বানভাসি: এক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই ডুবেছে মহাত্মা গাঁধী রোড। সোমবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
বর্ষা ঢোকার পরেও এত দিন বৃষ্টি হচ্ছিল না। সোমবারের সন্ধ্যার পরে হুড়মুড়িয়ে নামা বৃষ্টি কিছুটা অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলে দিল কলকাতা পুরসভাকে। প্রথম বৃষ্টিতে দেখা গেল প্রস্তুত নয় রেলও।
বিকেলে শহরের আকাশে ঘন কালো মেঘ দেখেও বৃষ্টির আশা করেননি শহরবাসী। গত সাত দিনে মাঝেমধ্যেই আকাশের এমন অবস্থা হলেও শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি নামেনি। সোমবার অবশ্য সন্ধ্যা ঘনাতেই বৃষ্টি নামে। মিনিট চল্লিশের টানা বৃষ্টিতে জলও জমল শহরের অনেক এলাকায়। মরসুমের প্রথম বৃষ্টিতেই নাকাল হতে হল শহরবাসীকে।
পুরসভা ও লালবাজার সূত্রে খবর, উত্তরের ঠনঠনিয়া, চিত্তরঞ্জন অ্যাভনিউ, নারকেলডাঙা মেন রোড, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট, উল্টোডাঙা আন্ডারপাস, সুকিয়া স্ট্রিট, রামমোহন সরণি, কলেজ স্ট্রিট, দক্ষিণের বালিগঞ্জ প্লেস, কালীঘাট, কসবার সুইনহো স্ট্রিট, সদানন্দ রোড, গল্ফগ্রিন, যোধপুর পার্ক, খিদিরপুর, মোমিনপুর, গার্ডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজ, বেহালার একাধিক অঞ্চল, পূর্বের তপসিয়া, পঞ্চান্নগ্রাম, মুকুন্দপুর-সহ শহরের বিভিন্ন রাস্তায় জল জমে যায়। এর ফলে সপ্তাহের প্রথম দিনে অফিস থেকে ঘরে ফেরার মুখে নাকাল হতে হয়েছে অনেককেই।
পুরসভা সূত্রে খবর, উত্তর কলকাতায় সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত এক ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ৬০ মিলিমিটার। আর দক্ষিণে বৃষ্টি শুরু হয়েছে এক ঘণ্টা পরে। ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে প্রায় ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। তবে বৃষ্টি থামার কিছু ক্ষণের মধ্যে বিভিন্ন রাস্তায় জল নেমে গিয়েছে বলে পুরসভার দাবি। নিকাশি দফতরের এক আধিকারিক জানান, এক ঘণ্টা পর বৃষ্টি থেমে না গেলে সমস্যা বাড়ত।
প্রাক বর্ষার প্রস্তুতির জন্য দিন ১৫ আগে পুরভবনে বৈঠক ডাকে পুর প্রশাসন। সেখানে হাজির ছিলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী, পূর্ত, কেএমডিএ, টেলিফোন, রেল, সেচ, সিইএসসি-সহ পুরসভার পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার এবং অফিসারেরা। শহরে জল জমলে কী করণীয় তা নিয়ে আলোচনাও হয়। তার পরেও প্রথম দিনের বৃষ্টিতে জল জমা ঠেকাতে পারল না কেন পুরসভা?
পুরসভার দাবি, বৃষ্টির সময়ে জোয়ার থাকায় পাম্প চালানো যায়নি। যেটুকু জল জমেছে তার কারণেই। রাত সাড়ে আটটার পরে ভাটা শুরু হওয়ার পরে পাম্পিং স্টেশনের পাম্প চালু হয়ে যায়। জমা জল দ্রুত নামতে থাকে। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বৃষ্টি হলে জল তো জমবেই। জল নেমেও গিয়েছে তাড়াতাড়ি।’’
বৃষ্টিতে বিভিন্ন রাস্তায় জল জমে যাওয়ায় যানবাহনের গতিও স্লথ হয়ে যায়। অনেক রাত পর্যন্ত যানজটে ভুগেছে শহরও। এর মধ্যে দক্ষিণের সুইনহো স্ট্রিটে গাছ ভেঙে পড়ায় দুর্ভোগ বাড়ে। বর্ষার প্রথম বৃষ্টিতেই পূর্ব রেলের হাওড়া ও শিয়ালদহ ডিভিশনের ট্রেন চলাচল দীর্ঘক্ষণ বিঘ্নিত হয়। রেল সূত্রে খবর, কোথাও সিগন্যাল অকেজো হয়েছে, কোথাও ওভারহেড তারে বিদ্যুৎ ছিল না বেশ কিছুক্ষণ। তার জেরে ঘরমুখো যাত্রী চূড়ান্ত দুর্ভোগের শিকার হন।
শিয়ালদহ মেন লাইনের দমদম থেকে কাঁকিনাড়া পর্যন্ত বিভিন্ন স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় জল জমে সিগন্যাল অকেজো হয়ে যায়। পেপার সিগন্যাল দিয়ে ট্রেন চালাতে গিয়ে সব জট পাকিয়ে যায়। বর্ষার প্রস্তুতি রেল নিয়েছিল কি না, প্রশ্ন কিন্তু তা নিয়েও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy