Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

নব্বইতম জন্মদিনে সুচিত্রা মিত্র স্মরণ

চলন্ত ট্রেনে জন্ম সুচিত্রা মিত্রের। ট্রেন থামাতে হয়েছিল বিহারের শালবন ঘেরা অখ্যাত স্টেশন গুজুন্ডিতে। ছেলেবেলায় গানের প্রতি আগ্রহ দেখে পিতৃবন্ধু পঙ্কজকুমার মল্লিক তাঁকে গান শেখাতে শুরু করেন। বেথুন স্কুলে গান শেখেন অমিতা সেনের কাছে। দশম শ্রেণির ছাত্রী সুচিত্রা যখন সঙ্গীতশিক্ষার বৃত্তি নিয়ে শান্তিনিকেতন এলেন, তার মাত্র কুড়ি দিন আগে রবীন্দ্রনাথ প্রয়াত হয়েছেন। সঙ্গীত ভবনে ইন্দিরা দেবী, শান্তিদেব ঘোষ, শৈলজারঞ্জন মজুমদারের কাছে শিখেছিলেন রবীন্দ্রগান ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত। পরে সুচিত্রা কলকাতায় এসে গণনাট্য আন্দোলনে যোগ দেন।

এখানেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায় (সঙ্গের ছবিতে তাঁর সঙ্গেই সুচিত্রা), দেবব্রত বিশ্বাস, জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র, বিনয় রায়, সলিল চৌধুরী প্রমুখর সঙ্গে নতুন জগত্‌ গড়ে ওঠে গানের সূত্রে। ১৯৪৬-এ দ্বিজেন চৌধুরীর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘রবিতীর্থ’। ১৯ সেপ্টেম্বর শিল্পীর ৯০ তম জন্মদিন। ওই দিন সন্ধ্যায় বিড়লা তারামণ্ডল গ্যালারিতে ‘পূরবী’র পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গীত জীবনের নানা বর্ণময় মুহূর্তের আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও স্মরণসভার আয়োজন। ২২ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্রসদনে ‘তোমার সুরের ধারা’য় প্রয়াত শিল্পীর প্রায় দুশো ছাত্রছাত্রী তাঁকে শ্রদ্ধা জানাবেন সমবেত সঙ্গীতে। একক সঙ্গীতে পূর্বা দাম, স্বপ্না ঘোষাল, শুভ্রা সাহা, অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। নৃত্যে অলকানন্দা রায় ও অন্য শিল্পীরা। থাকবেন সুমিত্রা সেন, সুমিত্রা চট্টোপাধ্যায়, সুমিত্রা রায়, সাবিত্রী দত্ত, রবীন মুখোপাধ্যায়, সুবীর মিত্র প্রমুখ। পরিকল্পনায় মন্দিরা মুখোপাধ্যায়। ১৯ সেপ্টেম্বর আইসিসিআর-এ এই উপলক্ষে রবীন্দ্রগানের একক পরিবেশনে শ্রদ্ধা জানাবেন ছাত্রী মনীষা বসু।

আঠারো বছর আগে তাঁর প্রথম প্রকাশিত রবীন্দ্রগানের অ্যালবামের পরিচালক ছিলেন সুচিত্রা মিত্রই। মনীষার লেখা ভাষ্য গানের আবহে পাঠ করবেন সুবীর মিত্র। নাটকের প্রয়োজনে বাবা-মা শম্ভু ও তৃপ্তি মিত্র’র ইচ্ছেতেই গান শেখার জন্য কিছু দিন সুচিত্রাকে শিক্ষিকা হিসেবে পান শাঁওলী মিত্র। সেই সন্ধেয় তিনিও তাঁকে শ্রদ্ধা জানাবেন ‘ডাকঘর’-এর পাঠ-অভিনয়ে। সংবর্ধিত হবেন রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় আশিস ভট্টাচার্য মীনাক্ষী সিংহ, আয়োজনে রবিভৈরবী। ১৬ সেপ্টেম্বর গ্যালারি গোল্ডে প্রকাশিত হবে সুচিত্রা মিত্রের ভাষ্যপাঠে ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম রবীন্দ্রসংগীতের একক সিডি ‘রবিঠাকুরের গান’ (পেরেনিয়াল রেকর্ডস)। এক সময় সুচিত্রা নিজেই ‘আনন্দধারা’, ‘একি লাবণ্যে’ ইত্যাদি নানা গানের সঙ্গে জড়িত গল্প নিয়ে এই ভাষ্যগুলি করেছিলেন। সেই ভাষ্যের সঙ্গে এ বার গাইলেন ঋদ্ধি।

প্রথম পাঁচটি

‘বাঁটুল দি গ্রেট’ আর ‘হাঁদাভোঁদা’ এঁকে ষাট দশকের শেষেই বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন নারায়ণ দেবনাথ। কিন্তু ‘কমিক স্ট্রিপ’-এর জগতে আবদ্ধ থাকতে মন চাইছিল না। ১৯৬৯-১৯৭৫-এর মধ্যে পূজাবার্ষিকীতে আঁকলেন তিনটি অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি: ‘অজানা দেশে’, ‘মৃত নগরীর দানব দেবতা’, ‘দুঃস্বপ্নের দেশে’ আর রহস্য নিয়ে প্রচ্ছদ-কমিক্স ‘রহস্যময় অভিযাত্রী’। জনপ্রিয়তা এল, কিন্তু শিল্পীর ইচ্ছা কোনও নির্দিষ্ট চরিত্রকে নিয়ে রহস্য-কমিক্স আঁকার। ১৯৭৫-এ ছোটদের এক জনপ্রিয় পত্রিকার প্রচ্ছদে সিক্রেট এজেন্ট কৌশিককে নিয়ে শুরু হল ‘সর্পরাজের দ্বীপে’, চলল ৩৬টি সংখ্যায়। পরে তিনি আরও ১২টি কৌশিক কাহিনি আঁকেন। এ বার সেই পাঁচটি প্রথম সিরিয়াস-কমিক্স দু’মলাটে আনল দীপ প্রকাশন (রহস্য গোয়েন্দা কমিক্স), সম্পাদনায় অক্লান্ত নারায়ণ-গবেষক শান্তনু ঘোষ, তিনিই সব খুঁজেপেতে এনেছেন। পরিচিতি লিখেছেন কৌশিক মজুমদার। কম্পিউটারে নতুন করে রঙ না করে মূল ছাপা ছবির প্রতিলিপিই করা হয়েছে এখানে।

অক্লান্ত কর্মী

৬১ বছরে সম্প্রতি চলে গেলেন অমর ভট্টাচার্য। সত্তরের দশকে উত্তাল নকশাল আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। আঠারো বছর গোপনে সংগঠন তৈরির কাজ করেন। ১৯৮৮-তে ধরা পড়ার পর পুলিশের অত্যাচারও তাঁকে নীতি থেকে সরাতে পারেনি। ছাড়া পেয়ে তিনি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতে শুরু করেন। নকশালবাড়ি আন্দোলনের প্রামাণ্য তথ্য সংকলন এবং কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাস সমৃদ্ধ লাল তমসুক তাঁর গবেষণাগ্রন্থ। প্রতিবাদী কবি সাহিত্যিক হিসেবে তাঁর যথেষ্ট সুনাম ছিল। নকশালবাড়ির প্রভাবে শিল্প-সাহিত্য-চলচ্চিত্র, পালাবদলের নেপথ্যে তাঁর উল্লেখ্য বই। সম্পাদনা করেছেন ‘পূর্বাশা এখন’ পত্রিকা। তৈরি করেন নকশাল আন্দোলন নিয়ে তথ্যচিত্র ‘মেমোরিজ অব স্প্রিং থান্ডার’। গতকাল আগরপাড়ায় ছিল তাঁর স্মরণসভা।

পছন্দ, অপছন্দ

শেক্সপিয়রের পরিবর্তে কেন কালিদাসই রবীন্দ্রনাথের এত পছন্দের যে বঙ্কিম, মাইকেল কি বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস সবাইকে এড়িয়ে জন্ম নিতে চাইছেন তাঁর সময়ে? এলিয়টই বা কেন আধুনিকতার পাঠ খুঁজতে দাঁড়ান দান্তের চৌকাঠে? লেখক, কবি, শিল্পীদের পছন্দ-অপছন্দ কি এতটাই তীব্র? ‘অপছন্দের উত্‌সগুলি’ (‘অরিজিন্স অব ডিসলাইক’) শিরোনামে সম্প্রতি যাদবপুরে বললেন অমিত চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইনফোসিস সায়েন্স ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে। তাঁর বয়ানে, কালিদাসের কবিতায় অতীতচারিতা বা যথার্থ ভারতীয়ত্ব নয়, রবীন্দ্রনাথ বরং খুঁজে পান আধুনিকতার বয়ান। ‘আ স্ট্রেঞ্জ অ্যান্ড সাবলাইম অ্যাড্রেস’-এর লেখক তাই বলছিলেন, শিল্পীর অপছন্দে লুকিয়ে থাকে অনেক অন্তর্ঘাত, বিচিত্র সব মানসিক অবস্থান। আর অপছন্দ নিয়ে অমিতের মানসিক অবস্থান এই শহর জানে। সম্প্রতি হাইকোর্টে আবেদন করে সানি পার্কে ঐতিহ্যঋদ্ধ একটি বাড়ির ধূলিসাত্‌ হওয়া রুখে দিয়েছেন। দিন কয়েক আগে লোরেটো কলেজে শহরের ঐতিহ্য নিয়ে আলোচনাতেও জানালেন, হেরিটেজ শব্দটি তাঁর অপছন্দের। তার বদলে ‘লিভিং স্পেস’-ই প্রথম পছন্দ। বলছিলেন, দক্ষিণ কলকাতায় চল্লিশ দশকের যে ক’টি বাড়ি আজও লাল মেঝে, রেলিং, ঘুলঘুলি নিয়ে অতীতের আলো-আঁধারি জাফরি কাটে, তাদের বাঁচিয়ে রাখার কথা। সেই প্রয়াসে কি বড্ড দেরি হয়ে গেল?

কবিতা থেকে গান

‘কবিতা লিখি বলে আমি শুধু সেই সৃষ্টিপ্রক্রিয়াটুকুই বুঝি, তার রূপান্তর নিয়ে ভাবি না। তবে আমার কবিতা নতুন প্রজন্মের কেউ গানে রূপ দিচ্ছে, এমনটা ঘটলে খুশি হই নিশ্চয়ই।’ বলছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর কবিতা থেকে তৈরি দেবলীনা ঘোষের গানের অ্যালবামের আসন্ন প্রকাশ প্রসঙ্গে। বেঙ্গালুরুতে ক’বছর আগে গায়িকাজীবন শুরু দেবলীনার, এর পর কলকাতায় এলে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সিডি বেরয় তাঁর। তৈরি করেন একটি গানের গোষ্ঠীও—‘চড়ুইদল’। গেয়েছেন অপর্ণা সেনের ছবি ‘গয়নার বাক্স’য়। দেবজ্যোতি মিশ্রের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত গান করছেন তিনি। সম্প্রতি সৌমিত্রর সাতটি কবিতা বেছে তাতে সুর দিয়ে গেয়েছেন দেবলীনা: ‘স্মরণীয় রোদ্দুর থেকে’ (রুহ্ মিউজিক), সহযোগিতায় দেবমাল্য রায়চৌধুরী। ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টায় সাউথ সিটি মল-এর স্টারমার্ক-এ অ্যালবামটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন শুভাপ্রসন্ন, উপস্থিত থাকবেন যোগেন চৌধুরী প্রমুখ।

পাশে দাঁড়াতে

২০০৮-এ সাউথ পয়েন্ট স্কুলের প্রাক্তনীরা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষকদের পাশে দাঁড়াতে তৈরি করেন ‘কেয়ার উইং’। শিক্ষকদের অনেকেই নিঃসঙ্গ, কেউ বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন। প্রয়োজনে তাঁদের অর্থ সাহায্য, চিকিত্‌সার ব্যবস্থা, নাটক-সিনেমা দেখানো, বনভোজন, স্কুলের অনুষ্ঠানে—আনা সব ক্ষেত্রেই ‘কেয়ার উইং’। সম্প্রতি শিক্ষক দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠান হল স্কুলের জুনিয়র অডিটোরিয়ামে। ছিল প্রাক্তন শিক্ষক কমলকুমার মজুমদারকে নিয়ে অনুষ্ঠান, দুই প্রাক্তনী আশিস সান্যাল ও পারমিতা বিশ্বাসকে সম্মাননা জ্ঞাপন এবং শ্রুতি নাটক ‘নটী বিনোদিনী’। উপস্থিত ছিলেন মানুষ গড়ার সেই কারিগররা।

অর্থবহ

‘‘দুঃসময় আরও অর্থবহ করে তুলছে আমাদের থিয়েটারকে। যত প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছি, ততই আমাদের নাটক গভীর, জীবন্ত ও মননে ঋদ্ধ হয়ে উঠছে। শাসক কখনও নাটকের মতো শিল্পকে কলুষিত করতে পারে না। এখন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ‘চাঁদ বণিকের পালা’ অভিনীত হতে চলেছে, সে নাটকে মনসার বিরুদ্ধে চাঁদের যে শিবাই-এর খোঁজ, তা তো আদতে দুঃশাসনেরই বিরুদ্ধে সত্যের উদ্ঘাটন।” বলছিলেন কৌশিক সেন, ‘আমার সময় আমার থিয়েটার’ নিয়ে, তাপস সেন স্মারক বক্তৃতা-য়, সম্প্রতি জীবনানন্দ সভাঘরে। আজন্ম থিয়েটার তাঁর সঙ্গী, যেমন নিয়মিত নাটক করে চলেছেন, তেমনই ক্ষমতা-র বিরুদ্ধে মুখর হচ্ছেন সতত। বেলঘরিয়া আনন্দসভা আয়োজিত এ-বক্তৃতার সঞ্চালক ছিলেন সুরজিত্‌ বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত থিয়েটার সংক্রান্ত সংরক্ষণে ব্যস্ত এই সংস্থা, সঙ্গে চলছে প্রায়-লুপ্ত বহু লোকজ শিল্প পুনরুদ্ধারের কাজও, জানালেন কর্ণধার আশিস গোস্বামী।

দুর্গা মহিমা

‘বাজল তোমার আলোর বেণু’—মহালয়ার ভোরে মহিষাসুরমর্দিনী শুনতে-শুনতেই তো পুজো এসে যায়! সে সব গান, স্তোত্র, চণ্ডীপাঠ নিয়ে ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধে ৬টায় আইসিসিআর-এ অনুষ্ঠান: ‘দুর্গা মহিমা’। তিরিশের দশকে যখন ‘লাইভ’ সম্প্রচার হত, সে সময়ের অনেক গান-স্তোত্র থাকবে এ অনুষ্ঠানে। যেমন ‘দরশন দাও মা গো’ বা ‘আকাশ যে মধুময় ছন্দে’। পাঠ ও গানে পঙ্কজকুমার মল্লিকের দৌহিত্র ও দৌহিত্র-বধূ রাজীব ও ঝিনুক গুপ্ত এবং শ্যামল মিত্রের পুত্র সৈকত।

তবে মূল সূচনা ১৫ সেপ্টেম্বর, আইসিসিআর-এর অবনীন্দ্রনাথ গ্যালারিতে, মা-দুর্গাকে নিয়ে চিত্রকলা-ভাস্কর্যের প্রদর্শনী ‘শূলধারিণী’ (কিউরেটর: শৌনক চক্রবর্তী)। শ্যামল দত্তরায় (সঙ্গে তাঁরই ছবি), রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, যোগেন চৌধুরী, রবীন মণ্ডল সহ প্রবীণ ও নবীন শিল্পীদের এ-প্রদর্শনী চলাকালীন দেখানো হবে রাজীব গুপ্তের তথ্যচিত্র ‘মহিষাসুরমর্দিনী: আ প্যাসেজ থ্রু টাইম’ (ফিল্মস ডিভিশন)। চলবে ২২ অবধি, প্রতি দিন ২-৭টা। দুটিরই আয়োজনে পঙ্কজ মল্লিক মিউজিক অ্যান্ড আর্ট ফাউন্ডেশন এবং সেনসোরিয়াম। অন্য দিকে পঞ্চাশের দশক থেকে আকাশবাণীর যে ‘রম্যগীতি’ মাতিয়ে রেখেছিল বাংলা গানের শ্রোতাদের, তার সঙ্গে জড়িত নিখিল ঘোষ, দক্ষিণামোহন ঠাকুর, প্রকাশকালী ঘোষাল, সুরেন পালদের অনেককেই আমরা ভুলতে বসেছি। ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধে ছ’টায় রিজেন্ট এস্টেটের অঙ্কুর সভাকক্ষে রম্যগীতির দুর্লভ নানা গান পরিবেশন করবে আজকের প্রজন্ম। শোনা যাবে রম্যগীতির জন্য লেখা হরিবংশ রাই বচ্চনের গীত, যাতে সুর দিয়েছিলেন জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, আলি আহমেদ হুসেন আর সুরেন পালের বাজানো রম্যগীতির সিগনেচার টিউন। আয়োজনে ‘মিউজিক’।

মুখোমুখি

ব্রডওয়ে থিয়েটারে নাটক দেখতে গিয়ে এক সাহেবকে প্রশ্ন করেছিলাম, যুদ্ধোত্তর নাটকের ধারায় কার নাটক আপনার ভাল লাগে? উত্তর দিয়েছিলেন, টেনেসি উইলিয়ামস। কেন? তার উত্তরে বড় চমত্‌কার একটা কথা বলেছিলেন, ‘হি নোজ পোয়েট্রি’। বলছিলেন ব্রাত্য বসু। মিনার্ভা থিয়েটারে সম্প্রতি তাঁর মুখোমুখি বসেছিলেন জয় গোস্বামী, দেবেশ চট্টোপাধ্যায়, দেবশঙ্কর হালদার, মণীশ মিত্রের সঞ্চালনায়, নাট্যস্বজন-এর আয়োজনে সেখানেই উঠে এল এ সব কথা। ব্রাত্য জানালেন, নাট্যস্বজন শিশিরকুমার ভাদুড়ী, শম্ভু মিত্রদের বহু স্বপ্নের নিজস্ব নাট্যচর্চা কেন্দ্রের লক্ষ্যে এগোচ্ছে। এ দিকে বাংলা আকাদেমিতে তাঁর নিজের নতুন নাটক ‘জতুগৃহ’ পাঠ করলেন ব্রাত্য।

ডুবকি সম্রাট

সম্প্রতি এক দুর্ঘটনায় হঠাত্‌ই চলে গেলেন ‘ডুবকি সম্রাট’ তিনকড়ি খ্যাপা (চক্রবর্তী)। তিনি ডুবকি বাজানোর সম্পূর্ণ নতুন একটি ধারা তৈরি করেছিলেন। এক চামড়ার ছোট্ট যন্ত্র ‘ডুবকি’ তাঁর হাতে কথা বলত। সুবলদাস বৈরাগ্যের শিষ্য তিনকড়ির জীবনে দারিদ্র ছিল নিত্যসঙ্গী। প্রথম জীবনে কখনও চায়ের দোকানে, হোটেলে, কখনও আয়ুর্বেদিক ওষুধ ফেরি বা জাদুকরের সহকারীর কাজ করেও রুটি-রুজির সংস্থান করেছেন। তিনিই পরে ডুবকিকে সঙ্গী করে ৬৫ বছরের জীবনে ৮০ বার বিদেশে অনুষ্ঠান করতে গিয়েছেন! লন্ডনে পিটার গ্যাব্রিয়েল আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বব ডিলানের সঙ্গেও অনুষ্ঠান করেন। পিটারের সৌজন্যে লন্ডন থেকে তাঁর একটি সিডি-ও প্রকাশিত হয়। ইতালির ‘ইউনিভার্সিতা দি রোমা লা সাপিয়েনজা’ এবং পোল্যান্ডের ‘গোটোস্কি সেন্টার’ থেকে ২০০৪-০৫ সালে তাঁকে বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়। ইউরোপের নানা সঙ্গীত বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মশালা করিয়েছেন অনেক বার। কাজ করেছেন স্যাম মিলস-র মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মিউজিশিয়ানদের সঙ্গে। সদ্য প্রয়াত শিল্পীকে স্মরণ করতে ১৬ সেপ্টেম্বর সিএলটি (অবন মহল) প্রেক্ষাগৃহে বিকেল পাঁচটায় সহজিয়া ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন কালাচাঁদ দরবেশ, তিলক মহারাজ, দুর্গা খেপি, স্বপন বসু, এব্রাহাম মজুমদার, হিরণ মিত্র, বিক্রম ঘোষ প্রমুখ।

মনীষা

বঙ্কিমচন্দ্র ও তাঁর মনীষার উন্মেষের সঙ্গে তত্‌কালীন যুগের মনন-সাধনা, ভারতীয় সংস্কৃতি, পাশ্চাত্যের মনীষা, সে সময়ের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে বাঙালি পাঠককে দীর্ঘকাল ঋদ্ধ করেছেন ভবতোষ দত্ত (১৯২৫-২০১০)। তাঁর চিন্তানায়ক বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রচিন্তাচর্চা-র একাধিক সংস্করণ হয়েছে। লিখেছেন কাব্যবাণী, বাঙালির সাহিত্য, কীর্তির্যস্য, বাংলা গীতিকাব্যের আদিপর্ব-র মতো আরও অনেক গ্রন্থ। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত রচিত কবিজীবনী সম্পাদনার সঙ্গে লিখেছেন রাধাকান্ত দেব, ক্ষিতিমোহন সেন, মোহিতলাল মজুমদার, সুশীলকুমার দে প্রমুখকে নিয়েও। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষত্‌ থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর আচার্য সুশীলকুমার দে: কর্ম ও কীর্তি—সুশীলকুমারের নানা দিক নিয়ে তথ্যসমৃদ্ধ প্রবন্ধাদি। অধ্যাপক দত্তের আদি নিবাস ঢাকা মানিকগঞ্জে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে অনার্স, এবং এম এ, কলকাতা থেকে ডিলিট। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে রবীন্দ্রভারতী, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বিদ্যাসাগর অধ্যাপক’, শেষ পর্বে বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগে ‘রবীন্দ্র-অধ্যাপক’। ‘বিদ্যাসাগর পুরস্কার’, ‘সরোজিনী বসু পদক’-সহ নানা সম্মানে ভূষিত। ১৫ সেপ্টেম্বর তাঁর নবতিতম জন্মদিনে বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত প্রকাশ করবেন স্মারক সংকলন মনীষা ও মনীষী (সম্পা: অমল পাল, পরম্পরা)। সংস্কৃত কাব্য থেকে উনিশ শতকের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চার উপর বিশিষ্ট জনের লেখা বিবিধ প্রবন্ধ সংকলনটিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kolkatar karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE