Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

....

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

শহরের ভিতরে অন্য এক শহরের ছবি

এ কলকাতার হরেক চিত্র। এঁকে রাখছেন রথীন মিত্র। কোনও বিখ্যাত কবি নন, এক কড়চারসিক ছোট্ট এই দু’লাইন শোনালেন। ওই ‘এঁকে রাখছেন’ কথাটার মধ্যে একটা জরুরি কথা আছে। সদাই বদলে চলেছে কলকাতা, তার আকাশরেখা। পুরনো স্থাপত্য, সৌধমালা আর স্মৃতিস্তম্ভে যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ভাষাময় হয়ে ছিল তার অনেক কিছু অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রথীন মিত্রের চোখের আড়ালে নয়। এ কলকাতার এবং তার ভিতরের আর একটা কলকাতারও ছবি সুচারু আঁচড়ে ধরে রাখেন নব্বই ছুঁতে চলা এই শিল্পী।

রাধারমণ মিত্রের কলিকাতা দর্পণ হাতে নিয়ে শহরটাকে রেখায়-লেখায় ধরা শুরু করেছিলেন রথীন মিত্র। আজ তাঁর রেখা যেন এ শহরের আর এক দর্পণ। এশিয়াটিক সোসাইটি, কলকাতা মাদ্রাসা (বাঁ দিকের ছবি), কার্জন পার্ক (ডানে), হগ মার্কেট, খিদিরপুর ব্রিজ, স্পেনসেস হোটেল, টাউন হল, সংস্কৃত কলেজ—চেনা-না-চেনা কলকাতার ছবি, মিত্র মহাশয়ের রেখাঙ্কন আর লেখাঙ্কন নিয়ে কলকাতা একাল ও সেকাল (আনন্দ) বইটির কথা মনে পড়বে অনেকেরই। তেমনই তিরিশটি ছবি নিয়ে প্রদর্শনী ‘ক্যালকাটা, দ্য সিটি আই লাভ’ এখন গ্যালারি ৮৮-এ, ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ইতিমধ্যে তিনি আরও একটি কাজ করে ফেলেছেন। হেঁটেছেন শ্রীচৈতন্যপথে। পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, চট্টগ্রাম, ঝাড়খণ্ড, বিহারে শ্রীচৈতন্য-স্মৃতিজড়িত স্থানগুলির ছবি এঁকেছেন। তাঁর রেখায় ও লেখায় শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পরিক্রমা প্রকাশ করছে রথীন মিত্র অ্যাসোসিয়েটস। সঙ্গে আছে বাগবাজার গৌড়ীয় মিশন। এটি সুলভ হবে আনুষ্ঠানিক প্রকাশের পরে।

মঞ্চগান এবং...

...যে যুগে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন সে যুগের ছাপ রয়ে গিয়েছে কেবল তাঁর চরিত্র নির্বাচনে যে ছাঁচে তিনি নাটক লিখেছিলেন তাতে কিন্তু আসল মানুষটা সকল কালের সকল যুগের।’ শেক্সপিয়র প্রসঙ্গে এ মন্তব্য শিশিরকুমার ভাদুড়ীর। জন্মসালের বিচারে শেক্সপিয়রের বয়স ৪৫০ আর শিশিরকুমারের ১২৫। তাঁকে ঘিরে ‘বাংলার মঞ্চ-গান ও শেক্সপিয়র’ শীর্ষক উত্‌সবের সূচনায় মঞ্চগানে তিন দশক নিরত ‘একাডেমি থিয়েটার’ দু’মলাটে প্রকাশ করছে শিশির-রচনাটি, ৬ ডিসেম্বর সন্ধে সাড়ে ৬টায়, শিশির মঞ্চে। সঙ্গে মঞ্চ-পাঠে দু’টি রূপান্তর। সৈয়দ শামসুল হকের অনুবাদে ‘ম্যাকবেথ’: ফেরদৌসী মজুমদার ও রামেন্দু মজুমদার এবং রতনকুমার দাসের অনুবাদে ‘ওথেলো’: দ্যুতি ঘোষহালদার ও গৌতম হালদার। ৭ ডিসেম্বর সন্ধে সাড়ে ৬টায়, অ্যাকাডেমিতে মধুসূদন থেকে উত্‌পল দত্ত পর্বের রূপান্তরে শেক্সপিয়রের মঞ্চগান। গানে দেবজিত্ ও ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়, সংযোজনায় গৌতমমোহন চক্রবর্তী ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ৮-১০ ডিসেম্বর নন্দনের সঙ্গে যৌথ প্রয়াসে ছ’টি দেশের শেক্সপিয়রের নাটকের চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। সঙ্গে শেক্সপিয়রের স্কেচ: সত্যজিত্‌ রায়।

প্রয়াণ

শান্তিনিকেতনে শিক্ষাপ্রাপ্ত, বিশেষত আচার্য শৈলজারঞ্জনের ছাত্রছাত্রীরা রবীন্দ্রসংগীতের বিশিষ্ট আঙ্গিক বজায় রাখতে যত্নবান ছিলেন। সেই প্রজন্মের সর্বশেষ প্রতিভূ প্রসাদ সেন সম্প্রতি ৮৩ বছর বয়সে চলে গেলেন। আচার্য ক্ষিতিমোহনই তাঁর সম্পর্কিত ভাইপো প্রসাদ সেনকে শান্তিনিকেতনে নিয়ে আসেন ১৯৪৭-এ। শিক্ষান্তে ১৯৫১-য় রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ, ১৯৬১-তে রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ থেকে তাঁর পরিচিতি ও প্রতিষ্ঠা। এক দিকে দক্ষিণী সুরঙ্গমা হয়ে সোহিনী-র মতো সংস্থায়, অন্য দিকে বেঙ্গল মিউজিক কলেজে তাঁর সমৃদ্ধ শিক্ষকজীবন। আকাশবাণী দূরদর্শন থেকে একক মঞ্চানুষ্ঠানে শ্রোতাদের আবিষ্ট করে রেখেছেন আজীবন। অনায়াসে এসরাজ বাজিয়ে শুধু গান গাওয়া নয়, শেখাতেনও। বহু রেকর্ডে ধরা আছে তাঁর গান। যুক্ত ছিলেন সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানে। ‘সোহিনী’ ছাড়াও শেষ দিন পর্যন্ত সাংগীতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে উদ্যোগী ‘মিউজিক’ সংস্থার সভাপতি ছিলেন তিনি।

সাহিত্যের সক্রিয়তা

কবিতা থেকে কৃত্তিবাস। পূর্বাশা থেকে বারোমাস। সাহিত্য যখনই হয়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠান এবং বাজারের পণ্য, এই শহর জানিয়েছে জোরালো প্রতিবাদ। বুদ্ধদেব বসু প্রকাশ করেছেন ‘এক পয়সায় একটি’ গ্রন্থমালা। আরও পরে সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়দের ‘মিনিবুক’। প্রতিবাদের সেই শহরে ২-৪ ডিসেম্বর ইস্ট অ্যাংলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ‘সাহিত্যের অতিসক্রিয়তা’ বা লিটারারি অ্যাক্টিভিজম নিয়ে তিন দিনের সিম্পোজিয়াম। বই প্রকাশ, বিপণন, মূল্যায়ন নিয়ে বাজারের অতিসক্রিয়তার বিরুদ্ধে সাহিত্যিক সক্রিয়তা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সকাল ১১টা ১৫-য় উদ্বোধন করবেন ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেরেক অ্যাট্রিজ। সাহিত্যকে চিরাচরিত ভঙ্গিতে না দেখে তাকে এথিক্স বা নীতি হিসেবে দেখারই সওয়াল করছেন তিনি। দ্বিতীয় দিন অমিত চৌধুরী বলবেন কবি-সমালোচক অরবিন্দকৃষ্ণ মেহরোত্রাকে নিয়ে। শেষ দিন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বপন চক্রবর্তী ও রোসিঙ্কা চৌধুরী টেনে আনবেন কলকাতা তথা বাংলার অবদান। তিন সন্ধ্যা জুড়েই সিগাল বুকস্টোর এবং প্রেসিডেন্সির কাফেটেরিয়ায় থাকবে জমাট আলোচনা। সাহিত্যের সক্রিয়তার সমর্থনে প্রথম আন্তর্জাতিক কথোপকথন তা হলে এই শহরেই!

কলাক্রান্তি

সংস্কৃতইন্ত প্রাণ ছিলেন তিনি। তাঁর একান্ত উদ্যোগেই পথ চলার পাথেয় পেয়েছিল নাট্যদল কলাক্রান্তি। প্রয়াত গৌরীকণা দেবীর স্মৃতির উদ্দেশে এ বারেও আয়োজিত হয়েছে কলাক্রান্তি’র ২১তম নাট্যোত্‌সব। ৫ ডিসেম্বর মুক্তাঙ্গনে বহুভাষিক এই উত্‌সবের উদ্বোধন করবেন মেঘনাদ ভট্টাচার্য। এ বারেও ওঁরা সম্মান জানাবেন অতীতের একজন বিশিষ্ট শিল্পীকে। এ বারে সেই সম্মান পাচ্ছেন ‘মিস শেফালি’ নামেই সুপরিচিত আরতি দাস। আসছে অসমিয়া, হিন্দি, বাংলা ও ইংরেজি নাটকের দল। ৬ তারিখের অনুষ্ঠান সকাল ১১টা থেকে সন্ধে পর্যন্ত।

দেশবিদেশের ছবি

সিনেমা ও অন্যান্য শিল্পকৃতির সযত্ন চর্চায় এই শহরে অনেকটা সময় কাটান যাঁরা, তাঁদের মধ্যে পরিচিত নাম ফোরাম ফর ফিল্ম অ্যান্ড অ্যালায়েড আর্টস। চলচ্চিত্র নিয়ে ভাবনা, তার প্রচার ও প্রসারে বছরভর নানান উত্‌সব-অনুষ্ঠান করে থাকে এই ফোরাম। তারই অঙ্গ হিসেবে ৩-৭ ডিসেম্বর ভারতীয় সংগ্রহশালার আশুতোষ জন্মশতবার্ষিকী হল-এ হতে চলেছে ‘ফেস্টিভাল অব ফাইভ কন্টিনেন্টস’, চিন থেকে চিলি, ব্রাজিল থেকে পোল্যান্ড—পাঁচ মহাদেশের কুড়িটা দেশের ছবির উত্‌সব। এ বার চতুর্থ বছরে পা দিল এই উদ্‌যাপন। ৩ ডিসেম্বর বিকেলে উদ্বোধন করবেন পরিচালক বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধায়, প্রধান অতিথি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া।

নতুন নাটক

কলকাতার নিষিদ্ধপল্লি বারে বারে উঠে এসেছে বইয়ের পাতায় কিংবা সিনেমায়, মঞ্চে। সোনাগাছির দামিনী-বসুন্ধরাদের বেঁচে থাকাটা প্রান্তিক, আর তাঁদেরই ঘরে-ঢোকা বাবুদের বাঁচাটা মূল স্রোত আখ্যা পায়। এই নিয়েই কলকাতার নাট্যদল ‘চোখ’-এর নতুন প্রযোজনা ‘খুন’। নাট্যকার-নির্দেশক অভিজিত্‌ করগুপ্ত ঘুরে বেড়িয়েছেন সোনাগাছির অলিগলি, এমনকী খদ্দের সেজেও। শরীর-পেষা পেশার গায়েই লেপটে থাকা শখ, স্বপ্ন, বন্ধুতা, মাতৃত্বকে ঠাঁই দিয়েছেন নাট্যশরীরে। ৪ ডিসেম্বর সন্ধেয় অ্যাকাডেমিতে ‘খুন’-এর অভিনয়। শহরেই ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত লব্ধপ্রতিষ্ঠ নাট্যদল সায়ক-এর ৪১তম বর্ষপূর্তি উত্‌সব। এ বারের উত্‌সবে নতুন প্রাপ্তি বেঙ্গালুরু স্মরণিক-এর প্রযোজনা ‘দৃষ্টিকন্যা’। নির্দেশনায় সায়নদেব ভট্টাচার্য। অ্যাকাডেমিতে ২ ডিসেম্বর।

হোক কলরব

পার্কসার্কাস কানেক্টরের পরমা আইল্যান্ড এখন শহরের পরম লজ্জা। শানু লাহিড়ির তৈরি প্রায় ৩৭ ফুট ভাস্কর্যটি সেখান থেকে রাতারাতি উধাও! মন্ত্রী-সান্ত্রি সকলে নীরব, পুরুলিয়ার দীপাবলি পুতুলের আদলে তৈরি মূর্তিটি এই বিশ্ববঙ্গে আদৌ অক্ষত আছে কি না, গোয়েন্দাকাহিনির বিষয়। এমনিতে তো এই শহরে প্রকাশ্য ভাস্কর্য বলে কিছু নেই, আছে কিছু বেঢপ মূর্তি। কিন্তু বাইপাসের আদি যুগে, ১৯৮৭ সালে জি ডি ফার্মাসিউটিক্যালসের উদ্যোগে তৈরি ফাইবার গ্লাসের ওই ভাস্কর্যটি ছিল অনুপম ব্যতিক্রম। শানু লাহিড়ির নেতৃত্বে মানিক তালুকদার, দেবব্রত চক্রবর্তী এবং জনা দশেক ছাত্রের হাতে প্রায় চার মাসের কর্মযজ্ঞের ফল। প্রতিটি পুতুলের মুখই আলাদা টুকরো টুকরো ছাঁচে তৈরি, ১২ ফুটের স্পাইরাল ভিত্তির মধ্যে পাখিদের জন্য ছোট ছোট খোপ। উদ্বোধন করেন তত্‌কালীন রাজ্যপাল নুরুল হাসান, ক্রমে সেটি হয়ে ওঠে পরিচিত ল্যান্ডমার্ক। যে কোনও শহর এমন কালাপাহাড়ি ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়ত, কিন্তু ক’জন প্রবীণ শিল্পী কি শিল্প-ঐতিহাসিক ছাড়া সংস্কৃতির রাজধানী নীরব। শানুর মূর্তিই প্রথম নয়, কিছু দিন আগে মৌলালি যুবকেন্দ্রের দেওয়ালে নিরঞ্জন প্রধানের তৈরি ম্যুরালটিও কালাপাহাড়ি উন্মাদনায় উধাও হয়ে গেছে! শহরে কোনও ভাস্কর্যের জায়গায় নতুন ভাস্কর্য বসানো যেতেই পারে, কিন্তু প্রয়াত এক বিশিষ্ট শিল্পীর কাজকে এ ভাবে ধ্বংস করে ফেলা কোন অধিকারে সম্ভব?

হৃদ্মাঝারে

হার্ট বাইপাস অপারেশনের পর ও টি থেকে বেরিয়ে এলেন ডাক্তার। রোগীর স্ত্রী-র প্রশ্ন, ‘ডাক্তারবাবু, কী দেখলেন?’ ডাক্তার বললেন, ‘দেখলাম, ওনার হার্টে আপনার নাম লেখা রয়েছে।’ আরও শঙ্কিত হয়ে মহিলার জিজ্ঞাসা, ‘আর কারও নাম দেখলেন কি?’ এমনই সব মজার গল্পে ভরা তাপস রায়চৌধুরীর ঝুলি। কলকাতায় ‘বিটিং হার্ট সার্জারি’ যাঁরা শুরু করেন, তিনি তাঁদের অন্যতম। এ রাজ্যের অন্তত হাজার দশেক মানুষের হৃত্‌পিণ্ড মেরামত করে, তাঁদের হৃদয়ও জয় করেছেন এই মানুষটি। তাঁর রসবোধ, স্নিগ্ধ ব্যক্তিত্ব আর গান দিয়ে। চরম ব্যস্ত ডাক্তারদের নিয়ে কলকাতার ব্যান্ড ‘ব্যতিক্রমী’-র অন্যতম শিল্পী তিনি। সম্প্রতি এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর কর্মজীবনের ২৫ বছর পূর্তিতে সমবেত হইচইয়ের আয়োজন ছিল। সেখানে এসেছিলেন ২৫ বছর আগে অস্ত্রোপচার হওয়া এ শহরে তাপসবাবুর প্রথম রোগীও। হার্ট সার্জনের সঙ্গে এমন হৃদয়ের যোগ কমই দেখা যায়।

দ্বৈত ভূমিকায়

নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পরে বাবুল সুপ্রিয় এ বার প্রথম গাইবেন এই শহরের মঞ্চে। তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল এই শহর থেকেই। শহরের বিখ্যাত সাংগীতিক পরিবার বড়াল পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় বড়াল বলিউডে গিয়ে বিখ্যাত হলেন বাবুল সুপ্রিয় নামে। গান-জীবনের আদর্শ হিসেবে তিনি বার বার কিশোরকুমারের নাম করেছেন। হিন্দি সিনেমার জন্য গান গেয়েই বেশি জনপ্রিয় হলেও নিজের শহরের গান-জগতেও ইদানীং নতুন ধরনের কাজ করছেন বাবুল। বাংলায় তাঁর অনেক অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। আর এই বাংলায় ফেরাটা রবীন্দ্রসঙ্গীতের হাত ধরেই। বছর ছয়েক আগে তাঁর রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম ‘কত বার ভেবেছিনু’ প্রকাশিত হয় আশা অডিয়ো থেকে। পর পর তিন বছরে তিনটি রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম সেখান থেকেই, একটি অলকা ইয়াগনিকের সঙ্গে। এর পরে একটি আধুনিক গানের অ্যালবামের পরে সম্প্রতি ফের রবীন্দ্রসঙ্গীতে, ‘বাবুল বাউল’। এ বার শহরে আসা মঞ্চে গান গাইতে, কিশোরকুমারের সূত্রে। মঞ্চে কিশোর-পুত্র অমিতকুমারের সঙ্গে ডুয়েট গাইবেন কিছু গান। ১৬ জন কম্পোজারের কিশোরের জন্য তৈরি করা বিখ্যাত গান থাকবে ‘সেন্টারস্টেজ’ আয়োজিত ‘কভি আলবিদা না কহনা’ অনুষ্ঠানে। ২৯ ডিসেম্বর কলামন্দিরে হবে এই অনুষ্ঠানটি। আয়োজকদের দাবি, অমিতকুমারের সঙ্গে মঞ্চে দ্বৈত বাবুলের এই প্রথম। এর আগে যতীন-ললিতের সঙ্গীত পরিচালনায় একটি হিন্দি ছবির জন্য দুজনে গান গেয়েছেন।

আশিতে পা

একদা বাঙালির বিদ্যাচর্চায় যা নিতান্ত স্বাভাবিক গণ্য হত, কোনও আশ্চর্য কারণে সেই ‘দ্বিভাষী বুদ্ধিজীবী’ আজ বিরলপ্রায়। যাঁরা ইংরেজিতে স্বচ্ছন্দ, তাঁরা বাংলায় কলম ধরেন না। যাঁরা বাংলায় লেখেন, তাঁরা ইংরেজিকে সরিয়ে রাখেন দূরে। এই সময়ে এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম নিত্যপ্রিয় ঘোষ। দুই ভাষায় ক্ষুরধার সমালোচক হিসেবে তিনি দেশে-বিদেশে সমান আদৃত। তাঁর রবীন্দ্রপাঠ ও বিশ্লেষণ যেমন বাঙালি মেধাকে উদ্দীপ্ত করেছে, তেমনই রাজনীতি-সমাজ-সংস্কৃতির বিচিত্র বিষয়ে তাঁর শানিত, বুদ্ধিদীপ্ত প্রবন্ধ আদায় করে নিয়েছে সমীহ। রবীন্দ্র-জীবন ও সাহিত্যের পারস্পরিকতা, সমকালীন যুগে সাহিত্য-সংস্কৃতি-সমাজ-রাজনীতির সঙ্গে কবির যোগ ও বিরোধের ইতিহাস যে তথ্যনিষ্ঠতায় নিত্যপ্রিয় ঘোষের রচনায় বিশ্লেষিত হয়েছে, তা উল্লেখযোগ্য। তাঁর মত ও দৃষ্টিভঙ্গি যে সর্বজনগ্রাহ্য হয়েছে, এমনটা নয়। কিন্তু তাঁকে কখনও অস্বীকার করা যায়নি। আবেগাপ্লুত বাঙালি রবীন্দ্ররচনার স-তর্ক পাঠে অভ্যস্ত নয়। নিত্যপ্রিয় ব্যতিক্রমী।

রবীন্দ্রপুরস্কারপ্রাপ্ত এই প্রাবন্ধিকের লেখার ভুবন বহুব্যাপ্ত। ১৯৭০-এর দশকে ‘দ্য স্টেটসম্যান’ পত্রিকায় তাঁর সাপ্তাহিক টেলিভিশন রিভিউ কলকাতার দূরদর্শন শিল্পীদের জগতে রীতিমত ভীতির বিষয় ছিল। সমর সেনের ‘ফ্রন্টিয়ার’ পত্রিকার অন্যতম সহযোগী ছিলেন নিত্যপ্রিয়। জড়িত ছিলেন ‘নাউ’-এর সঙ্গেও। আর, বন্ধু শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘কবিতা সাপ্তাহিকী’-তে তাঁর গদ্য ‘কবিতায় বালকভাব এবং পাগলভাব’ কেবল কৌতুক ছিল না। ছিল তীক্ষ্ন মেধা, অপরিসীম সাহস আর উচ্চাঙ্গের হিউমারের মিশেল। বিচিত্র তাঁর কর্মজীবনও। ইংরেজির অধ্যাপনা থেকে আইএএস হয়ে লেবং-এর ক্যান্টনমেন্ট অফিসার, ব্যাঙ্ক আর জুতোর দোকানের জনসংযোগ আধিকারিক, স্বচ্ছন্দে বিবিধ ভূমিকায়।
আশি বছরে পা দিলেন নিত্যপ্রিয়। ‘গাঙচিল’ থেকে তিন খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সব রবীন্দ্রবিষয়ক প্রবন্ধ। রবীন্দ্রনাথের একটি প্রবন্ধ-সংকলন সম্পাদনায় ব্যস্ত রয়েছেন এখন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kolkatar karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE