Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ডাক্তারি হস্টেলে মদের আসর ভাঙতে ওয়ার্ডেন?

কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছেন, “এঁরা ডাক্তারি পাশের পরেও হস্টেলের ঘর দখল করে রেখেছিলেন। পাশাপাশি, হস্টেলে মদের আসর বসিয়ে পড়াশোনার পরিবেশ নষ্টের অভিযোগও হচ্ছিল। অথচ হস্টেলে থাকার জন্য যে ছাত্রেরা অপেক্ষা করে থাকেন, তাঁদের ঘর দেওয়া যাচ্ছিল না।” 

 এসএসকেএমের হস্টেলের ছাদে পড়ে রয়েছে মদের বোতল। নিজস্ব চিত্র

এসএসকেএমের হস্টেলের ছাদে পড়ে রয়েছে মদের বোতল। নিজস্ব চিত্র

জয়তী রাহা
শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৯ ০২:৩৬
Share: Save:

হস্টেলে নিয়মিত মদের আসর বসে। মত্ত ছাত্রদের চেঁচামেচিতে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, এমন অভিযোগ আসছিল কিছু দিন ধরেই। অবশেষে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত মাসে বেলগাছিয়ার ললিত মেমোরিয়াল বয়েজ হস্টেল থেকে বহিষ্কার করেন তিন ডাক্তারকে।

কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছেন, “এঁরা ডাক্তারি পাশের পরেও হস্টেলের ঘর দখল করে রেখেছিলেন। পাশাপাশি, হস্টেলে মদের আসর বসিয়ে পড়াশোনার পরিবেশ নষ্টের অভিযোগও হচ্ছিল। অথচ হস্টেলে থাকার জন্য যে ছাত্রেরা অপেক্ষা করে থাকেন, তাঁদের ঘর দেওয়া যাচ্ছিল না।”

যদিও ডাক্তারি হস্টেল নিয়ে এই অভিযোগ নতুন নয় বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। আর জি করের এক শিক্ষক-চিকিৎসক বলছেন, ‘‘ডাক্তারি পড়ুয়া বা ডাক্তার নয় এমন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আগে এই কলেজের হস্টেলের ঘর দখলের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। শাসকদলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা মুষ্টিমেয় ডাক্তারি ছাত্রদের ‘দাদা’র জন্য হস্টেলের ঘর দখলের নজিরও রয়েছে এখানে।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এমন অভিযোগ অবশ্য কমবেশি অন্য মেডিক্যাল কলেজেও রয়েছে। তবে তা নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ পড়ুয়া ও কর্তৃপক্ষেরা। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, মাস কয়েক আগে হস্টেলের কয়েক জন মত্ত পড়ুয়ার বিরুদ্ধে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে দিয়ে মদ কিনতে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছিল। ওই ছাত্র তা আনতে অস্বীকার করলে তাঁকে র‌্যািগংয়ের অভিযোগ ওঠে‌। কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে বিষয়টি মিটমাট হয়। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সদ্য হস্টেল ছেড়ে বেরোনো এক ছাত্র জানাচ্ছেন, ছাত্রাবাসে প্রায়ই বসে মদের আসর। বেশির ভাগ পড়ুয়া তা অপছন্দ করলেও প্রতিবাদ করতে পারেন না।

সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কয়েক মাস আগে এক জুনিয়র প্যারামেডিক্যাল ছাত্রকে যৌন হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছিল এক ডাক্তারের বিরুদ্ধে‌। ওই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন ও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে জানাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। কলেজের এক শিক্ষক-চিকিৎসক বলছেন, অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং-এর তিন দিকে আছে হস্টেল তিনটি। তাই কর্তৃপক্ষের নজর আছে সেখানে।

গত বছরেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হস্টেল বিতর্কে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য। সূত্রের খবর, সেই হস্টেল থেকেও মাঝেমধ্যে নিয়মভঙ্গের অভিযোগ আসছে‌। অভিযোগ, এসএসকেএম হাসপাতালের হস্টেলের ঘর ও ছাদেও মদের আসর বসে। ছাদে পড়ে থাকে খালি বোতল। যদিও সেই অভিযোগ মানতে চাননি কলেজ কর্তৃপক্ষ।

হস্টেলে থাকাকালীন নিয়মানুবর্তিতা যে থাকা দরকার তা মানছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের মতে, নার্সিং হস্টেলের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। নয়তো মজা করাটা বিকৃতির পর্যায়ে চলে যাবে। যার সাম্প্রতিকতম দৃষ্টান্ত এন আর এস চত্বরে ১৬টি কুকুরছানাকে পিটিয়ে খুনের ঘটনা। তার চার বছর আগে ওই কলেজেরই হস্টেলে কোরপান শাহ নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে কয়েক জন ডাক্তারি পড়ুয়ার বিরুদ্ধে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে অল ইন্ডিয়া ডিএসও, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য চিকিৎসক কবিউল হক বলেন, ‘‘রাজ্যের বেশির ভাগ মেডিক্যাল, ডেন্টাল কলেজের হস্টেলে নেশার আসর চলে মূলত শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের মদতে। বেশির ভাগ পড়ুয়া এর বিরুদ্ধে। এ সব বন্ধে রাজ্য সরকারকে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে।’’

রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, “প্রতিটি হস্টেলেই সুপার থাকেন, তিনি এক জন চিকিৎসক। তাঁর পক্ষে ছাত্রদের উপরে নজরদারি চালানো সম্ভব নয়। তাই স্থির হয়েছে, প্রতিটি হস্টেলে এক জন ওয়ার্ডেন নিয়োগ করা হবে। পাশাপাশি থাকবেন নিরাপত্তারক্ষীও। প্রক্রিয়া চলছে। এ বছরের মধ্যেই তা কার্যকর হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Alcohol Student Law and Order Warden
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE