Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

....

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:০০
Share: Save:

অন্তরে বাহিরে

আজও শুনতে পাই কিঙ্করদা তাঁর উদাত্ত কণ্ঠে গান গাইছেন— আজ তারায় তারায় দীপ্ত শিখার অগ্নি জ্বলে। আর দেখতে পাই রক্তকরবীর সেই বিশুপাগলকে, যা কিঙ্করদা নিজে সাজতেন।’— রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ভূমিকা-য় প্রকাশ দাস সম্পাদিত রামকিঙ্কর: অন্তরে বাহিরে (দীপ) বইটির নামকরণ যেন অর্থবহ হয়ে ওঠে। ‘মানুষ রামকিঙ্কর আর শিল্পী রামকিঙ্করে কোথাও ছলনা করেনি। দুয়ে মিলে পূর্ণ রামকিঙ্কর। আমরা তাঁর শিল্প সৃষ্টিকে আর তাঁর নিত্যদিনের জীবনকে আলাদা করে দেখতে চাইলেও সম্ভব নয়।’ রামানন্দবাবুর এ মন্তব্য কী আশ্চর্য সমর্থন পায় রামকিঙ্করের স্বীকারোক্তিতে ‘শান্তিনিকেতনের সাঁওতালরা আমায় বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে।... ওরা এত অল্পে তুষ্ট যে বিস্ময় লাগে। সেই বিস্ময়ের আনন্দেই আমি ওদের ছবি করি। মূর্তি গড়ি। যেন মনে হয় ওদের চিনি। ওরাও বোধ হয় আমাকে চেনে। তাই এদের এই চলমান জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তকে আমি আমার ছবি ও মূর্তিতে ধরে রাখার চেষ্টা করেছি।’

দরিদ্র অন্ত্যজ নিরক্ষর পরিবারের সন্তান রামকিঙ্কর কোন গভীর প্রজ্ঞায় হয়ে উঠেছিলেন শিল্পী, তারই হদিশ এনে দেয় বইটি। সম্পাদক-কৃত বিন্যাসে বিভিন্ন ভাবে চেনা যায় শিল্পী এবং মানুষটিকে। রামকিঙ্করের নিজের নানাবিধ রচনা, আত্মকথন, সাক্ষাত্‌কার, চিঠিপত্র যেমন আছে, তেমনই আছে তাঁকে নিয়ে তাঁর নিকটজন আর সমকালীন শিল্পীদের রচনা, তাঁর শিল্পকাজ নিয়ে নিয়ে নির্বাচিত প্রবন্ধ। সঙ্গে তাঁর ভাস্কর্য ও চিত্রের পঞ্জি, জীবনপঞ্জি, আবার তাঁকে নিয়ে চর্চার রচনাপঞ্জিও। তাঁর আঁকা বেশ কিছু ছবিও পাবেন পাঠক এ-বইয়ে, যেমন ডানদিকে ‘পিকনিক’ (১৯৩৮, ক্যানভাসে তেলরং)। বাঁদিকে বইটির প্রচ্ছদ। আর শুরুতেই সম্পাদক তাঁর পূর্বকথা-য় খেয়াল করিয়ে দিয়েছেন ‘আমাদের দুর্ভাগ্য জীবিতকালে প্রবাদপ্রতিম হয়ে যাওয়া এহেন শিল্পীর শিল্পকাজের যথাযথ সংরক্ষণের কথা তেমনভাবে ভাবেননি তাঁর অনুরাগীদের কেউই।’ বইটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টায় অবনীন্দ্র সভাঘরে। সঙ্গে আলোচনা সভা। উপস্থিত থাকবেন গণেশ হালুই, যোগেন চৌধুরী, রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাধাকৃষ্ণন, বিপিন গোস্বামী, রবীন মণ্ডল, অরুণ সেন প্রমুখ শিল্পী ও শিল্প-আলোচকেরা।

স্পর্শনন্দন

বছরভর হয়ে চলা কবিতা প্রতিযোগিতা বা পাঠে দৃষ্টিহীনদের দেখা যায় না। তাই দৃষ্টিহীনদের লেখা কবিতা নিয়েই ২৪ বছর ধরে ব্রেল পত্রিকা ‘স্পর্শনন্দন’ প্রকাশ করে চলেছেন সত্যজিত্‌ মন্ডল। সঙ্গে বাংলা, হিন্দি, সাঁওতালি, আর নেপালি ভাষায় দৃষ্টিহীনদের কবিতা প্রতিযোগিতা। বাংলায় শঙ্খ ঘোষ বেছে নেন প্রথম ৭ জন বিজয়ীকে। গত তিন বছর ধরে শুরু হয়েছে ‘দৃষ্টিহীনদের কবিতা উত্‌সব’। এতে স্বরচিত কবিতা ছাড়াও বিখ্যাত কবিদের কবিতা ব্রেলের মাধ্যমে পাঠ করেন দৃষ্টিহীনরা। এ ছাড়াও গত বছর থেকে এক জন সম্ভাবনাময় দৃষ্টিহীন কবিকে দেওয়া হচ্ছে ২০০০ টাকা আর্থিক মূল্যের ‘স্পর্শনন্দন’ পুরস্কার। গত বছর কলকাতার বীথিকা সরকার, এ বার পুরস্কৃত হয়েছেন আলিপুরদুয়ারের অভিজিত্‌ সাহা।

শতবর্ষ

১৯১৫-য় মাইকেল মধুসূদনের বাড়ির কাছে রাজকৃষ্ণ গোস্বামীর বাড়িতে তৈরি হয়েছিল ‘মাইকেল লাইব্রেরি’। তিনি ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। উদ্দেশ্য: মধুসূদনের স্মৃতিরক্ষা ও এলাকার মানুষের শিক্ষার প্রসার। পরবর্তী কালে লাইব্রেরির স্থায়ী ঠিকানা হয় ১৭/১/২ মনসাতলা লেন-এ। এখানেই রবীন্দ্রনাথ ও প্রফুল্লচন্দ্রের আশীর্বাণী নিয়ে লাইব্রেরির ভিত্তি প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৪০-এর ১০ ফেব্রুয়ারি। তাতে অর্থ সাহায্য করেন ময়ূরভঞ্জের মহারানি সুচারু দেবী সহ অনেকে। এখানের মধুসূদনের মূর্তিটি তাঁর দৌহিত্র বি এস ডটন-এর অর্থ সাহায্যে তৈরি করেন সুনীল পাল। রবিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি শঙ্খ ঘোষ, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে শুরু হচ্ছে লাইব্রেরির শতবর্ষ উত্‌সব। ১৬ ফেব্রুয়ারি ‘বিজ্ঞান, স্বদেশ ও সমাজ’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেবেন তারকমোহন দাশ।

রাজার মৃত্যু

বাহারাম বেইজাঈ যে নাটকটি লেখেন ১৯৭৯-তে, তাঁর দেশ ইরানে এক ভয়ংকর রাজনৈতিক পালাবদলের সময়কে রূপকার্থে তুলে আনার উদ্দেশ্যে, সে নাটক এত বছর পর সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের নতুন নাট্যগোষ্ঠীর স্পেকট্যাক্টর্স-এর প্রথম প্রযোজনা। আজ সন্ধে সাড়ে ৬টায় জ্ঞানমঞ্চে। ‘রাজার মৃত্যু’ (ছবিতে) তাঁরই অনুবাদ ও নির্দেশনা। অন্য দিকে শিশিরকুমার ভাদুড়ীর ১২৫তম জন্মদিন উদ্যাপনে দেশজ থিয়েটারে তাঁর নবীন যুগের প্রণয়ন নিয়ে আলোচনা সভা। বাংলা আকাদেমিতে ১১ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টায়, বলবেন নাট্যজনেরা। চিরকিশোর ভাদুড়ির তত্ত্বাবধানে, উদ্যোগে শৈশিরিক।

শিক্ষা

একতরফা শিক্ষকের লেকচার শোনা নয়, শিক্ষার মান উন্নয়নে ছাত্রছাত্রীদেরও তাতে অংশ নেওয়া উচিত। কথাটা অনেকেই বলেন আজকাল। আবার এ নিয়ে রয়েছে বিতর্কও। কারণ পদ্ধতিটি রূপায়ণের নানা সমস্যা। অনেকের আশঙ্কা, এতে বিশৃঙ্খলাই হবে। সম্প্রতি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোডাকটিভিটি, কোয়ালিটি, অ্যান্ড রিলায়বিলিটি (আইএপিকিউআর) এর অ্যানিভার্সারি লেকচারে ‘স্টুড্ন্ট টিচার পার্টনারশিপ ইন এডুকেশন’ বিষয়ে বলতে গিয়ে এই নিয়ে আলোচনায় গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ভিভিয়ান বমফিল্ড বললেন, প্রয়োগগত সীমাবদ্ধতা থাকলেও পাঠক্রম তৈরি বা স্কুল পরিচালনায় ছাত্রদের অংশ নেওয়া উচিত। অনেক দেশই এ ভাবে ভাবছে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যাটিস্টিক্স বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এস পি মুখোপাধ্যায় ও শিক্ষক অদিতি ঘোষ।

অহর্নিশ

রবীন্দ্রনাথের সময়ে ত্রিপুরার সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে বাংলার আত্মিক যোগ স্থাপিত হলেও পরবর্তী কালে তাতে ভাটা পড়ে। সেই সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে উদ্যোগী হয়েছে ‘অহর্নিশ’ পত্রিকা। মঙ্গলবার, ১০ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে পাঁচটায় জীবনানন্দ সভাঘরে তাঁদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে ‘ত্রিপুরা সাহিত্য সন্ধ্যা ২০১৫’ (প্রথম বর্ষ: কবি নরেশ গুহ ও ত্রিপুরার গবেষক রমাপ্রসাদ দত্ত স্মরণে)। সংবর্ধিত হবেন ‘পূর্বমেঘ’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কবি রামেশ্বর ভট্টাচার্য। ‘ত্রিপুরার বাংলা কবিতা/একটি পরিক্রমা’ বিষয়ে নরেশ গুহ স্মারক বক্তৃতা দেবেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান বিকাশ রায়। অনুষ্ঠানে ত্রিপুরার কবি-লেখকদের উপস্থিতিতে তাঁদের লেখা পাঠ করা হবে। উদ্বোধন করবেন শঙ্খ ঘোষ।

গানের গল্প

‘বদর বদর বত্‌সর বত্‌সর নৌকা চলে, নৌকা চলে’— ভেলায় চলেছে বেহুলা-লখিন্দর। এ শুধু লোকগান নয়। তাতে উঠে এসেছে সওদাগরের বাণিজ্যের গল্প, সঙ্গে প্রেমকাহিনি। সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় এমনই সুরমূর্ছনায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ভাসল ‘দ্য স্টোরি অব সংস’-এ। পরিকল্পনা, নির্মাণে সঙ্গীত পরিচালক দেবজ্যোতি মিশ্র। চৈতন্য মহাপ্রভুর সময় থেকে শুরু করে আজকের বাংলা গান ও তার নানা গল্প নিয়ে সাজানো এই মিউজিকাল থিয়েটার।

ছিল পুরুষ ও মহিলা ঢাকিদের সমবেত বাজনা, পরে গহওরজানের গান, কবিগান আর সে কালের জমিদারবাড়ির গান। দেবজ্যোতির নিজের কথায়, এ হল “ধ্রুপদী সঙ্গীত শিল্পীদের জন্য প্রাচ্যের অতীন্দ্রিয় চোলাই। বাংলা গানের ঐতিহ্যকে পৃথিবীর মঞ্চে পৌঁছে দিতে এই উদ্যোগ।” দেবজ্যোতির চিত্রনাট্যে সে সব গান-গল্প শোনালেন ‘বঙ্গলাল দাশ’ (অভিনয়ে জয় সেনগুপ্ত)। গোড়ার করুণ সুর কী ভাবে পরে জোরালো হয়ে ওঠে ‘বন্দেমাতরম্’-এ, বা ক্ল্যারিনেট কী ভাবে যাত্রার অঙ্গ হয়ে উঠল, সব-ই শোনা গেল তাতে। আয়োজনে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পর্যটন দফতর ও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল।

শিকড়ের সন্ধান

বাংলার লোকগানের বিশাল সম্পদ রক্ষা করতেই ১৯৬২’তে জন্ম হয়েছিল ‘ভ্রমরা’র। লোকগান সংগ্রহ করে তার সংরক্ষণ ও প্রসারই করে সংস্থাটি। সঙ্গে লোকগান ও প্রাসঙ্গিক তথ্য নিয়ে ভ্রমরা প্রকাশ করে চলেছে ‘শিকড়ের সন্ধানে’। ৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধে ছ’টায় গিরিশ মঞ্চে এই সংস্থা আয়োজন করেছে ‘লোক উত্‌সব ২০১৫’। একতারা, দোতারা, সারিন্দা, ইত্যাদি সহযোগে বাউল, ভাটিয়ালি, জারি, সারি, লালন, আলকাপ, নানা ধারার লোকগান। ও দিকে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল ‘নকশিকাঁথার মাঠ’। জসীমুদ্দিনের কবিতা অবলম্বনে সোনালি ভট্টাচার্যের পরিকল্পনায় ছিল গান ও আবৃত্তি। গানে রূপঙ্কর বাগচি ও দীপান্বিতা আচার্য। ছিল নকশিকাঁথা অবলম্বনে তৈরি কিছু গয়না নিয়ে ফ্যাশন থিয়েটার। আইসিসিআর-এ শুরু হয়েছে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য আকাদেমির নৃত্য, নাটক, সঙ্গীত এবং দৃশ্যকলা বিভাগের বার্ষিক শিল্প প্রদর্শনী। চলবে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

আশি পেরিয়ে

ঠিকানা ৮সি জনক রোড। কিন্তু কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় কিছু আসে-যায় না। তাদের ‘নাম হি কাফি হ্যায়’। এ রকমই ‘রাধুবাবু’। দক্ষিণ কলকাতার লম্বা লম্বা বাড়ি আর ঝাঁ চকচকে মলের মধ্যে দিব্যি হেসেখেলে আশি বছর পেরোল রাধুবাবু-র ‘চায়ের দোকান’। বাপ্পি লাহিড়ি গানেই জানিয়েছিলেন, ‘আমার ভাল লাগে জনক রোডের রাধুবাবুর চা’। রাধুবাবুর ভক্তসংখ্যা অগুনতি। তালিকায় রাজকপূর থেকে একদা কলকাতা নিবাসী অমিতাভ বচ্চন বা রুসি মোদী। হামেশাই বাজার ফেরত দাঁড়িয়ে যেতেন অসিতবরণ, কালী বন্দ্যোপাধ্যায়, অনুপকুমার। আসতেন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজন ভট্টাচার্য, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। এখনও আসেন অর্জুন চক্রবর্তী, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সুজয় ঘোষ, জয় সরকার। দোকানটির পত্তন হয়েছিল বিকেলে হাতে গড়া রুটি, নিরামিষ তরকারি, কিমা-কারি দিয়ে। সেই দোকানেই ক্রমে শুরু হল সকালবেলায় চা, টোস্ট, অমলেট, পোচ। তাতেই বাজিমাত। এখন দোকান চালান রাধুবাবু ওরফে রাধাকিশোর দত্তর দুই ভ্রাতুষ্পুত্র: সোমনাথ ও সত্যসুন্দর। আজও দোকানে সাইনবোর্ড নেই, সাইনবোর্ড খাদ্য-রসিকের হৃদয়ে। দোকানে চায়ের আড্ডায় জয় সরকার।ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।

হারানো রতন

বঙ্গভাণ্ডারের হারানো রতনের সন্ধানে ‘বাঙালির শিল্পকলা চর্চা : ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভা: এশিয়াটিক সোসাইটির উদ্যোগে আজ সকাল দশটায় বিদ্যাসাগর হলে উদ্বোধন করবেন বিড়লা আকাদেমির নির্দেশক তারণকুমার বিশ্বাস। এতে বাংলাদেশের মূর্তিভাবনা, লৌকিক ও আদিবাসী শিল্পকলা, স্থাপত্যভাবনা ও ঐতিহ্য, চিত্রকলার বিবর্তন, সংগ্রহশালার ভূমিকা, বাঙালির বেশভূষা ও একুশ শতকে বাঙালির শিল্পকলা চর্চা নিয়ে আলোচনা করবেন মধুপর্ণা রায়চৌধুরী, রঙ্গনকান্তি জানা, চিত্ত পণ্ডা, নন্দিনী ঘোষ, সৌরভ জানা, মৃণাল ঘোষ এবং দীপঙ্কর ঘোষ।

দুই ভাইয়ের বৃত্তান্ত

এ শহর এত ভাল লেগে যাবে এখানে আসার আগে বুঝতে পারেননি এড। এড আউলস— ব্রিটিশ, সস্ত্রীক বসবাস করেন লন্ডনে। কয়েক বছর আগে যখন প্রথম কলকাতায় আসেন, ছাত্র ছিলেন তখন, কাজের পাশাপাশি এ দিক ও দিক ঘুরতে ঘুরতে ভারী ভাল লেগে যায় শহরটাকে। সেই ভাল-লাগা থেকেই প্রথম ছবি, এক ঘণ্টার ওপর, এ শহরে রাসেল স্ট্রিটের এক সুপ্রাচীন অকশন হাউস নিয়ে: ‘দি অকশন হাউস: আ টেল অব টু ব্রাদার্স’। আনোয়ার আর আরশাদ সেলিম, দুই ভাই মিলে চালান ১৯৪০-এ প্রতিষ্ঠিত সেই অকশন হাউস’টা: রাসেল এক্সচেঞ্জ। প্রথম কলকাতায় এসে সেখানে এক দিন হঠাত্‌ হাঁটতে হাঁটতে ঢুকে পড়েছিলেন এড, চোখধাঁধানো আশ্চর্য রকমারি জিনিসপত্র দেখে— আনোয়ার তাঁকে আপ্যায়ন করে দেখাতে থাকেন সব, প্রতি রোববার দুপুরে সেখানে নিলাম ডাকা হয়। গতানুগতিক তথ্যচিত্র নয়, দুই ভাইয়ের সম্পর্ক, এই বিপণিটি বাঁচানোর জন্যে তাঁদের লড়াই, সেখানকার কর্মীদের দিনযাপন, সর্বোপরি একদা ইংরেজশাসিত কলকাতার এই ঐতিহ্য আজ কতটা অস্তমিত তা নিয়েই এ ছবি। সদ্য দেখানো হল বইমেলায় ব্রিটিশ কাউন্সিল প্যাভিলিয়নে, নন্দনেও। গ্রেট ব্রিটেন যেহেতু ‘থিম কান্ট্রি’ ছিল এ বারের মেলায়, সেই উপলক্ষেই আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন এড, ছবিটি নিয়ে। ’৭৯-তে জন্ম, কেমব্রিজ ও লন্ডনের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃতত্ত্ব নিয়ে উচ্চশিক্ষার পর সাংস্কৃতিক ইতিহাস অনুসন্ধান করতে করতেই তাঁর সিনেমায় চলে আসা।

সৃষ্টিশীল

চলতে চলতে প্রায় সাড়ে পাঁচ দশক। এ পরিক্রমার আনুষ্ঠানিক শুরু সেই ১৯৬০-এর ২৯ জুন। তার পর থেকে ‘নান্দীকার’-এর যাত্রাপথে আগাগোড়া সঙ্গী রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। গত ৩১ জানুয়ারি একাশিতে পা রেখেছেন এই যুবক। এ তো তাঁর শরীরের বয়স! তবে নাট্য ও মননের চর্চায় এখনও তরতাজা রুদ্রপ্রসাদ। প্রখর সামাজিক ও রাজনৈতিক বোধও। রুদ্রপ্রসাদ নিজেই স্বভাবসিদ্ধ ভাষায় ও ভঙ্গিতে বলেন, “এক জন পারফর্মারের বুকের ভিতর হয় আগ্নেয়গিরি থাকে, নয়তো ঝর্না। প্রতি দিনই তাঁর মনে হতে পারে হয় সেই আগ্নেয়গিরিতে বিস্ফোরণ হোক, অথবা তাঁর বুকের ভেতরকার ঝর্নাটা ঝরতে থাকুক ঝর ঝর করে...।”

‘মঞ্জরী আমের মঞ্জরী’, ‘তিন পয়সার পালা’, ‘ফুটবল’, ‘খড়ির গণ্ডী’, ‘নাট্যকারের সন্ধানে ছ’টি চরিত্র’, ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’, ‘মেঘনাদবধ কাব্য’, ‘ফেরিওয়ালার মৃত্যু’ একের পর এক প্রযোজনা বিশিষ্ট করেছে নান্দীকারকে। বিশিষ্ট করেছে খুদে প্রতিভাদের নিয়ে নিরন্তর নাট্য কর্মশালার আয়োজনেও। এই সমস্ত প্রয়াসেই সর্ব সময়ের সঙ্গী রুদ্রপ্রসাদ। নাট্যজনেরা বলেন, রুদ্রপ্রসাদের বৈশিষ্ট্য শুধু তাঁর অভিনয় বা নির্দেশনাই নয়, তিনি এক জন দক্ষ সংগঠকও বটে। ‘নান্দীকার জাতীয় নাট্য মেলা’ নিজেই দেখতে দেখতে এক অনন্য প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে। এক সাক্ষাত্‌কারে রুদ্রপ্রসাদ বলেছিলেন, ‘বিলিভ মি, আই রিয়েলি ট্রায়েড মাই বেস্ট। আই ডিড নট নো, বাট আই ট্রায়েড।’ আজও সেটা সমান সত্য!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kolkatar karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE