—প্রতীকী ছবি।
স্বামীর কান কেটে নেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার পরে এখন জামিনে মুক্ত মহিলা। এ বার তাঁরই বিরুদ্ধে নিজের ন’মাসের সন্তানকে জঞ্জালের স্তূপে ফেলে আসার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার রাতে সেই শিশুকে উদ্ধার করে শনিবার ফের মায়ের হাতেই তুলে দিয়েছে নারকেলডাঙা থানার পুলিশ। এর পরেই প্রশ্ন উঠেছে সেই শিশুর নিরাপত্তা নিয়ে। পুলিশের দাবি, সতর্ক করা হয়েছে মহিলাকে। ফের এমন ঘটলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ। পুলিশ জানায়, নারকেলডাঙা কসাই বস্তির একটি জঞ্জালের স্তূপে শিশুর কান্না শুনতে পান স্থানীয়েরা। তাঁরাই থানায় খবর দেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, ঘটনা শুনে দেখতে গিয়েছিলেন কসাই বস্তির বাসিন্দা ফতেমা বিবিও। গিয়ে দেখেন, শিশুটি তাঁরই নাতি মহম্মদ আলি। কয়েক মাস আগে তাঁর ছেলে তনভিরের কান কাটার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন বৌমা।
শিশুটি তনভিরেরই ছেলে। শনিবার ফতেমা বলেন, ‘‘সকলে বলাবলি করছিলেন, কেউ একটা বাচ্চাকে ফেলে গিয়েছে। খুব কাঁদছে। দেখেই চিনতে পেরেছি, এ আমার নাতি আলি।’’ ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজে আসা পুলিশকর্মীদের তিনিই শিশুর পরিচয় জানান। এর পরে তনভির এবং তাঁর মাকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের পরে নিশ্চিত হওয়া যায় ওই সন্তান তনভিরেরই। শিশুটি তার মা, তনভিরের স্ত্রী মুমতাজের কাছেই থাকত। গত জুলাই মাসে তনভিরের কান কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল মুমতাজ এবং তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে। সেই সময়ে অভিযোগ ওঠে, মুমতাজ এবং তাঁর বোনেরা তনভিরকে নানা অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য করতেন। রাজি না হলে তনভিরকে মারধর করা হত বলেও অভিযোগ। এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরে ফেরার ছিলেন মুমতাজ। পরে মুমতাজ এবং তাঁর এক বোন-সহ তিন সহযোগীকে শিয়ালদহ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এখন তিনি জামিনে মুক্ত।
সেই ঘটনার কারণে মুমতাজের ঠিকানা ছিল তদন্তকারীদের কাছে। ওই রাতেই সেখানে গেলে তাঁর দেখা মেলেনি। রাতের মতো তনভিরের মায়ের কাছেই শিশুটির থাকার ব্যবস্থা হয়। সন্তানকে ফেলে যাওয়ার জন্য স্ত্রী মুমতাজের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তনভির। শনিবার দুপুরে পুলিশ মুমতাজের খোঁজ পায়। থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পরে লিখিত বয়ানের ভিত্তিতে সন্তানকে মুমতাজের হাতেই তুলে দেওয়া হয়। মুমতাজের বিরুদ্ধে তনভির এ দিন অভিযোগ তোলেন, ‘‘ও আমাকে খুন করার চেষ্টা করেছে। কান কেটে নিয়েছে। এ বার আমাদের ছেলেকেও মেরে ফেলতে চাইছে।’’ এ দিন মুমতাজের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘তনভির আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নেবে বলেও নিচ্ছে না। কাল মনে হল, আমাকে জেলে যেতে হলে ছেলেকে দেখব কী করে? বোনকে বলেছিলাম, তনভিরদের পাড়ায় আলিকে রেখে আয়।’’ সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘থানা থেকে বলেছে, কান কাটার অভিযোগ এখনও প্রমাণ হয়নি। ভুল ভেবেছিলাম। ছেলেকে আমার কাছেই রাখব। তনভিরকেও দেব না।’’
কিন্তু এর পরেও মায়ের কাছে থাকা কি শিশুটির জন্য নিরাপদ, প্রশ্ন তুলেছেন তনভিরের পরিবার ও পড়শিরা। চিন্তিত তনভির এ দিন বলেন, ‘‘আমি আলির দায়িত্ব নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ বলল, মায়ের কাছেই ভাল থাকবে শিশু।’’ নারকেলডাঙা থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা খোঁজ-খবর রাখব। সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy