Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অ্যাকাউন্টের টাকা হাতিয়ে ধৃত ২ ব্যাঙ্ককর্মী

এটিএম-ডেবিট কার্ড হাতিয়ার করে টাকা লোপাট নতুন নয়। এ বার জালিয়াতির নিশানায় দীর্ঘ দিন অব্যবহৃত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও। গ্রাহকের অনুপস্থিতির সুযোগে তাঁর নামে চেকবই ইস্যু করে টাকা সরানোর এই কায়দা যে অভিনব, তা বলছেন গোয়েন্দা কর্তারাই। যেমন ঘটেছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ধর্মতলা শাখায়। জানা গিয়েছে, জালিয়াতিতে জড়িত ব্যাঙ্কেরই দুই কর্মী।

শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৫ ০২:২৬
Share: Save:

এটিএম-ডেবিট কার্ড হাতিয়ার করে টাকা লোপাট নতুন নয়। এ বার জালিয়াতির নিশানায় দীর্ঘ দিন অব্যবহৃত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও। গ্রাহকের অনুপস্থিতির সুযোগে তাঁর নামে চেকবই ইস্যু করে টাকা সরানোর এই কায়দা যে অভিনব, তা বলছেন গোয়েন্দা কর্তারাই। যেমন ঘটেছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ধর্মতলা শাখায়। জানা গিয়েছে, জালিয়াতিতে জড়িত ব্যাঙ্কেরই দুই কর্মী।

২০১৩-এর পরে দীর্ঘ দিন ব্যাঙ্কমুখো হননি কৈলাশ রাই। মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা আনতে গত বছর ব্যাঙ্কে যান। টাকা তুলতে গিয়েই চক্ষু চড়কগাছ। কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা নেই। চেক দিয়ে সব টাকা তুলেছেন তিনিই।

হতবাক হয়ে যান ঠিকা শ্রমিক কৈলাশ। ক’বছর আগে অ্যাকাউন্টে সারা জীবনের সঞ্চয় গচ্ছিত রাখার পরে দীর্ঘ দিন অ্যাকাউন্টটি ব্যবহারই করেননি তিনি। চেকবইও তোলেননি। অথচ ব্যাঙ্কের দাবি, তাঁর নামেই চেক ইস্যু হয়েছে। সুরাহা না পেয়ে গত এপ্রিলে নিউ মার্কেট থানার দ্বারস্থ হন তিনি। প্রতারণার অভিযোগও দায়ের করেন।

পুলিশ জানায়, শুক্রবার রায়দিঘি থেকে দু’জনকে ধরা হয়। তাঁদের জেরা করে শনিবার গ্রেফতার করা হয় ব্যাঙ্কেরই দুই কর্মীকে। ধৃতেরা হলেন ব্যাঙ্কের সাফাইকর্মী অনিলকুমার বাল্মীকি ও করণিক সুধীনকুমার সরকার। পুলিশের দাবি, চক্রের পাণ্ডা এই দু’জনই। তাঁদের কাছে মিলেছে কৈলাশবাবুর নামে ইস্যু হওয়া অব্যবহৃত চেক। পুলিশের দাবি, ওই ব্যাঙ্ককর্মীদের সাহায্যেই একটি দুষ্কৃতী চক্র এই কাণ্ড ঘটায়। ধৃত ব্যাঙ্ককর্মীরা গ্রাহকদের তথ্য দিতেন দুষ্কৃতীদের। তার পরেই দীর্ঘ দিন অব্যবহৃত ওই অ্যাকাউন্টে জালিয়াতির ছক কষা হয়।

পুলিশ জানায়, উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা কৈলাশ কলকাতায় মর্ট লেনে থাকতেন। বছর কয়েক আগে ধর্মতলার ওই ব্যাঙ্কের শাখায় অ্যাকাউন্ট খোলেন তিনি। সেখানেই জমা রাখেন কয়েক লক্ষ টাকা। এর পরে সে ভাবে ওই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেননি। এ কথা জানতেন অনিল এবং সুধীন। তাঁরা এই তথ্য জানান চক্রের অন্য দুই সদস্য, রায়দিঘির বাসিন্দা সুদৃতি ভুঁইয়া ও চন্দনকুমার পাটোয়াকে। পুলিশের দাবি, গত বছরের প্রথম দিকে অভিযুক্তেরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন কৈলাশবাবু উত্তরপ্রদেশে রয়েছেন। এর পরেই প্রতারণার ছক কষেন অনিল। কৈলাশের নামে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে চেকবই ইস্যু করার আবেদন করেন। পুলিশের দাবি, কৈলাশকে অন্ধকারে রেখেই অনিল ও সুধীন তাঁর নামে চেক বই ইস্যু করেন। এর পরে কৈলাশের সই জাল করে তাঁর অ্যাকাউন্টের সব টাকা তুলে পাঠিয়ে দেন রায়দিঘির এক ক্লাবের অ্যাকাউন্টে। যা কৈলাশ জানতে পারেন মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা তুলতে গিয়ে। ওই ঘটনা ঘটে ২০১৪ সালের গোড়ায়।

পুলিশ জানায়, তদন্তে দেখা যায় চেক ইস্যু করার জন্য যা যা পদ্ধতি মানা দরকার, তার অনেক ক্ষেত্রেই ফাঁক থেকে গিয়েছে। গাফিলতি রয়েছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষেরও। সঙ্গে তাঁরা এটাও দেখতে পান চেক এবং আবেদনপত্রে কৈলাশের সই জাল। এবং ওই চেকের সাহায্যে তাঁর অ্যাকাউন্টের তিন লক্ষ টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে রায়দিঘির এক ক্লাবের অ্যাকাউন্টে। সেই অ্যাকাউন্টের বিষয়ে জানতে গিয়ে খোঁজ মেলে সুদৃতির। শুক্রবার তাঁকে গ্রেফতার করে নিউ মার্কেট থানা। তাঁকে জেরার পরেই সন্ধান মেলে চন্দনকুমারের। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, সুদৃতি ও চন্দনকুমারকে জেরা করেই সন্ধান মেলে ব্যাঙ্ককর্মী অনিল এবং সুধীনের। শনিবার দীর্ঘ জেরার পর তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, পুরো টাকাটাই সরানো হয়েছিল ওই ক্লাবের অ্যাকাউন্টে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sibaji dey sarkar bank account money fraud
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE