Advertisement
E-Paper

কার খুঁটিতে কত খুঁত, লড়াই আমরা-ওরা’র

বাম আমলের স্তম্ভ? না দিদি জমানার? ভোটের মুখে খাস কলকাতায় উড়ালপুল ভেঙে বিপর্যয়ের পরে সেতুর স্তম্ভের মান নিয়ে তরজায় জড়িয়ে পড়ল যুযুধান শাসক ও বিরোধী শিবির! মুখ্যমন্ত্রী আঙুল তুললেন বাম জমানার দিকে। তাঁকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানালেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য এবং সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:০৯
এ ভাবেই চাপা পড়েন পথচলতি বহু মানুষ। বৃহস্পতিবার দেশকল্যাণ চৌধুরীর তোলা ছবি।

এ ভাবেই চাপা পড়েন পথচলতি বহু মানুষ। বৃহস্পতিবার দেশকল্যাণ চৌধুরীর তোলা ছবি।

কার খুঁটিতে কত জোর!

বাম আমলের স্তম্ভ? না দিদি জমানার? ভোটের মুখে খাস কলকাতায় উড়ালপুল ভেঙে বিপর্যয়ের পরে সেতুর স্তম্ভের মান নিয়ে তরজায় জড়িয়ে পড়ল যুযুধান শাসক ও বিরোধী শিবির! মুখ্যমন্ত্রী আঙুল তুললেন বাম জমানার দিকে। তাঁকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানালেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য এবং সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম।

উড়ালপুল ভেঙে পড়ে বহু প্রাণহানি এবং অনেকের আহত হওয়ার পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অতীতের বাম আমলকে নিশানা করতে ছাড়েননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এমন মর্মান্তিক ঘটনার পরে রাজনৈতিক মন্তব্য করতে চাই না। ওই নির্মাণ সংস্থাটি কালো তালিকাভুক্ত ছিল। তাদের আমরা ছাড়ব না। কিন্তু প্রকল্পটা শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে বাম আমলে।’’ মমতা যদিও এর সঙ্গে বলেছেন, ‘‘দুর্ঘটনাটা আমাদের সময়ে ঘটেছে। তাই যা করার দরকার, আমরা সবটাই করব।’’

বাম জমানাতেই ঠিকাদার সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গড়া হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই বৃহস্পতিবার নলহাটিতে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও দাবি করেছেন, বাম আমলে শুরু হওয়া প্রকল্পটাই ভুল ছিল!

মুখ্যমন্ত্রী বাম আমলকে টেনে আনার জেরেই বাম নেতারা আরও তদন্তের পাল্টা দাবি তুলেছেন। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবু যেমন বলেছেন, ‘‘২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বাম আমলে যে সব মালপত্র দিয়ে কাজ হয়েছে, তা নিয়ে তদন্ত করে দেখা হোক। আবার তৃণমূল সরকারের সময়ে যে কাজ হয়েছে, তা-ও তদন্ত করে দেখতে হবে। তা হলেই স্পষ্ট হবে।’’ আলিমুদ্দিনে একই কথা বলেছেন সেলিম। সেই সঙ্গে তিনি নির্মাণের মূল দায়িত্বে থাকা সংস্থা কেএমডিএ-র চেয়ারম্যান ফিরহাদ (ববি) হাকিমের পদত্যাগও দাবি করেছেন। সেলিমের মন্তব্য, ‘‘এটা রাজনীতির সময় নয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সরকারের প্রথম দিকে যে ভাবে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় বাম জমানা টেনে এনেছিলেন, এ বারও প্রথম কাজ সেটাই করেছেন! তাই এই কথাগুলো আমাদের বলতে হচ্ছে।’’

সিপিএম এবং তৃণমূল— দু’পক্ষই জানে, শোকের প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পরে ভোটের মুখে পুল ভাঙা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কই হবে। যে কারণে গোটা নবান্নকে ঘটনাস্থলে নিয়ে এসে মমতা তদারকির দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন। প্রশ্ন তুলেছেন ঠিকাদার সংস্থা নিয়েও। প্রধান ঠিকাদার সংস্থা হায়দরাবাদের আইভিআরসিএল-কে প্রায় পাঁচ বছর আগে কালো তালিকাভুক্ত করেছিল অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার ও রেলওয়ে বিকাশ নিগম। কেন কালো তালিকাভুক্ত সংস্থাকে দিয়েই কাজ চালানো হচ্ছিল, তদন্তে এ প্রশ্নও উঠবে। আর এই জায়গা থেকেই সরকারকে চ্যালেঞ্জ করেছে বামেরা।

তাঁদের সময়ে তৃণমূল নেতৃত্ব ও কিছু স্থানীয় বাসিন্দা ওই উড়ালপুল নির্মাণে নানা ভাবে বাধা দিয়েছিলেন, এই অভিযোগ এনে অশোকবাবু বলেন, ‘‘নানা বাধা সত্ত্বেও কিছু পাইলিং, পিলার ও টিয়ারের কাজ হয়েছিল। ওই আমলে তৈরি কোনও স্ল্যাব ভাঙেনি। কোনও অংশে ক্ষতিও হয়নি। যে অংশের ক্ষতি হয়েছে, সবই এই সময়ে তৈরি! যে অংশ বুধবার রাতভর ঢালাই করা হয়েছে, সেটাই ভেঙে গিয়েছে!’’ প্রাক্তন পুরমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘আমাদের নিয়োগ করা ঠিকাদার সংস্থা যদি ভাল কাজ না করে, কালো তালিকাভুক্ত হয়, তা হলে মুখ্যমন্ত্রী তাদের বাতিল করলেন না কেন?’’

মুখ্যমন্ত্রীর তাড়াহুড়োকেই পরোক্ষে দায়ী করে অশোকবাবু বলেন, ‘‘জগদ্ধাত্রী পুজোর সময়ে মুখ্যমন্ত্রী ওখানে গিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, ভোটের আগেই এই উড়ালপুল চালু হয়ে যাবে। তাঁর কথা রাখতে গিয়ে নির্মাণ-সংস্থা তাড়াহুড়ো করে কাজ করেছে। প্রয়োজনীয় নিয়ম মানেনি। সেটাও দুর্ঘটনার কারণ বলে মনে হচ্ছে।’’ ঘটনাস্থল ঘুরে এসে একই অভিযোগ করেছেন সেলিম। তাঁর কথায়, ‘‘পুল না ভাঙলে ভোটের মুখে তা চালু করে দেওয়ার কৃতিত্ব নিতেন মুখ্যমন্ত্রী। এখন ভেঙেছে বলে দোষ চাপাচ্ছেন বাম আমলের উপরে! তাঁর কথা রাখতেই বুধবার ওয়েল্ডিং করে কোনও সতর্কতা নেওয়া হয়নি।’’

আইভিআরসিএল কাকে সাব-কনট্র্যাক্ট দিয়েছিল, নকশা বা নির্মাণ সরঞ্জাম অর্থাৎ সিমেন্ট, লোহার গুণগত মানে কোনও ঘাটতি ছিল কি না, এ সব নিয়েও তদন্ত করতে হবে বলে দাবি তোলেন সেলিম। সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, সিন্ডিকেট-রাজ ও ঘুষের রাজত্বে উড়া়লপুল ও তার স্তম্ভের গুণগত মানের সঙ্গে আপস করা হয়েছে। এলাকার প্রাক্তন সাংসদ, সিপিএমের সুধাংশু শীলের কথায়, ‘‘গত পাঁচ বছর ধরে উড়ালপুলের কাজ তো হচ্ছে তৃণমূলের আমলেই! যে ভাবে ঠিকাদারদের শোষণ চলছে, তাতে নিজেদের লাভের পরিমাণ ঠিক রাখতে তারা কেমন কাঁচা মাল দিয়ে কাজ করেছে, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে!’’ স্থানীয় তৃণমূল নেতা সঞ্জয় বক্সী এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু ভোটের বাজারে খুঁটির জোর নিয়ে জোর তর্ক জারিই থাকছে!

আরও পড়ুন:
রাজ্য ঠুঁটোই, উদ্ধারকাজ শেখাল সেনা

Flyover Collapse Kolkata tragedy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy