Advertisement
E-Paper

‘দায়’ নিয়ে ঠেলাঠেলি, জল-ছবি একই

অঝোর বৃষ্টিতে মানিকতলা মেন রো়ড এবং সংলগ্ন বেশ কিছু এলাকার অবস্থা এমনই হয়েছিল যে, কার্যত গৃহবন্দি ছিলেন বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে কয়েকটি জায়গায় জল নামলেও এলাকার সার্বিক জল-ছবিটা বদলায়নি

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৮ ০২:৫৫
বৃহস্পতিবার এমনই হাল ছিল কাঁকুড়গাছি রেলব্রিজ এলাকার। নিজস্ব চিত্র

বৃহস্পতিবার এমনই হাল ছিল কাঁকুড়গাছি রেলব্রিজ এলাকার। নিজস্ব চিত্র

বর্ষা আসে বর্ষা যায়। পরিস্থিতি বদলায় না!

বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া অঝোর বৃষ্টিতে মানিকতলা মেন রো়ড এবং সংলগ্ন বেশ কিছু এলাকার অবস্থা এমনই হয়েছিল যে, কার্যত গৃহবন্দি ছিলেন বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে কয়েকটি জায়গায় জল নামলেও এলাকার সার্বিক জল-ছবিটা বদলায়নি। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত জলমগ্ন ছিল কাঁকুড়গাছি ব্রিজের নীচ এবং তার আশপাশের এলাকা। কাউন্সিলর এলাকা পরিদর্শনে বেরিয়ে স্থানীয় কয়েকটি কারখানা এবং রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে কাঠগড়ায় তোলেন। তবে স্থানীয়েরা বলছেন, পর্ষদ এবং কাউন্সিলর দু’পক্ষই সমান ‘দোষী’। কাউন্সিলর জল জমার দায় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের উপরে চাপাচ্ছেন। আর পর্ষদ দায়ী করছে কাউন্সিলর এবং পুরসভাকে। আদতে ভোগান্তি হচ্ছে সেই এলাকাবাসীর।

যদিও এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, গত কয়েক বছর আগেও চিত্রটা এমন ছিল না। তখন নিকাশি ব্যবস্থার জন্য বেশ নামডাক ছিল মানিকতলা এবং উল্টোডাঙার। বলা হত, উত্তরের এ জমি ‘দুর্জয় ঘাঁটি’! যতই বৃষ্টি হোক, জল ঠিক নেমে যায়। চলতি বর্ষাতেও একেবারেই জলে হাবুডুবু খায়নি উল্টোডাঙা এবং মানিকতলার গোটা এলাকা। শুধু ব্যতিক্রম মানিকতলা মেন রোড এবং সংলগ্ন কলকাতা পুরসভার ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কিছুটা অংশ। এই সমস্যার জন্য এলাকার কয়েকটি কারখানার উপরে দায় চাপিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর শান্তিরঞ্জন কুণ্ডু জানিয়েছেন, ওই কারখানাগুলিকে কিছুতেই ‘নিয়ন্ত্রণ’ করতে পারছেন না তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘কারখানাগুলি থেকে বৃষ্টির সময় জলের সঙ্গে লোহার গুঁড়ো বেরোয়। তাতেই আটকে যায় নিকাশি নালা। ফলে জল দাঁড়িয়ে যায় মানিকতলা মেন রোডে।’’ তাঁর অভিযোগ, কারখানাগুলিতে প্লাস্টিকও পোড়ানো হয় বিনা বাধায়।

প্রসঙ্গটি তিনি বরো বৈঠকেও তোলেন। এর ভিত্তিতেই দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে চিঠি পাঠানো হয় কলকাতা পুরসভার ৩ নম্বর বরোর তরফে। তবে তাতেও পরিস্থিতি বদলায়নি বলে অভিযোগ ওই কাউন্সিলরের। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা ও পুরকর্মীরা বারবার চেষ্টা করেও নালার মুখ আটকানো বন্ধ করতে পারছি না। পর্ষদ কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। চিঠি পাঠিয়েছি, তবু কেউ পরিদর্শনে আসেননি। এখন বৃষ্টি হলেই ভুগতে হচ্ছে আমাদের।’’

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হয়েছিল রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সঙ্গে। পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র আগেই জানিয়েছিলেন, এ রকম কোনও চিঠি তাঁরা পাননি। সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন ছিল, ‘‘ওই কারখানাগুলোকে লাইসেন্স দেয় পুরসভা। তারা কেন কারখানাগুলোর লাইসেন্স বাতিল করছে না?’’ তবে এ দিনের জল জমার প্রেক্ষিতে কাউন্সিলর ফের একই অভিযোগ তোলায় ফোন করা হয়েছিল কল্যাণবাবুকে। তিনি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে একটা কথাও বলতে চাই না।’’

তা হলে বিষয়টি দেখবেন কে? জল-যন্ত্রণায় নাজেহাল স্থানীয়েরা বলছেন, কেউই আদতে সমস্যা মেটাতে চাইছেন না। দু’পক্ষই একে অপরের উপরে দোষ চাপিয়ে দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ভীষ্মদেব কর্মকার নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বললেন, ‘‘বর্ষা এলে এ সব নিয়ে একটু চর্চা হয়। তার পরে সকলে ভুলে যান। আদতে কিছুই
বদলাচ্ছে না।’’

তবে কি বছর বছর জল-যন্ত্রণাই ভবিতব্য ওই এলাকার বাসিন্দাদের? আপাতত সব পক্ষই বলছেন, ‘‘দায় আমার নয়!’’

Rain Monsoon
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy