-ককের মতো ওই পরিও বনবন করে ঘোরে। পরির নীচে পারদের একটি পাত্র রয়েছে। সেটাই নাকি পরির ঘূর্ণনে সাহায্য করে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানাচ্ছেন, পারদের পাত্রের সঙ্গে পরির ঘোরার কোনও সম্পর্কই নেই। বর্ষাকালে বজ্রপাতের সময়ে ওই পারদ ‘আর্থিং’-এর কাজ করে। পরি ঘোরে বল-বেয়ারিং প্রযুক্তির মাধ্যমে। আর ওয়েদার-কক সাধারণত পাতলা টিনের বা অন্য কোনও ধাতব পাত্রের হয়। তাদের ওজন সামান্য। কিন্তু এখানে পরির ওজন সাড়ে ছয় টনের মতো।

পরি ঘুরলে বাঁশির আওয়াজ হয়, এমন খবরও ছড়িয়েছিল এক সময়ে। কিন্তু সে সব নিছকই কল্পনা বলে জানাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। পরির রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে যুক্ত জেসপ-এর প্রাক্তন ইঞ্জিনিয়ার মন্টু দাস বলেন, ‘‘পরির ঘোরায় কোনও সমস্যাই নেই। আর পরির বাঁশি বাজে বলে যে কথা শোনা যায়, তারও কোনও ভিত্তি নেই। কারণ ওই বাঁশি ফাঁপা নয়, নিরেট। ফলে বাঁশি বাজার কোনও প্রশ্নই নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Victoria Memorial, fairy wind
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE